‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ ও ‘সমাজতন্ত্র’ পাশ্চাত্য ধারণা, সংবিধান থেকে বাদ দেওয়ার দাবি হিমন্ত বিশ্ব শর্মার

গুয়াহাটি, ২৯ জুন: সংবিধানের প্রস্তাবনায় থাকা ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ ও ‘সমাজতন্ত্র’ শব্দদুটিকে সরিয়ে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করলেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। তাঁর দাবি, এই দুটি শব্দ ভারতীয় সভ্যতার অন্তর্নিহিত মূল্যবোধের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, বরং পশ্চিমা দর্শনের প্রতিফলন। শনিবার গুয়াহাটিতে এক অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন, যা নতুন করে রাজনৈতিক বিতর্ক উস্কে দিয়েছে।

‘দ্য ইমারজেন্সি ডায়েরিজ: ইয়ার দ্যাট ফরগট আ লিডার’ বই প্রকাশের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি একজন গর্বিত হিন্দু। একজন মুসলিমও যদি তাঁর ধর্মে বিশ্বাস রাখেন, তাহলে আমরা কীভাবে ধর্মনিরপেক্ষ হতে পারি?” তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে, ‘সেকুলারিজম’ শব্দটি ভারতীয় ‘সর্বধর্ম সমভাব’-এর ভাবনার সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ নয়।

শর্মা আরও বলেন, “ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সমাজতন্ত্র – এই দুটি শব্দ সংবিধানের মূল পাঠে ছিল না। ইন্দিরা গান্ধীর আমলে জরুরি অবস্থার সময় এগুলো সংযোজিত হয়েছিল। আমি মনে করি, এগুলো এখন বাদ দেওয়ার সময় এসেছে।” তাঁর যুক্তি, এই ধারণাগুলি পাশ্চাত্য চিন্তাধারার প্রভাব; এগুলোর মাধ্যমে ভারতীয় মূল্যবোধকে চাপা দেওয়া হয়েছে।

সমাজতন্ত্র প্রসঙ্গে হিমন্ত বলেন, “সমাজতন্ত্র কখনই ভারতের অর্থনৈতিক দর্শন ছিল না। ভারত বরাবরই ‘সর্বোদয়’ ও ‘অন্ত্যোদয়’-এর দর্শনে বিশ্বাসী ছিল। সমাজতন্ত্র আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আজ বাস্তব হল, বিজেপিকে কিছু না করেও কংগ্রেস নিজেই তার সমাজতান্ত্রিক নীতিকে ধ্বংস করেছে— নরসিমহা রাও ও মনমোহন সিং-এর হাত ধরে।”

প্রসঙ্গত, ১৯৭৫ সালের ২৫ জুন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ঘোষণায় দেশে জারি হয় জরুরি অবস্থা। তা বলবৎ ছিল ১৯৭৭ সালের ২১ মার্চ পর্যন্ত। এই সময়কালকে স্মরণ করেই শনিবার আয়োজিত হয়েছিল উল্লিখিত বইটির প্রকাশ অনুষ্ঠান। বইটি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জরুরি অবস্থার সময় সংঘের প্রচারক হিসেবে তাঁর ভূমিকার প্রেক্ষিতে রচিত।

সাংবাদিকদের উদ্দেশে হিমন্ত বলেন, “জরুরি অবস্থার সময় যেভাবে গণতন্ত্রকে বিপন্ন করা হয়েছিল, তা জাতি হিসেবে ভুলে গেলে চলবে না। এধরনের ঘটনা আবার ঘটুক, আমরা চাই না।”

রাজনৈতিক মহলের মতে, সংবিধান থেকে এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ শব্দ বাদ দেওয়ার দাবি নিঃসন্দেহে একটি বিতর্কিত প্রস্তাব। এটি জাতীয় স্তরে নতুন আলোচনা ও প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিতে পারে। এখন দেখার, এই মন্তব্য রাজনৈতিক মহলে কী প্রভাব ফেলতে চলেছে।