জয়পুর, ২৬ ডিসেম্বর : রাজস্থানের জয়পুর জেলার চোমু শহরে একটি মসজিদের বাইরে লোহার রেলিং বসানোকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি দ্রুত হিংসাত্মক রূপ নেয়। পাথর ছোড়ার ঘটনায় ছয়জন পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রশাসন চোমু এলাকায় ২৪ ঘণ্টার জন্য হোয়াটসঅ্যাপ ও অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া পরিষেবা বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার ভোরে চোমুর প্রধান বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে পৌঁছানো পুলিশ দলকে লক্ষ্য করে দুষ্কৃতীরা পাথর ছোড়ে। এতে অন্তত ছয়জন পুলিশকর্মী আহত হন। তাঁদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সকলের অবস্থাই বর্তমানে স্থিতিশীল বলে জানা গেছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে এবং কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। শুক্রবার সকাল থেকে পুরো এলাকা কার্যত হাই-সিকিউরিটি জোনে পরিণত হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে বিপুল সংখ্যক পুলিশ বাহিনী।
উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিকরা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এলাকায় এখনও উত্তেজনা রয়েছে। জয়পুর পুলিশ লাইন্স, হারমাডা, দৌলতপুরা, মুরলিপুরা এবং বিশ্বকর্মা থানার পুলিশ বাহিনী চোমুতে মোতায়েন করা হয়েছে। বাসস্ট্যান্ড এলাকা কার্যত পুলিশ ক্যাম্পে পরিণত হয়েছে। বিশেষ টাস্ক ফোর্স, রায়ট কন্ট্রোল ভেহিকল এবং অতিরিক্ত বাহিনীও পাঠানো হয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত হয় বুধবার চালানো একটি ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা অভিযানের পর। চোমু বাসস্ট্যান্ডে অবস্থিত একটি মসজিদের সামনে বহু বছর ধরে পড়ে থাকা পাথর মুসলিম সম্প্রদায়ের সম্মতিতেই সরানো হয়। এই কাজ বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত চলে এবং থানা মোড় ও মরিজা তিরাহা-সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় যান চলাচল ঘুরিয়ে দেওয়া হয়।
এরপর ওই স্থানেই কিছু লোক লোহার গার্ডার ও রেলিং বসান, যা নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি করে। পুলিশ ও সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা চলে। অবশেষে ‘স্থিতাবস্থা’ বজায় রাখার সিদ্ধান্ত হলেও পরে পুলিশ রেলিং ও গার্ডার সরিয়ে নেয়। অভিযোগ, এর জেরেই ক্ষুব্ধ কিছু স্থানীয় বাসিন্দা পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটায়।
উত্তেজনাকর পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে পুলিশ কমিশনারের সুপারিশে ডিভিশনাল কমিশনার পুনম শুক্রবার সকাল ৭টা থেকে শনিবার সকাল ৭টা পর্যন্ত চোমু এলাকায় সোশ্যাল মিডিয়া, হোয়াটসঅ্যাপ ও বাল্ক মেসেজ পরিষেবা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন, যাতে গুজব ছড়ানো রোধ করা যায়।
এদিকে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ডা. রাজীব পচার, ডিসিপি ওয়েস্ট হনুমান প্রসাদ এবং অতিরিক্ত ডিসিপি রাজেশ গুপ্ত-সহ একাধিক শীর্ষ পুলিশ আধিকারিক ঘটনাস্থলে পৌঁছে সাধারণ মানুষের কাছে শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানান। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত চলছে এবং হিংসায় জড়িতদের চিহ্নিত করে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

