পাটনা, ২৫ সেপ্টেম্বর: স্বাধীনতার পর এই প্রথমবার বিহারে অনুষ্ঠিত হচ্ছে কংগ্রেসের সম্প্রসারিত ওয়ার্কিং কমিটি-র বৈঠক। আজ সকাল ১০টা থেকে পাটনার সদাকত আশ্রমে শুরু হয়েছে এই ঐতিহাসিক বৈঠক, যেখানে উপস্থিত রয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, প্রাক্তন সভাপতি সোনিয়া গান্ধী, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী সহ প্রায় ১৭০ জন সদস্য। ১৯৪০ সালের পর এই প্রথম সিডব্লিউসি-র কোনো বৈঠক বিহারে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এই বৈঠককে আগামী বিহার বিধানসভা নির্বাচনকে ঘিরে দলের কৌশল নির্ধারণের একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। সূত্রের খবর, ২০২৩ সালের টেলেঙ্গানা নির্বাচনে কংগ্রেসের জয়কে মডেল হিসেবে রেখে বিহারেও সাফল্য অর্জনের পরিকল্পনা করছে দল।
সিডব্লিউসি-র পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের বিশেষ ভোটার তালিকা পুনর্বিবেচনা -র বিরুদ্ধে এবং বিহারে “ভোট চুরি”-র অভিযোগে তীব্র বার্তা দেওয়া হতে পারে। বৈঠকে রাহুল গান্ধীর ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’-র জন্য ধন্যবাদ জানানো হবে বলে জানা গেছে। এই যাত্রা ১৬ দিন ধরে ১,৩০০ কিমি পথ অতিক্রম করে বিহারের ২৫টিরও বেশি জেলা কভার করেছে।
বৈঠকে শুধু বিহার নয়, মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, নারী নির্যাতন এবং কূটনৈতিক ব্যর্থতার মতো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও আলোচনার বিষয় হবে। একই সঙ্গে রাজ্যে ২০টিরও বেশি জেলায় একযোগে সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে ‘ভোট চুরি’ ইস্যু তুলে ধরতে এবং ‘ঘর ঘর অধিকার অভিযান’ শুরু করতে চলেছে কংগ্রেস।
সোমবার বিহার কংগ্রেস ইনচার্জ কৃষ্ণা আল্লাভারু এই সিডব্লিউসি বৈঠককে “দ্বিতীয় স্বাধীনতা সংগ্রাম”-এর সঙ্গে তুলনা করেন। বিহার কংগ্রেস সভাপতি রাজেশ রাম স্মরণ করান, ১৯২১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামী মৌলানা মাজহারুল হক সদাকত আশ্রমের জন্য ২১ একর জমি দান করেন। এই আশ্রমেই মহাত্মা গান্ধী, রাজেন্দ্র প্রসাদ ও জওহরলাল নেহরু বিখ্যাত চম্পারণ সত্যাগ্রহের রূপরেখা তৈরি করেছিলেন।
কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক কেসি বেনুগোপাল সোমবার বলেন, “আজ বিহার আবার এক সন্ধিক্ষণে—একদিকে আশা, সামাজিক ন্যায় ও উন্নয়নের রাজনীতি, আর অন্যদিকে ঘৃণা, হিংসা, বেকারত্ব ও সংবিধান ধ্বংসের রাজনীতি। এই পরিস্থিতিতে আমাদের সিডব্লিউসি বৈঠক বিহারের মানুষের কাছে আমাদের প্রতিশ্রুতি পুনঃপ্রতিষ্ঠার বার্তা দিচ্ছে।”
২০২৩ সালে টেলেঙ্গানায় কংগ্রেস সিডব্লিউসি বৈঠক ও এক বিশাল জনসভা করেছিল, যেখানে সোনিয়া গান্ধী নির্বাচনী গ্যারান্টি ঘোষণা করেন। সেই প্রচারের ফলেই ভারত রাষ্ট্র সমিতিকে হারিয়ে ক্ষমতায় আসে কংগ্রেস, রেভন্থ রেড্ডি মুখ্যমন্ত্রী হন। বিহারে আসন্ন নির্বাচনেও সেই মডেল কাজে লাগাতে চায় দল।
এদিকে বিহারে মহাগঠবন্ধন বর্তমানে আসন বন্টন নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। ২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের দুর্বল পারফরম্যান্সকেই মহাগঠবন্ধনের পরাজয়ের অন্যতম কারণ বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারের বিহার সফরের পর আগামী অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহেই নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হতে পারে বলে সূত্রের খবর। ২৪৩ আসনের বিহার বিধানসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অক্টোবর-নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের ঐতিহাসিক এই বৈঠক শুধু বিহার নয়, সারা দেশের রাজনীতিতে দলের সক্রিয়তা ও ভবিষ্যৎ রণকৌশল নির্ধারণে একটি বড় মাইলফলক হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

