নয়াদিল্লি, ৭ আগস্ট : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার ভারত থেকে রাশিয়া তেল আমদানি করার জন্য অতিরিক্ত ২৫% শুল্ক আরোপ করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন, ফলে ভারতীয় পণ্যের উপর মোট শুল্ক ৫০% হয়ে দাঁড়ালো। গত সপ্তাহে ট্রাম্প প্রথমে ২৫% শুল্ক আরোপের ঘোষণা করেছিলেন, এবং এরপর দ্বিতীয় দফায় অতিরিক্ত ২৫% শুল্কের সিদ্ধান্ত নেন। এই পদক্ষেপটি বিশেষভাবে ভারতের রাশিয়ার সঙ্গে তেল বাণিজ্যকে লক্ষ্য করে নেওয়া হয়েছে।
কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা এবং সংসদ সদস্য শশী থারুর এই নতুন শুল্ক সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং এই পদক্ষেপকে ভারতের জন্য “খুব ভালো খবর” বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “এটি ভারতীয় পণ্যের জন্য মার্কিন বাজারে অত্যন্ত ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে। এর ফলে অনেক মার্কিন ক্রেতার জন্য ভারতীয় পণ্য অপ্রতিরোধ্য হয়ে যাবে।” থারুর বলেন, এই শুল্কের কারণে ভারতীয় পণ্যগুলি মার্কিন বাজারে অনেক বেশি দামী হয়ে যাবে, যা ভারতীয় রপ্তানি খাতের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
থারুর আরও বলেন, “এটি ভারতের জন্য ক্ষতিকর হবে, কারণ অন্যান্য দেশ যেমন ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান তাদের পণ্যের উপর কম শুল্ক আরোপ করে, ফলে মার্কিন বাজারে ভারতীয় পণ্য বিক্রি কঠিন হয়ে পড়বে।” তিনি সতর্ক করে বলেন, “যদি অন্য দেশে সস্তায় পণ্য পাওয়া যায়, তবে মার্কিন ক্রেতারা ভারতীয় পণ্য কেনার পরিবর্তে সেই দেশগুলোর পণ্য কিনবে।” থারুর আরও বলেন, ভারত এখন অন্য বাজারে বাণিজ্য সম্প্রসারণে মনোনিবেশ করতে হবে। “আমরা যুক্তরাজ্যের সঙ্গে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছি, এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তবে, এই পরিসরে সাফল্য আসার আগে, স্বল্পমেয়াদে এই শুল্ক বৃদ্ধি ভারতের জন্য একটি বড় ধাক্কা,” বলেন থারুর।
এদিকে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এটি অত্যন্ত দুঃখজনক যে যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় পণ্যের উপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছে, এমন পদক্ষেপ যা অনেক অন্যান্য দেশ তাদের জাতীয় স্বার্থে গ্রহণ করছে।” ভারতের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে যে, ভারত তার জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করতে সক্ষম এবং এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।
মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, “ভারত তার স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলো যেখানে নিজেদের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখছে, সেখানে ভারতও তাদের জাতীয় স্বার্থ বজায় রাখতে সক্ষম হবে।”
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বুধবারই নির্বাহী আদেশে এই অতিরিক্ত ২৫% শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন, যা প্রথম ২৫% শুল্কের উপরে কার্যকর হবে। প্রথম শুল্কটি ৭ আগস্ট ২০২৫ থেকে কার্যকর হবে, এবং দ্বিতীয় দফার শুল্ক ২১ দিন পর থেকে কার্যকর হবে। এই পদক্ষেপের ফলে ভারতের রপ্তানির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে, কারণ ভারত মূলত কৃষি, প্রযুক্তি, ইলেকট্রনিক্স, গহনা, ওষুধ, এবং অন্যান্য সামগ্রী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করে। বিশেষত, কৃষি এবং ছোট ও মাঝারি শিল্প খাতগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, কারণ এই সেক্টরগুলোর পণ্যের দাম উচ্চতর হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ ভারতীয় রপ্তানির ওপর প্রভাব ফেলবে এবং বিশেষত ভারতের মার্কিন বাজারে পণ্যের বিক্রির পরিমাণ কমে যেতে পারে। তারা বলছেন, এর ফলে ভারতের অর্থনীতি এবং বিশেষত গরিব ও মধ্যবিত্ত ব্যবসায়ীরা দুর্বল হতে পারে, কারণ তাদের পণ্য মার্কিন বাজারে প্রতিযোগিতামূলক হতে আরও কঠিন হয়ে পড়বে।
বিশ্ববাজারে যুক্তরাষ্ট্রের এমন পদক্ষেপ অন্য দেশগুলোর সাথে ভারতের বাণিজ্য সম্পর্কেও প্রভাব ফেলতে পারে। বর্তমানে, ভারত ব্রিকস এবং অন্যান্য বাণিজ্য জোটের অংশ হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাণিজ্য সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। বিশেষত, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে ভারত এই চাপের মধ্যে নতুন সুযোগ খুঁজছে। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ ভারতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে, কারণ মার্কিন বাজার বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এবং গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র।
এখন দেখার বিষয়, ভারত কিভাবে এই নতুন পরিস্থিতি মোকাবিলা করে এবং কীভাবে অন্যান্য বাজারে নিজেদের পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য নতুন পথ তৈরি করে।

