গুয়াহাটি , ৯ অগাস্ট : আসাম বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক পরিবেশকে গুরুত্ব সহকারে প্রস্তুত করার লক্ষ্যে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আগামী ২৯ আগস্ট আসামে সফরে আসছেন। এই সফরে তিনি রাজভবন উদ্বোধন করবেন এবং রাজ্যের পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের সাথে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন। বিজেপির আসাম শাখা ২০২৬ সালের নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক ন্যারেটিভ তৈরি করার প্রক্রিয়া শুরু করবে শাহের এই সফরের মাধ্যমে। এর পাশাপাশি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও আসামে সফর করবেন এবং তার সফর ৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে, যার মধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করা হবে।
মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সংবাদমাধ্যমকে জানান, অমিত শাহের সফর আসাম রাজনীতির জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করবে। তিনি বলেন, “অমিত শাহ আসবেন এবং ২৯ আগস্ট গুয়াহাটি শহরের নতুন রাজভবন উদ্বোধন করবেন। এর পর তিনি এনডিএ-র নির্বাচিত পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন। সন্ধ্যায় তিনি গোলাপ বরবোর জন্মশতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।”
শর্মা আরও জানান, অমিত শাহের এই সফরের একটি বিশেষ উদ্দেশ্য থাকবে – ২০২৬ সালের আসাম বিধানসভা নির্বাচনের জন্য বিজেপি ও তার সহযোগী দলগুলির রাজনৈতিক ন্যারেটিভ তৈরি করা। বিশেষ করে পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের সঙ্গে শাহের বক্তৃতা আগামী নির্বাচনের জন্য বিজেপির পক্ষ থেকে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক বার্তা দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
২০২৪ সালের আসাম বিধানসভা নির্বাচনের জন্য বিজেপি তার তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। রাজ্য বিজেপি দলের নেতা-নেত্রীরা এই সফরগুলোর জন্য সক্রিয়ভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেন, “এই সফরের সঙ্গে রাজনৈতিক ন্যারেটিভ তৈরি হবে, যা আমাদের নির্বাচনী প্রচারে সাহায্য করবে। আমাদের দল পুরোপুরি প্রস্তুত, এবং আমরা আশা করি যে এই সফর রাজ্যের উন্নয়ন ও বিজেপির পক্ষ থেকে জনগণের প্রতি প্রতিশ্রুতির একটি উদাহরণ হবে।”
রাজ্য বিজেপি দলের সভাপতি দিলীপ সইকিয়া এক্স প্ল্যাটফর্মে একটি পোস্টে জানিয়েছেন, “আজ পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের সম্মেলনের প্রস্তুতির জন্য রাজ্য সদর দপ্তরে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে অমিত শাহ-জির উপস্থিতি নিশ্চিত করতে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।”
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও আগামী ৮ সেপ্টেম্বর আসামে আসবেন, যেখানে তিনি একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। মোদী প্রথমে গৌলাঘাট জেলার নুমালিগড়ে ভারতের প্রথম বায়ো-এথানল রিফাইনারি উদ্বোধন করবেন, যার খরচ প্রায় ৪,০০০ কোটি টাকা। এই প্রকল্পটি পরিবেশবান্ধব জ্বালানি উৎপাদন করবে এবং আঞ্চলিক অর্থনীতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এরপর প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলদৈতে গিয়ে তিনটি বিশাল প্রকল্পের শিলান্যাস করবেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে – গুয়াহাটি রিং রোড, নারেঙ্গি ও কুরুয়া ব্রহ্মপুত্র নদীর উপর সেতু, এবং মঙ্গলদৈ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।
মোদী এই সফরের শেষ দিন গুয়াহাটি শহরে ভরতরত্ন ভূপেন হাজারিকার জন্মশতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন, যা একটি সাংস্কৃতিক মহাযজ্ঞ হিসেবে পালিত হবে। এই প্রোগ্রামে ভূপেন হাজারিকার সঙ্গীত, তাঁর জীবন ও অবদান নিয়ে আলোচনা এবং শ্রদ্ধার্ঘ্য প্রদানের উদ্যোগ থাকবে।
যদিও প্রধানমন্ত্রী ও অমিত শাহের সফরের বেশিরভাগ কর্মসূচি সরকারি হবে, তবুও বিজেপি তাদের দলীয় কর্মসূচির সফলতা নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা জানান, রাজ্য বিজেপি দলের সমস্ত সাংসদ, বিধায়ক এবং জেলা নেতৃত্ব এই সফরের সফলতার জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন। তিনি বলেন, “এই সফরকে সফল করার জন্য রাজ্যের সকল স্তরের নেতৃত্ব একত্রিত হয়েছে এবং তারা নিজেদের দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।”
রাজ্য বিজেপি দলটি এও জানিয়েছে যে তারা তাদের কর্মীদের প্রস্তুতি নিতে বলেছে এবং আগামী দিনের এই সফরকে একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক হিসেবে দেখছে।
এই দুই সফর আসাম রাজনীতিতে এক নতুন মোড় আনতে পারে। অমিত শাহের রাজনৈতিক বক্তৃতা এবং প্রধানমন্ত্রী মোদীর উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন, বিজেপির পক্ষে রাজনৈতিক পরিস্থিতি শক্তিশালী করবে বলে মনে করা হচ্ছে। রাজ্যের উন্নয়ন এবং জনগণের কাছে রাজনৈতিক বার্তা পৌঁছানোর পাশাপাশি, এই সফর আসামের জনগণের মধ্যে বিজেপির প্রতি আস্থা এবং সমর্থন আরও দৃঢ় করতে সাহায্য করবে।
এখন, রাজ্য বিজেপি দলের নেতারা আশা করছেন, এই সফরের মাধ্যমে তারা ২০২৪ সালের নির্বাচনে একটি শক্তিশালী অবস্থান নিশ্চিত করতে সক্ষম হবেন, যেখানে বিজেপি তৃতীয় বার ক্ষমতায় আসার জন্য সকল প্রচেষ্টা করবে।

