লতিফুর রহমান, ঢাকা, ৫ নভেম্বর: বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মনে করছে, আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া দেশের ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনই রাজনৈতিক অস্থিরতা কাটিয়ে জাতীয় স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রধান উপায় হবে।
বুধবার ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড-এর জেনারেল অফিসার কম্যান্ডিং (জিওসি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাইনুর রহমান বলেন, “গত ১৫ মাস ধরে সেনাবাহিনী মাঠে দায়িত্ব পালন করছে। আমরা চাই, একটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হোক, যাতে সেনা সদস্যরা তাদের নিজ নিজ ক্যান্টনমেন্টে ফিরে যেতে পারে।”
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছেন যে নির্বাচন হবে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে। নির্বাচন কমিশন অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয়ে পূর্ণ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাইনুর বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা, বন্যা ও নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও সেনাবাহিনী দেশের সর্বত্র শৃঙ্খলা বজায় রেখেছে। তাঁর ভাষায়, “৫ আগস্ট–পরবর্তী সময়ে ১৫ বছরের জমে থাকা আবেগ হঠাৎই বিস্ফোরিত হয়। সেই সময়ে কুমিল্লা ও নোয়াখালীর বন্যা মোকাবিলা থেকে শুরু করে সড়ক অবরোধ নিয়ন্ত্রণ—সব ক্ষেত্রেই সেনাবাহিনী জনগণের পাশে ছিল। আমাদের উপস্থিতি না থাকলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিতে পারত।”
সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে “ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচার” চলছে বলে অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, “কিছু স্বার্থান্বেষী মহল মিথ্যা ও সাজানো প্রচারণা চালাচ্ছে। সেনাবাহিনী এখন আগের যেকোনও সময়ের তুলনায় বেশি ঐক্যবদ্ধ। আমাদের ওপর যে দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে, তা আমরা পূর্ণ নিষ্ঠায় সম্পন্ন করব।”
সেনা সদর দফতরের মিলিটারি অপারেশন্স ডিরেক্টরেটের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল দেওয়ান মোহাম্মদ মনজুর হোসেন জানান, সরকার সেনা মোতায়েনের ৫০ শতাংশ সদস্যকে বিশ্রাম ও নির্বাচনী প্রশিক্ষণের জন্য প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছে।
তিনি বলেন, গত ১৫ মাসে সেনাবাহিনী নিখোঁজ অস্ত্রের ৮১ শতাংশ, গুলি-বারুদের ৭৩ শতাংশ উদ্ধার করেছে এবং ১৯ হাজারেরও বেশি অপরাধীকে গ্রেপ্তার করেছে, যাদের মধ্যে কিশোর গ্যাং সদস্য ও চাঁদাবাজও রয়েছে। তাঁর ভাষায়, “মাত্র দুই সপ্তাহে আমাদের বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল একশোরও বেশি দেশি বোমা নিষ্ক্রিয় করেছে।” জুলাই ২০২৪-এর গণআন্দোলনের পর থেকে সেনাবাহিনী আহত ৫,৩৩৮ জনকে সেনা হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা দিয়েছে, যাদের মধ্যে ২৭ জন এখনো ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ব্রিগেডিয়ার মনজুর বলেন, “যুদ্ধেই হোক, শান্তিতেই হোক—আমরা দেশের জন্য সর্বত্র প্রস্তুত। সেনাপ্রধানের নির্দেশনায় নির্বাচন কমিশনকে আমরা সর্বাত্মক সহায়তা দেব, যাতে একটি স্বাধীন, সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।”

