বারেলি, ২৭ সেপ্টেম্বর : উত্তর প্রদেশের বারেলিতে ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ ক্যাম্পেনকে কেন্দ্র করে শুক্রবার জুমার নামাজের পর ব্যাপক উত্তেজনা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার এই ঘটনার জেরে পুলিশ গ্রেফতার করেছে প্রভাবশালী ইসলামি ধর্মীয় নেতা ও ইত্তেহাদ-ই-মিল্লাত কাউন্সিল প্রধান মৌলানা তৌকির রাজা খানকে। তার বিরুদ্ধে উত্তেজনা ছড়ানোর অভিযোগ আনা হয়েছে এবং পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে বলে এনডিটিভি সূত্রে জানা গেছে।
সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে তৌকির রাজা খানের শেষ মুহূর্তে কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা ঘিরে। তিনি আগেই ঘোষণা করেছিলেন যে, প্রশাসন অনুমতি না দিলেও ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ ক্যাম্পেনের সমর্থনে মিছিল হবে। তবে শুক্রবার হঠাৎ করেই তিনি কর্মসূচি বাতিল করেন। তার এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে জুমার নামাজের পর শত শত মানুষ ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ লেখা ব্যানার-প্ল্যাকার্ড নিয়ে তার বাসভবনের সামনে ও কাছাকাছি মসজিদের আশেপাশে জমায়েত হয়। এই জমায়েত থেকেই ইসলামিয়া ইন্টার কলেজ মাঠের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। খলিল তিরাহা এলাকায় শুরু হয় পাথর নিক্ষেপ ও গাড়ি ভাঙচুর, যার ফলে সৃষ্টি হয় স্ট্যাম্পিডের মতো পরিস্থিতি।
পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ ও টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করে। সংঘর্ষস্থলে দেখা যায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভাঙা কাঁচ, জুতো ও ইট-পাথর। ডিআইজি অজয় কুমার সাহনী জানিয়েছেন, পরিস্থিতি যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায়, তার জন্য পুলিশ আগেই ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে দুইদিন ধরে আলোচনা করছিল। যদিও বেশিরভাগ এলাকায় শান্তিপূর্ণভাবে নামাজ আদায় হয়, কোতোয়ালি থানা এলাকার আশেপাশে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
মৌলানা তৌকির রাজা খান বারেলভী সুন্নি মুসলিমদের একটি বড় অংশের মধ্যে জনপ্রিয় এবং তিনি আহমদ রজা খানের বংশধর, যিনি উপমহাদেশে বারেলভী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তিনি প্রায় দুই দশক ধরে রাজনৈতিক ও ধর্মীয়ভাবে সক্রিয় এবং বেয়ারেলি ও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলিতে তার যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে।
উল্লেখ্য, এই বিতর্কের সূচনা হয় ৯ সেপ্টেম্বর, যখন কানপুরে বরাওয়াফাত উপলক্ষে একটি রাস্তায় ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ লেখা বোর্ড লাগানো হয়। এই ঘটনায় হিন্দু সংগঠনগুলি আপত্তি জানিয়ে একে “রীতির ব্যত্যয়” ও “উস্কানিমূলক” কর্মকাণ্ড বলে দাবি করে। এর পর থেকেই বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে উত্তরপ্রদেশের অন্যান্য জেলায়, এমনকি উত্তরাখণ্ড ও কর্ণাটকেও।
বারেলির পরিস্থিতি বর্তমানে থমথমে। শহরের স্পর্শকাতর এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। প্রশাসন জানিয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সব ধরনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে এবং ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে ফের আলোচনা চালানো হচ্ছে।

