আগরতলা, ৯ নভেম্বরঃ এস আই আর ও এন আর সি–র প্রতিবাদে রবিবার রাজধানীর ‘আমরা বাঙালী’ রাজ্য কার্যালয়ের সামনে এক বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। দলের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে, কেন্দ্র সরকার বাঙালিদের রাষ্ট্রহীন করার চক্রান্তে মেতে উঠেছে।
দলের রাজ্য সচিব গৌরাঙ্গ রুদ্র পাল বলেন, সাহিত্য সম্রাট ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘বন্দেমাতরম’ গানটির সার্ধশতবর্ষ উদযাপনের নামে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার রাজনৈতিক লাভের চেষ্টা করছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, “যে দল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ইংরেজপন্থী বলে অপমান করে, ‘আমার সোনার বাংলা’ গাওয়াকে রাষ্ট্রদ্রোহ বলে আখ্যা দেয়, সেই দল আজ বন্দেমাতরম উদযাপন করছে নির্বাচনের আগে বাঙালীর মন জয় করার আশায়।”
গৌরাঙ্গ রুদ্র পাল আরও বলেন, বন্দেমাতরম ছিল পরাধীন ভারতের বিপ্লবীদের আত্মবলিদানের বীজমন্ত্র, ভোটের হাতিয়ার নয়। তাঁর বক্তব্যে তীব্র সমালোচনার সুরে তিনি অভিযোগ করেন, “যারা বন্দেমাতরম স্রষ্টার জাতিকে রাষ্ট্রহীন করার জন্য এনআরসি ও এসআইআর প্রয়োগ করছে, তাদের বন্দেমাতরম স্মরণ মেকী বাঙালী দরদ ছাড়া কিছু নয়।”
তিনি আরও বলেন, বঙ্কিমচন্দ্র বঙ্গভূমির মুক্তির আহ্বান জানিয়ে এই গানটি লিখেছিলেন, অথচ আজ সেই বঙ্গভূমি দেশীয় ক্ষমতালোভী শাসকের কারণে বিলীন হতে বসেছে। দেশভাগ ও পরবর্তী রাজনীতিতে বাঙালিদের চিহ্ন মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে বলেন, যারা ভারতের স্বাধীনতার জন্য সর্বাধিক আত্মবলিদান দিয়েছে, সেই জাতিই আজ পরাধীন ভারতের চেয়েও খারাপ অবস্থায়।
গৌরাঙ্গবাবু অভিযোগ করেন, এনআরসি ও এসআইআর প্রয়োগ করে সরকার বাঙালিকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করছে। তাঁর দাবি, বিহারে এসআইআর চালুর পর প্রায় ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ পড়েছে, অথচ অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশী বা রোহিঙ্গাদের শনাক্তের কোনও প্রমাণ নেই।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, তাহলে কি ২০৪৭ সালের বিকশিত ভারতের স্লোগান তুলে বিরোধী ভোটারদের নাম বাদ দেওয়াই আসল উদ্দেশ্য? তাঁর অভিযোগ, দেশের বহু প্রান্তে প্রকৃত ভোটাররাও নথিপত্রের জটিলতায় হয়রানির শিকার হচ্ছেন, কেউ কেউ আতঙ্কে আত্মহত্যাও করেছেন।
অসমের এনআরসি–র অভিজ্ঞতা টেনে তিনি বলেন, অনেকে নিজেদের সম্পদ বিক্রি করেও নাম তুলতে পারেননি, ফলে আজও লাখ লাখ মানুষ অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। তাঁর বক্তব্য, এসআইআর–এর জন্য ১১টি ডকুমেন্ট চাওয়া হয়েছে, যা দেশভাগের বলি বহু বাঙালির কাছেই নেই।
গৌরাঙ্গ রুদ্র পাল আরও বলেন, সরকার মুখে হিন্দুদের নিরাপত্তার কথা বললেও, বাস্তবে তাদেরও হয়রানি করা হচ্ছে। কথার সঙ্গে কাজের কোনও মিল নেই। আচ্ছা দিনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এই সরকার সাধারণ মানুষকে প্রতারণা করেছে।
তিনি অভিযোগ করেন, নোটবন্দি থেকে শুরু করে আধার–ভোটার কার্ড সংযুক্তি পর্যন্ত সব পদক্ষেপই সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত ও বঞ্চিত করার জন্য। আজ বাঙালীদের নাগরিকত্ব সন্দেহের মুখে ফেলে, অনুপ্রবেশকারীর তকমা দিয়ে সরকার তাদের দমন করতে চাইছে,— বলেন তিনি।
বিক্ষোভ কর্মসূচিতে দলের নেতারা বলেন, যে জাতি বন্দেমাতরম স্রষ্টা বঙ্কিমচন্দ্রের উত্তরসূরি, সেই জাতিই আজ সারা ভারতে আতঙ্কগ্রস্ত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে বাঙালী–বিদ্বেষী রাজনৈতিক দলের কারণে। তাঁদের আশঙ্কা, ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ পড়া মানুষ ভবিষ্যতে রাষ্ট্রের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে ডিটেনশন ক্যাম্পে স্থান পেতে পারেন।
দলের পক্ষ থেকে কেন্দ্র সরকারের এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা ও বাঙালির নাগরিক অধিকারের সুরক্ষায় সর্বভারতীয় আন্দোলনের আহ্বান জানানো হয়েছে।

