সরকারী চাকুরী দেওয়াই উন্নয়নের মাপকাঠি নয় ঃ মুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩১ মার্চ৷৷ ত্রিপুরাকে আমরা এক মডেল রাজ্য গড়ে তুলতে চাই৷ এজন্য চাই সকলের স্বরোজগার৷ যেমনটা জাপান, আমেরিকা, রাশিয়া, ফ্রাস প্রভৃতি দেশে রয়েছে৷ তাই সরকারী চাকরি রাজ্যের উন্নয়নে একমাত্র প্যারামিটার হতে পারে না৷ মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব আজ সন্ধ্যায় পূর্বাশা সংলগ্ণ ক্ষুদিরাম বসু ইংরেজী মাধ্যমে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ১৫ দিনব্যাপী জাতীয় ভিত্তিক হস্ততাঁত বস্ত্রমেলা ২০১৭-১৮ এর উদ্বোধন করে উদ্বোধকের ভাষণে এই অভিমত ব্যক্ত করেন৷ প্রদীপ জ্বেলে এই বস্ত্র মেলার উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, তাঁত শিল্প ত্রিপুরা রাজ্যের এক ঐতিহ্যশালী কুটির শিল্প৷ রিয়াং, ত্রিপুরী, মগ, হালাম, চাকমাদের পাছড়া ও রিসা বয়ন শৈলীতে রয়েছে বৈচিত্র৷ অথচ গন্ডাছড়া, আঠারমুড়া প্রভৃতি প্রত্যন্ত অঞ্চলের এইসব তাঁত শিল্পীরা বস্ত্রের ন্যায্য মূল্য পান না৷ এ বিষয়ে শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরকে নজর দিতে হবে৷ তিনি বলেন, জনতা জাগ্রত হলেই শক্তিশালী সরকার হয়৷ সরকার মানে আপনার৷ ৩৭ লক্ষ ত্রিপুরাবাসীর৷ সরকার মানে এতে সবাই ভাগিদার আছেন৷ প্রত্যেক লোক জাগ্রত হয়ে গেলে দেখবেন রাজ্যের উন্নয়ন আপনা আপনিই হবে৷ এজন্য চাই গন্ডাছড়া, আঠারমুড়ার উৎপাদিত পাছড়া, রিসা ও অন্যান্য সামগ্রী সেখানেই বিক্রি হোক৷ এতে তাঁত শিল্পীরা ন্যায্য মূল্য পাবেন৷ মিডল ম্যান থাকবে না৷ তাঁত শিল্পীদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে৷ তিনি বলেন, রাজ্যে প্রায় ৭ লক্ষ বেকার রয়েছেন৷ তারা মুদ্রা ব্যাঙ্ক, স্ট্যান্ড আপ ইন্ডিয়া প্রভৃতি কেন্দ্রীয় প্রকল্পে ঋণ নিয়ে নিজেকে স্বয়ম্ভর করতে পারেন৷ এ বিষয়ে তিনি গুজরাটের ঘরে ঘরে গাভী পালনের দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন৷

প্রধান অতিথির ভাষণে রাজস্ব ও মৎস্য দপ্তরের মন্ত্রী নরেন্দ্র চন্দ্র দেববর্মা বলেন, ত্রিপুরার হস্ততাঁত ও কুটির শিল্প জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে উচ্চ প্রশংসিত৷ ত্রিপুরার আদিবাসী জনগণ আবহমান কাল ধরে হস্ততাঁত ও রেশম শিল্প সংসৃকতিতে জড়িত৷ কিন্তু গ্রামে আজ চরকা (চখা) প্রায় দেখা যায় না৷ চারকা আজ বিলুপ্তির পথে৷ এই জীবন জীবিকার সঙ্গে যারা যুক্ত দপ্তর তাদের দিকে নজর দিক৷ আমি এই মেলার সাফল্য কামনা করি৷

সভাপতির ভাষণে শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের প্রধান সচিব এম নাগারাজু বেকারদের স্বয়ম্ভর করতে দপ্তর তাদের পাশে রয়েছে বলে উল্লেখ করেন৷ স্বাগত ভাষণ দেন, হস্ততাঁত, হস্তকারু ও রেশম শিল্প দপ্তরের অধিকর্তা এল টি ডার্লং৷ তিনি বলেন, এই মেলার উদ্দেশ্য হলো তাঁত শিল্পীদের আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া৷ এই বস্ত্র মেলায় ৮০ টি স্টল খোলা হয়েছে৷ এর মধ্যে রাজ্যের রয়েছে ৫০টি স্টল৷ বহিঃরাজ্য রাজস্থান, পশ্চিমবঙ্গ, গুয়াহাটি, বিহার, তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশ, জম্মু ও কাশ্মীর প্রভৃতি স্থান থেকে রয়েছে ৩০টি স্টল৷ মেলায় রয়েছে গ্রামীণ শিল্পীদের স্বহস্তে তৈরী সিল্ক শাড়ি, খাদি বস্ত্র, রিসা, পাছড়া, চাদর ও বাঁশ বেতের রকমারী সামগ্রী৷ মেলা প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে৷ অনুষ্ঠানে আশা সংগীত ও ইয়ামরগ মিউজিক্যাল গ্রুপ এর শিল্পীগণ উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করেন৷

অনুষ্ঠানে বহু ক্রেতা-বিক্রেতা ও দর্শকগণ উপস্থিত ছিলেন৷ উল্লেখ্য, ভারত সরকারের বস্তু মন্ত্রণালয়ের আর্থিক সহায়তায় এবং হস্ততাঁত, হস্তকারু ও রেশম শিল্প দপ্তরের উদ্যোগে এই বস্ত্র মেলা শুরু হয়েছে৷ চলবে আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *