কলকাতা, ৭ ডিসেম্বর: তৃণমূল কংগ্রেস থেকে বরখাস্ত হওয়া হুমায়ুন কবির দাবি করেছেন, আগামী ২২ ডিসেম্বর তিনি নিজের একটি রাজনৈতিক দল গঠন করবেন এবং পশ্চিমবঙ্গের ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এআইএমআইএম-এর সঙ্গে জোট করার পরিকল্পনা করেছেন।
গতকাল এক সংবাদমাধ্যমের সাক্ষাৎকারে হুমায়ুন কবির বলেন, “তৃণমূল-এর মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক শেষ হয়ে যাবে। পিকচার আভি বাকি হ্যায় (ক্লাইম্যাক্স এখনও বাকি)।”
তিনি আরও জানান, তিনি পশ্চিমবঙ্গের ২৯৪টি আসনের মধ্যে ১৩৫টি আসনে প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন, যা তিনি দাবি করেছেন, রাজ্যের রাজনীতিতে “গেম চেঞ্জার” হতে পারে। এছাড়াও, তিনি এআইএমআইএম-এর সঙ্গে জোট গঠনের পরিকল্পনা করছেন, যা তৃণমূলের বিরুদ্ধে নতুন একটি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।
এদিকে, তার এই সিদ্ধান্তে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়া ছিল তীব্র। তৃণমূল তার “ধর্মনিরপেক্ষ নীতির” প্রতি আস্থা রেখে হুমায়ুন কবিরকে দল থেকে বরখাস্ত করেছিল। তবে বিজেপি এই পরিস্থিতি নিয়ে তৃণমূলকে তোপ দাগছে, তাদের মতে, হুমায়ুন কবিরের মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ একটি সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেওয়ার চেষ্টা।
হুমায়ুন কবির গত শনিবার বেলডাঙ্গায় ‘বাবরি মসজিদ’ নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এই ঘটনায় আট লাখেরও বেশি লোক উপস্থিত হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে অনেকেই মসজিদ নির্মাণের জন্য ইট, টাকা, ইত্যাদি দান করেন। তিনি দাবি করেন, পুলিশের কোনো সাহায্য ছাড়াই এই জমায়েত হয়েছিল। তিনি জানান, উত্তর দিনাজপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকেও ট্রাক এবং ট্রাক্টর দিয়ে ইট আনা হয়েছে।
এই মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগের সাথে অনেকেই আয়োধ্যা ঘটনাকে তুলনা করছেন, যেখানে ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংস হয়েছিল। তবে, এটির প্রতিবাদ হিসেবে কিছু অংশের মানুষের দাবি, এটি তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।
হুমায়ুন কবিরের ‘বাবরি মসজিদ’ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়ে বিজেপি নেতারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভাপতি সমিক ভট্টাচার্য দাবি করেছেন, এটি একটি “সাংগঠনিক তৃণমূল এজেন্ডা” এবং হুমায়ুন কবিরের বরখাস্তকরণ শুধুমাত্র একটি “শো”। তিনি আরও বলেন, “তৃণমূল বাবরের সঙ্গে দাঁড়িয়ে রয়েছে, কিন্তু আমরা তা মেনে নেব না।”
বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার মন্তব্য করেন, “বাবরি মসজিদ নামক মসজিদ পশ্চিমবঙ্গে কখনও মেনে নেওয়া হবে না।” তিনি বলেন, “এটি কোনো মুসলিম মসজিদ নির্মাণ নয়, বরং একটি সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেওয়ার চেষ্টা।”
হুমায়ুন কবিরের এই পদক্ষেপ পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিতে পারে। রাজ্যে তৃণমূলের মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক অনেকটাই শক্তিশালী হলেও, তার এই নতুন রাজনৈতিক উদ্যোগ মুসলিম ভোটের বিভাজন এবং বিজেপির শক্তি বৃদ্ধির দিকে ইঙ্গিত করতে পারে। ২০২১ সালে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করতে সক্ষম হলেও, তৃণমূল এখনও রাজ্যে প্রধান রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
এই পরিস্থিতিতে হুমায়ুন কবিরের দল গঠন এবং এআইএমআইএম-এর সঙ্গে জোটের চেষ্টা আগামী নির্বাচনে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ সৃষ্টি করতে পারে।

