মুম্বই, ২৫ সেপ্টেম্বর : মহারাষ্ট্রে হিন্দি ভাষা চাপিয়ে দেওয়া নিয়ে তৈরি হওয়া বিতর্ক আরও ঘনীভূত হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন অংশে হিন্দিভাষী বাসিন্দাদের মারাঠি না জানার কারণে হেনস্থা ও মারধরের ঘটনা সামনে আসছে। এই প্রেক্ষিতে শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরে গোষ্ঠী) ও মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা (এমএনএস)-র বিরুদ্ধে ভাষাগত জাতীয়তাবাদের অভিযোগ আরও জোরালো হয়েছে। এমনই এক সময়ে, বৃহস্পতিবার মুম্বইয়ে অনুষ্ঠিত ইন্ডিয়া টুডে কনক্লেভ-এ বক্তব্য রাখতে গিয়ে শিবসেনা (ইউবিটি)-র নেতা আদিত্য ঠাকরে এই অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং দাবি করেন, এই ঘটনাগুলি বিচ্ছিন্ন ও স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়ার ফল।
ঠাকরে বলেন, “আপনি প্রত্যেকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। যখন কেউ কাউকে অপমান করে, তখন তার প্রতিক্রিয়া তো হবেই। যদি কিছু ঘটে থাকে, সেটাও একটা প্রাকৃতিক প্রতিক্রিয়া।” তবে এই মন্তব্য ঘিরেই বিতর্ক দানা বাঁধে। অনেকেই এই বক্তব্যকে হিংসার পরোক্ষ সমর্থন হিসেবে দেখছেন। যদিও আদিত্য পরিস্কার জানান, তিনি কোনওভাবেই হিংসাকে সমর্থন করেন না। বরং হিংসা যদি দুই দিক থেকেই হয়, তাও তিনি বিরোধিতা করেন।
আদিত্য ঠাকরে পাল্টা অভিযোগ করেন, মারাঠি মানুষজনও অন্য রাজ্যে বৈষম্যের শিকার হন। তিনি বলেন, “মুম্বইয়ের বা মারাঠি মানুষদের বাড়ি ভাড়া না দেওয়া হয়, কারণ তারা আমিষ খান। বলা হয় তারা নোংরা। সেই ঘটনা গুলো কোথাও দেখানো হয় না।” এর মাধ্যমে তিনি বোঝাতে চান, ভাষা বা খাদ্যাভ্যাসের ভিত্তিতে বৈষম্য সার্বিক সমস্যা, শুধুমাত্র মহারাষ্ট্রেই নয়।
এই প্রসঙ্গে তিনি মুম্বইয়ের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং স্বাগতমূলক মনোভাবের কথা তুলে ধরেন। তাঁর কথায়, “মুম্বইয়ের সংস্কৃতি সবসময়ই সকলকে স্বাগত জানায়। ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এখানে আসে, স্বপ্ন নিয়ে আসে, এবং সফল হয়। আর সেটা শিবসেনা থাকা সত্ত্বেও হয়নি, বরং শিবসেনা থাকার কারণেই হয়েছে।”
বৃহন্মুম্বই পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে আদিত্য ঠাকরে একে শিবসেনার কাছে “মরণ বা বাঁচন” লড়াই বলে অভিহিত করেন। তাঁর দাবি, এই নির্বাচন কেবল রাজনৈতিক নয়, বরং মুম্বই ও মহারাষ্ট্রের “অস্তিত্ব রক্ষা”-র প্রশ্ন। রাজ ঠাকরের নেতৃত্বাধীন এমএনএস -এর সঙ্গে সম্ভাব্য জোট নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি স্পষ্ট কিছু বলেননি। যদিও সম্প্রতি দু’জনকে একসঙ্গে দেখা যাওয়ায় জল্পনা তৈরি হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাজনৈতিক ‘ব্র্যান্ড’ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে, ঠাকরে কটাক্ষ করে বলেন, “একটা ব্র্যান্ড ভোট চুরি করতে ওস্তাদ। আরেকটা ব্র্যান্ডে থাকে প্রকৃত ভোট। মুম্বই জানে কে সত্যিই তাদের জন্য কাজ করছে।”
রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কড়া আক্রমণ শানিয়ে তিনি বলেন, “রাস্তাঘাট, হাসপাতাল, স্ট্রিট ফার্নিচার—সব ক্ষেত্রেই দুর্নীতি চলছে। আর সরকার ব্যস্ত নিজের ছবি দিয়ে কৃতিত্ব নেওয়ায়। যদি কাজ করছ, তবে ঠিকভাবে করো।”
বিএমসি-তে শিবসেনার দীর্ঘদিনের দখল উল্লেখ করে আদিত্য আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেন, “প্রত্যেকটা বিএমসি নির্বাচন আমাদের কাছে ‘করো বা মরো’। আর মুম্বই জানে কাকে ভোট দিতে হয়। গত ২৫ বছর ধরে মুম্বই আমাদের বিশ্বাস করে এসেছে।”
এই বিতর্ক এবং বক্তব্যের প্রেক্ষিতে স্পষ্ট, আসন্ন বিএমসি নির্বাচনকে ঘিরে মারাঠি বনাম বহিরাগত বিতর্ক আরও জোরালো হতে চলেছে। শিবসেনা নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করলেও, মাঠে বাস্তব চিত্র অন্যরকম হতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

