সংসদীয় পদ নিয়ে পার্টির সিদ্ধান্তে জটিলতা এবং পুলিশের ভূমিকায় জিএমপি’র ক্ষোভ, দিশাহারা সিপিএম

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২২ অক্টোবর৷৷ দিশাহারা হয়ে পড়েছে কি শাসক দল? সিপিএম রাজ্য সম্পাদক বিজন ধরের

রবিবার আগরতলায় সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক বিজন ধর৷ নিজস্ব ছবি৷

বক্তব্যে এমনটাই মনে হচ্ছে৷ রাজ্য পুলিশকে গণমুক্তি পরিষদ কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর বিষয়ে একমত কিনা তা জোড় গলায় সমর্থন করছেন না বিজন বাবু৷ আবার, সংসদীয় পদে ঝোঁক যাতে প্রবল আকারে দেখা না দেয় তার জন্য তিন বারের বেশি সংসদীয় পদে রাখা যাবেনা, পার্টির এই সিদ্ধান্তকে গোড়ামি এবং সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গী উল্লেখ করে তা মেনে চলতে হবে সেটা কোথাও বলা হয়নি, দাবি করেন তিনি৷ তাতে, রাজ্যে সিপিএমের সবচেয়ে বড় অঙ্গ সংগঠন গণমুক্তি পরিষদের সাথে আগামী দিনে মতানৈক্য দেখা দিতে পারে এবং সংসদীয় পদ নিয়ে পার্টির সিদ্ধান্তকে ঘিরে সিপিএম রাজ্য কমিটির সাথে দলের মতবিরোধ চরম আকার ধারণ করতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে৷ রবিবার সাংবাদিক সম্মেলনে এই সমস্ত বিষয় নিয়ে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তাতে দলের আগামী দিনের অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে৷
এদিন বিজন বাবুর কাছে জানতে চাওয়া হয়, কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে সংসদীয় পদে তিনবারের বেশি কাউকে রাখা যাবেনা সেই বিষয়ে কোন আলোচনা হয়েছে কিনা৷ এর জবাবে তাঁর বক্তব্য, তিনবারের বেশি সংসদীয় পদে কাউকে রাখা যাবেনা, তা অবান্তর বিষয়৷ কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে আলোচনার মধ্যেই সেই বিষয়টি আসেনি৷ কারণ, কেন্দ্রীয় কমিটি বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি৷ বিজন বাবুর কথায়, তিনবারের বেশি সংসদীয় পদে রাখা যাবেনা এটি পার্টির সাধারন একটি নিয়ম৷ পার্টির গঠনতন্ত্রে এমন কোন কিছুই উল্লেখ নেই৷ এবিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, সংসদীয় ঝোঁক যাতে প্রবল আকারে দেখা না দেয় সেজন্য এধরনের নিয়ম চালু করা হয়েছে৷ কিন্তু, রাজ্যে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভের জন্য এবং অষ্টম বামফ্রন্ট সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এই গোড়ামি এবং সংকীর্ণতার দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে কাজ করতে হবে কেন্দ্রীয় কমিটি তা বলেনি৷ এমনকি, কোন জায়গায় এ সম্পর্কে কথাবার্তাও হয়নি৷ স্বাভাবিকভাবেই এদিন বিজন বাবু খোদ প্রশ্ণ তুলে দিলেন, সত্যিই কি সংসদীয় পদে তিনবারের বেশি কাউকে রাখা যাবেনা পার্টির এই সিদ্ধান্ত গোড়ামি এবং সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গীর প্রমাণ৷
সম্প্রতি, সাংবাদিক সম্মেলনে উপজাতি গণমুক্তি পরিষদ রাজ্য পুলিশকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছিল৷ গত ১৯ সেপ্ঢেম্বর রাজধানীতে জিএমপির সমাবেশে আসা প্রচুর গাড়ি এবং কর্মী সমর্থকরা একটি রাজনৈতিক দলের হাতে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় পুলিশি ভূমিকায় সংগঠনের সভাপতি সাংসদ জিতেন্দ্র চৌধুরী সমালোচনা করেছিলেন৷ রাজ্য পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সিপিএমও আতঙ্কিত কিনা এদিন দলের রাজ্য সম্পাদকের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি সরাসরি কিছুই বলতে রাজি হননি৷ তাঁর বক্তব্য, জিএমপির কর্মী সমর্থকদের গাড়িতে আক্রমণকারীদের পুলিশ মদত দিয়েছে এমন কোন তথ্য তিনি জানেন না৷
গত ১৯ সেপ্ঢেম্বরের ঘটনায় শুধু জিএমপি নয়, শাসক সমর্থিত শ্রমিক সংগঠন সিআইটিইউ ইতিপূর্বে পুলিশি ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে৷ জিএমপি এবং সিআইটিইউ একাংশ পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশকের কাছে ডেপুটেশন দিয়েছে৷ সিআইটিইউর সভাপতি সাংসদ শঙ্কর প্রসাদ দত্ত সাংবাদিক সম্মেলনে স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, সেদিনের ঘটনায় পুলিশি ভূমিকায় ঘাটতি ছিল৷ রাজ্য পুলিশ তাদের দায়িত্ব ঠিকমত পালন করেননি৷ একই সুরে জিএমপিও পুলিশের সমালোচনা করেছে৷ একাংশ পুলিশ কর্মীদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে৷ স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ণ উঠেছে পুলিশের প্রতি এত অনাস্থা কেন? এবিষয়ে বিজন বাবুর বক্তব্য, রাজ্য পুলিশের প্রতি সিপিএমের পুরো আস্থা রয়েছে৷ তারা বিগত দিনে রাজ্যের স্বার্থে বহু অবদান রেখেছে৷ তবে, বিক্ষিপ্তভাবে কয়েকজনের নেতিবাচক ভূমিকার জন্য গোটা ফোর্সকে দায়ি করা যায়না৷ তাতে এও পরিস্কার হয়ে গেছে, একাংশ পুলিশ কর্মী সরকার এবং শাসক দলের বিরুদ্ধেই কাজ করছে৷ জিএমপির সভাপতি সাংসদ জিতেন্দ্র চৌধুরী পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগকে ঘিরে সিপিএম একমত কিনা এই প্রশ্ণে জবাব স্পষ্টভাবে দেননি বিজন ধর৷ এদিন জিএমপির বক্তব্যকে সরাসরি সমর্থন না জানানোর ফলে স্বাভাবিক ভাবেই আগামী দিনে সিপিএমের সাথে জিএমপির সম্পর্ক কোন দিকে এগিয়ে যাবে তা নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে৷