নাগাল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ, মামলা, তদন্তে সিবিআই

কোহিমা, ১৫ জুলাই : নাগাল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়া এবং টেন্ডার সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগে সিবিআই মামলা দায়ের করেছে। ইতিমধ্যে, সিবিআই তদন্তে নেমে অসম, নাগাল্যান্ড এবং ত্রিপুরায় তল্লাশি চালিয়েছে। ওই অধ্যাপকের সাথে অসম এবং ত্রিপুরার যোগসূত্র রয়েছে বলে সিবিআই দাবি করেছে। কারণ, তিনি ত্রিপুরার বাসিন্দা বর্তমানে নাগাল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত রয়েছেন।

সিবিআই-এর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত শনিবার ১২ জুলাই নাগাল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানি বিভাগের স্কুল অব সায়েন্স-এর ডিন ও আইকিউএসি-র ডিরেক্টর অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন দেবের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে। তিনি বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র অধ্যাপক পদে কর্মরত রয়েছেন।

সিবিআই জানিয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, অধ্যাপক দেব দুর্নীতি এবং অবৈধ কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়েন। তিনি পূর্বনির্ধারিত পরিকল্পনায় কিছু নির্দিষ্ট সংস্থা বা বিডারদের টেন্ডার পাইয়ে দিতে ঘুষ নেওয়ার মাধ্যমে ব্যক্তিগত আর্থিক লাভ অর্জন করেছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ক্ষতি করেছেন।

এই মামলার তদন্তে সিবিআই গত শনিবার অসমের যোরহাট, নাগাল্যান্ডের লুমানি এবং ত্রিপুরার আগরতলায় একযোগে তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে। অভিযানে ঘুষ নেওয়া ও টেন্ডার সংক্রান্ত একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েছে সিবিআই।

৫৭ বছর বয়সী চিত্তরঞ্জন দেব ত্রিপুরার বাসিন্দা। ১৯৯৭ সালের আগস্ট মাসে লুমানি ক্যাম্পাসে লেকচারার হিসেবে নগাল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইকিউএসি-র ডিরেক্টর, বোটানি বিভাগের স্কুল অব সায়েন্স-এর ডিন এবং সিনিয়র অধ্যাপক পদে কর্মরত রয়েছেন।

অধ্যাপক দেব ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক, ১৯৯৪ সালে শিলংস্থিত উত্তর-পূর্ব হিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর এবং ২০০০ সালে ডক্টরেট সম্পন্ন করেন। তিনি একাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক একাডেমিক সংগঠনের সদস্য হিসেবেও যুক্ত রয়েছেন। উল্লেখ্য, ১৯৯৪ সালের ৬ সেপ্টেম্বর স্থাপিত নাগাল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় রাজ্যের একমাত্র কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে রাজ্যজুড়ে ৭৬টি কলেজ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত।

যতদূর জানা গেছে, অধ্যাপক চিত্ত রঞ্জন দেবের বিরুদ্ধে, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৮৮ (২০১৮ সালে সংশোধিত) এর ধারা ৭ অনুযায়ী সিবিআই একটি নিয়মিত মামলা নথিভুক্ত করেছে। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সিবিআই, এসিবি, গুয়াহাটি শাখাকে।

সিবিআই সূত্রে জানা গেছে, ডাঃ দেব বিভিন্ন সময়ে অসমের জোরহাটের ব্যবসায়ী রবীন্দ্র কুমার জৈনের থেকে অনৈতিকভাবে ঘুষ দাবি করেছিলেন। রবীন্দ্র কুমার জৈন ‘জলধারা অ্যান্ড কোম্পানি’-র কর্ণধার। অভিযোগ অনুযায়ী, প্রায় ৫ লক্ষ টাকার একটি সাপ্লাই অর্ডার ইতিমধ্যে সম্পন্ন হওয়ার পর এবং আরও ২৩ লক্ষ টাকার সামগ্রী ক্রয় প্রক্রিয়াধীন থাকা অবস্থায় অধ্যাপক দেব ওই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ঘুষ দাবি করেন। এছাড়াও, জোরহাটেরই আরেক ব্যবসায়ী গুলজার হুসেন, ‘সি.এস. পাওয়ার সলিউশনস’-এর কর্ণধারের কাছ থেকেও তিনি ইউপিএস ব্যাটারি ও অন্যান্য সামগ্রীর সরবরাহ আদেশ পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে ঘুষ চেয়েছিলেন বলে অভিযোগ।

সিবিআই জানিয়েছে, রবীন্দ্র জৈনের কাছ থেকে ২ লক্ষ টাকা ঘুষ নেওয়ার উদ্দেশ্যে অধ্যাপক দেব ১২ জুলাই জোরহাট সফরে যান। ওই একই দিনে গুলজার হুসেনের কাছ থেকেও তিনি ১৫,০০০ টাকা ঘুষ নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন বলে তথ্য রয়েছে। এই সমস্ত অভিযোগের ভিত্তিতেই সিবিআই এফআইআর নথিভুক্ত করেছে এবং তদন্ত চালিয়েছে।