BRAKING NEWS

নিখোঁজ যুবকের পচাগলা লাশ উদ্ধার, পুলিশী নির্যাতনের বিরুদ্ধে জাতীয় সড়ক অবরোধ

নিজস্ব প্রতিনিধি, তেলিয়ামুড়া, ২৩ ডিসেম্বর৷৷ মুঙ্গিয়াকামী থানায় ডেকে নিয়ে লকআপে পুড়ে দড়ি দিয়ে বেঁধে মারধরে অসুস্থ

নিখোঁজ চিত্ত দেববর্মার মৃতদেহ উদ্ধারের পর জাতীয় সড়ক অবরোধ ক্ষুব্ধ জনতার৷ ছবি নিজস্ব৷
নিখোঁজ চিত্ত দেববর্মার মৃতদেহ উদ্ধারের পর জাতীয় সড়ক অবরোধ ক্ষুব্ধ জনতার৷ ছবি নিজস্ব৷

হয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত নিখোঁজ চিত্ত দেববর্মার ফাঁসিতে ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে৷ মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই সংশ্লিষ্ট এলাকার জনমনে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে৷ রাস্তায় নেমে পুলিশের বিরুদ্ধে তীব্র জেহাদ ঘোষণা করেছেন গিরিবাসীরা৷ নিখোঁজ চিত্ত দেববর্মার পচাগলা মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বাড়ির পাশের জঙ্গলে৷ এরপরই এলাকার মানুষ আসাম-আগরতলা জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হয়৷
সংবাদে প্রকাশ, গত শনিবার থেকে মুঙ্গিয়াকামী থানার এস আই শিব শঙ্করের ভয়ে নিজ বাড়ী থেকে নিখোঁজ হয়ে যায় আঠারমুড়া এডিসি ভিলেজের ৪৩ মাইল এলাকার যুবক চিত্ত দেববর্মা (২৩)৷ সেদিন থেকেই তার পরিবারের লোকজন হন্যে হয়ে বিভিন্ন স্থানে খোঁজখবর করতে থাকেন৷ কোথাও তাঁর কোন হদিশ পাওয়া যায়নি৷ এই ব্যাপারে মুঙ্গিয়াকামী থানার পুলিশকেও অবহিত করেন পরিবারের লোকজন৷ এদিকে, শুক্রবার দুপুর নাগাদ বাড়ীর পাশের জঙ্গলে দুর্গন্ধ পান এলাকার লোকজন৷ সঙ্গে সঙ্গেই এদিক ওদিক খোঁজ নিয়ে দেখা যায় একটি গাছের ডালে ফাঁসিতে ঝুলে রয়েছে চিত্ত দেববর্মার পচাগলা মৃতদেহ৷ সঙ্গে সঙ্গেই খবর দেওয়া হয় মুঙ্গিয়াকামী থানায়৷ পুলিশ গিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে ঘটনাস্থলেই ময়নাতদন্ত করার ব্যবস্থা করে৷
অন্যদিকে, চিত্ত দেববর্মার মৃতদেহ উদ্ধারের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান আইপিএফটি ও বিজেপির স্থানীয় নেতৃত্বরা৷ তারা পুলিশের এহেন ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে৷ পরবর্তী সময়ে ঘটনার সাথে জড়িত ঐ থানার এস আই শিব শঙ্কর ত্রিপুরার উপযুক্ত শাস্তির দাবীতে এলাকাবাসী বিকাল তিনটা থেকে পৌণ ছয়টা পর্যন্ত আসামা আগরতলা জাতীয় সড়ক অবরোধ করে৷ ঘটনার খবর পেয়ে অবরোধ স্থলে ছুটে যান মহকুমা পুলিশ আধিকারীক লাকী চৌহান৷ মহকুমা পুলিশ আধিকারীক ঘটনাস্থলে পৌঁছতেই এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন৷ ঘেরাও করা হয় মহকুমা পুলিশ আধিকারীককে৷ গণরোষে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান লাকী চৌহান৷ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছেন এসডিএম জয়ন্ত দে৷ পরবর্তী সময়ে তদন্তক্রমে পুলিশ অফিসার দোষী সাব্যস্ত হলে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে বলে আশ্বাস দেন মহকুমা শাসক৷ তাঁর আশ্বাসের ভিত্তিতে ক্ষুব্ধ জনতা পথ অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন৷
এখানে উল্লেখ্য, গত ২৯ নভেম্বর সাত সকালে আঠারমুড়া পাহাড়ের জাতীয় সড়কে একটি বুলেরো গাড়িতে কয়েকজন দুসৃকতি লুটপাটের উদ্দেশ্যে গুলি চালায়৷ ঘটনায় দুইজন আহত হয়েছিলেন৷ ঘটনার তিনদিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ ঐ ঘটনার কোন ক্লু পায়নি৷ বরং নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করতেই লোকার চার যুবককে ধরে এনে থানায় জিজ্ঞাসাবাদ চালায়৷ এর মধ্যে একজন হল চিত্ত দেববর্মা৷ গত ২রা ডিসেম্বর রাত নয়টা নাগাদ চিত্ত দেববর্মাকে থানায় ডেনে আনে অকথ্য নির্যাতন চালায়৷ মারধোর করে প্রচন্ড৷ থানার লকআপে দড়ি দিয়ে বোঁধে চিত্তকে বেধরক মারধর করা হয়৷ তাতে চিত্ত দেববর্মা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে৷ এদিন রাতে বিনা চিকিৎসায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় থানা থেকে৷ পুলিশের মারে অসুস্থ হয়ে পরে চিত্ত দেববর্মা ৪ ডিসেম্বর তেলিয়ামুড়া হাসপাতালে যায়৷ সেখানে তাকে ভর্তি করানো হয়৷ চিকিৎসা নেওয়ার পর হাসপাতাল থেকে চিত্ত ছাড়া পায়৷ বাড়ি ফিরেও নিস্তার পায়নি সে৷ প্রতিদিন রাতে তাঁকে ধরে আনতে পুলিশ তাঁর বাড়িতে যায়৷ তখন সে পুলিশের তদন্তের নামে মারধর এর ঘটনায় আতঙ্কে ভুগতে থাকে৷ একসময় মানসিকভাবে বিকারগ্রস্থ হয়ে যায় চিচ্চ দেববর্মা৷ পরিবারের লোকজন জানিয়েছে বাড়ির লোকদের দেখলেও চিত্ত পুলিশ ভেবে ঘরের কোণায় কিংবা খাটের নীচে লুকিয়ে থাকতো৷ শনিবার বাড়ি থেকে আচমকা নিখোঁজ হয়ে যায় চিত্ত৷ আর খঁুজে পাওয়া যাচ্ছিল না তাকে৷ শুক্রবার দুপুরে মিলল তাঁর পচাগলা মৃতদেহ৷
এদিকে, মূলতঃ যেই ঘটনার জন্য পুলিশ চিত্তকে তুলে নিয়ে মারধর ও হয়রাণি করেছে সেই গুলি কান্ডের রহস্য এখনো পুলিশ উদ্ঘাটন করতে পারেনি৷ স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বছর পুলিশের মারধরের ভয়ে বাড়ি ছাড়া হয়েছিল আরও এক যুবক৷ পরবর্তী সময়ে ঐ যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল জঙ্গল থেকে৷ এলাকায় গুঞ্জন চলছে আসলে কি গুলিকান্ডের সাথে চিত্ত দেববর্মা জড়িত ছিল৷ নাকি যারা এই গুলিকান্ডের সাথে যুক্ত তাদেরকে চিত্ত দেববর্মা চিনতে পেরেছে তাই তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে৷
মুঙ্গিয়াকামী থানার পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ মদ, গাঁজা, ফেন্সিডিল, জুয়া সহ বিভিন্ন পাচার বাণিজ্য ও অবৈধ কাজের জন্য মাসোহারা নিয়ে ব্যস্ত থাকে৷ নিরীহ এক উপজাতি যুবককে এইভাবে তথ্য প্রমাণ ছাড়া থানায় তুলে নিয়ে মারধর করা এবং শেষ পুলিশী নির্যাতনের ভয়ে নিজেকে শেষ করার ঘটনায় স্থানীয় জনমনে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *