নয়াদিল্লি, ২ ডিসেম্বর : এবার ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা দেশবাসীর মধ্যে নানা উদ্বেগ তৈরি করেছে। গত সোমবার রাতে সরকার জানিয়ে দিয়েছে, ভারতীয় ফোন কোম্পানিগুলিকে “সঞ্চার সাথী” অ্যাপ সমস্ত মোবাইলে প্রি-ইনস্টল করতে হবে, যা শুধু নতুন ফোনে নয়, পুরনো ফোনেও সফটওয়্যার আপডেটের মাধ্যমে ইনস্টল করা হবে।
এই পদক্ষেপের ফলে বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানিগুলিকে আগামী ৯০ দিনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করতে হবে এবং ১২০ দিনের মধ্যে কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট জমা দিতে হবে। এই নির্দেশিকায় সরকারের উদ্দেশ্য বলা হয়েছে, মূলত সাইবার সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং ভুয়া বা ডুপ্লিকেট আইএমইআই নাম্বার এর মাধ্যমে ফোন ব্যবহারের অসঙ্গতি ঠেকানো।
“সঞ্চার সাথী” একটি সরকারিভাবে তৈরি মোবাইল সুরক্ষা প্ল্যাটফর্ম এবং অ্যাপ, যা ব্যবহারকারীদের ফোন হারালে তা ব্লক করতে সাহায্য করে। অ্যাপটি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা প্রদান করে: হারানো বা চুরি হওয়া ফোন ব্লক করা, আইএমইআই যাচাই করে ফোনের পরিচয় নিশ্চিত করা, ব্যবহারকারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে যুক্ত মোবাইল নম্বর গুলি দেখতে পাওয়া, সন্দেহজনক কল বা যোগাযোগ রিপোর্ট করা, পুলিশকে চুরি হওয়া ডিভাইস ট্র্যাক করতে সহায়তা করা।
এছাড়াও, “সঞ্চার সাথী” অ্যাপ ব্যবহারকারীদের ফোনের ডেটা যেমন কল লোগ, মেসেজ, ক্যামেরা অ্যাক্সেস, এবং ফোনের নেটওয়ার্ক স্টেটের তথ্য সংগ্রহ করতে পারে, যা নিয়ে বিভিন্ন নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, এই অ্যাপটি সুরক্ষা এবং ফ্রড প্রতিরোধের ক্ষেত্রে সহায়ক। তবে, মোবাইল ব্যবহারকারীদের একটি বড় অংশ এই পদক্ষেপকে তাদের গোপনীয়তা ও স্বাধীনতার উপর আঘাত হিসেবে দেখছে। বিশেষ করে, তাদের উদ্বেগ হচ্ছে যে, এই অ্যাপটি ফোনে ইনস্টল করা বাধ্যতামূলক করার মাধ্যমে সরকার কোনও একটি ডিভাইসে প্রবেশের সুযোগ পাবে এবং তা দিয়ে ব্যবহারকারীদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে পারবে।
এদিকে, স্যোশাল মিডিয়ায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। তেহসিন পুনাওয়ালা এক টুইটে বলেন, “এটি একটি ভয়াবহ পদক্ষেপ! ভারতীয় নাগরিকদের গোপনীয়তা ও স্বাধীনতার উপর চরম আঘাত। এই অ্যাপটি ফোনে প্রি-ইনস্টল করা এবং তা মুছে ফেলার উপায় না থাকা মানে সরকারের কাছে আমাদের কল, মেসেজ এবং লোকেশন ট্র্যাক করার ক্ষমতা থাকা।”
এই পদক্ষেপের ফলে ভারতীয়দের মধ্যে বিক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে, এবং অনেকেই এটিকে স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের আচরণ হিসেবে দেখছেন। এটি মনে করা হচ্ছে যে, এমন পদক্ষেপগুলি সাধারণত রাশিয়া বা চীনের মতো দেশগুলিতে দেখা যায়, যেখানে সরকার সাধারণ মানুষের ফোনে নিরবচ্ছিন্ন প্রবেশাধিকার পায়।
সরকার যদিও এই পদক্ষেপকে একটি সুরক্ষা পদক্ষেপ হিসেবে তুলে ধরেছে, তবুও এটি যথেষ্ট বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। জনগণের মধ্যে প্রশ্ন উঠছে—এটা কি সত্যিই তাদের সুরক্ষার জন্য, নাকি এটি একটি গোপন নজরদারি নীতির অংশ?
ভারত সরকার দাবি করেছে যে, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে সুরক্ষা বাড়ানো হবে এবং এটি ফোন চুরি, জালিয়াতি এবং অবৈধ মোবাইল সংযোগ বন্ধ করতে সহায়তা করবে। তবে, প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের মতে, এমন পদক্ষেপে গোপনীয়তা ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এখন, সময়ই বলবে এই পদক্ষেপটির বাস্তবায়ন কেমন হবে এবং জনগণের প্রতি এর প্রভাব কেমন থাকবে।
——–

