মুম্বাই, ২১ জুলাই : তদন্তে ব্যর্থতা মহারাষ্ট্রে পুলিশি ভূমিকা খুবই লজ্জায় ফেলেছে গোটা দেশকে। প্রমানের অভাবে ২০০৬ সালের মুম্বাই ট্রেন বিস্ফোরণ মামলায় সমস্ত ১২ জন অভিযুক্তকে নির্দোষ রায় দিল বম্বে হাইকোর্ট। সোমবার বিচারপতি অনিল কিলোর ও শ্যাম চাঁদক সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ বেঞ্চ এই ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করেছেন। আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, অভিযোগ প্রমাণ করতে রাষ্ট্রপক্ষ সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে। অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করার মতো কোনো নির্ভরযোগ্য প্রমাণ নেই।
আজও সেই দিনের কথা মনে পড়লে অনেকেই শিউরে উঠেন। ২০০৬ সালের ১১ জুলাই সন্ধ্যায় ব্যস্ত সময়ে মুম্বাইয়ের পশ্চিম রেলপথের লোকাল ট্রেনে সাতটি ধারাবাহিক বিস্ফোরণ ঘটে। প্রেসার কুকারে বোমা ভরে প্রথম শ্রেণির কামরাগুলিতে রাখা হয়েছিল। এই ভয়াবহ হামলায় ১৮৯ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন এবং ৮০০-র বেশি মানুষ আহত হয়েছিলেন। বিস্ফোরণ ঘটে খার রোড থেকে সান্তাক্রুজ, বান্দ্রা, যোগেশ্বরী, মীরা রোড, মাটুঙ্গা, বোরিভলির মতো সাতটি গুরুত্বপূর্ণ রেলপথের জায়গায়। মাত্র ১১ মিনিটে সাতটি ট্রেনে বিস্ফোরণ ঘটেছিল। গোটা শহরে সন্ত্রাসের ছায়া নেমে এসেছিল এবং দেশজুড়ে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান শুরু হয়েছিল।
২০১৫ সালে একটি বিশেষ আদালত এই মামলায় ১২ জনকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল। তাদের মধ্যে ৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৭ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। পরে মহারাষ্ট্র সরকার মৃত্যুদণ্ডের অনুমোদনের জন্য বম্বে হাইকোর্টে আবেদন করেছিল। সাজাপ্রাপ্তরাও নিজেদের শাস্তির বিরুদ্ধে আপিল করেছিলেন।
আজ বিচারপতি অনিল কিলোর ও এস. এম. চাঁদকের বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, ঘটনার প্রায় চার বছর পর সাক্ষীরা অভিযুক্তদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন, “অত্যন্ত অস্বাভাবিক”। সাথে বলেছে, রাষ্ট্রপক্ষের প্রমাণ “বিশ্বাসযোগ্য নয়” এবং এর উপর ভিত্তি করে দোষী সাব্যস্ত করা নিরাপদ নয়। আদালত বলেছে, এক সাক্ষী দাবি করেন, তিনি বোমা তৈরি হতে দেখেছিলেন। কিন্তু তিনি ১০০ দিন নীরব ছিলেন। আদালতের মন্তব্য, ওই সাক্ষী শুরুতে অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত ছিলেন, পরে নিজের বয়ান পাল্টান। রাষ্ট্রপক্ষ আইনি প্রমাণের মানদণ্ডে ব্যর্থ হয়েছে বলে জানিয়েছে হাইকোর্ট। আদালত আরও জানিয়েছে, যদি অন্য কোনো মামলায় তারা গ্রেপ্তার না থাকেন, তবে অবিলম্বে তাদের মুক্তি দিতে হবে।
২০২৪ সালের জুলাই থেকে শুরু হয়ে ছয় মাস ধরে হাইকোর্টে এই মামলার শুনানি চলেছে। বিবাদী পক্ষ দাবি করে, অভিযুক্তদের কাছ থেকে নেওয়া স্বীকারোক্তি মহারাষ্ট্র সংগঠিত অপরাধ নিয়ন্ত্রণ আইন (এমসিওসিএ) এর আওতায় চাপ ও অত্যাচারের মাধ্যমে আদায় করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তারা ভারতের মুজাহিদিন (আইএম) সদস্য সাদিকের স্বীকারোক্তিও তুলে ধরেন, যেখানে হামলায় ওই জঙ্গী গোষ্ঠির জড়িত থাকার কথা বলা হয়েছে।
অন্যদিকে, বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি রাজা ঠাকরে তিন মাস ধরে তীব্র সওয়াল করে বলেন, এই মামলা দেশের ‘দুর্লভ থেকে দুর্লভতম’ সন্ত্রাসী হামলার একটি উদাহরণ। অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ সাজা প্রাপ্য। রায় ঘোষণার পর বিভিন্ন জেল থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত থাকা অভিযুক্তরা তাদের আইনজীবীদের ধন্যবাদ জানান। অন্যদিকে, বিস্ফোরণে নিহতদের পরিবার এই রায় শুনে হতবাক ও মর্মাহত। মহারাষ্ট্র সরকার এবং সরকারি পক্ষ এখন সুপ্রিম কোর্টে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার কথা বিবেচনা করছে।

