সংবিধান হত্যা দিবসের গুরুত্ব তুলে ধরলেন উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়

নৈনিতাল, ২৫ জুন: উপরাষ্ট্রপতি শ্রী জগদীপ ধনখড় আজ কুমাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বলেছেন, ৫০ বছর আগে, ভারতের সবচেয়ে বড় এবং প্রাণবন্ত গণতন্ত্র এক ভয়াবহ ঝড়ের মুখোমুখি হয়েছিল—জরুরি অবস্থা ঘোষণার মাধ্যমে। তিনি উল্লেখ করেন, “জরুরি অবস্থা ছিল গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার মতো এক ভূমিকম্প। সেই সময় রাত ছিল অন্ধকারময়, মন্ত্রিসভা পাশ কাটিয়ে যায়, প্রধানমন্ত্রী নিজের স্বার্থে জাতিকে অবজ্ঞা করেন, রাষ্ট্রপতি সংবিধানের উলঙ্গায়ন করে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন, যা ২১ থেকে ২২ মাস ধরে আমাদের গণতন্ত্রের ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকার সময় ছিল।”
উপরাষ্ট্রপতি জানান, “সেই সময় প্রায় এক লাখ চল্লিশ হাজার মানুষ কারাগারে আটক ছিল, তাদের ন্যায়বিচার পাওয়ার সুযোগ ছিল না। নয়টি হাই কোর্ট সাহসিকতার সঙ্গে দাঁড়িয়েছিল এবং বলেছিল, জরুরি অবস্থা থাকলেও মৌলিক অধিকার স্থগিত করা যাবে না। কিন্তু দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট সেই আদেশ উল্টে দিয়েছিল। তারা বলেছিল, জরুরি অবস্থা ঘোষণা নির্বাহী শাখার সিদ্ধান্ত, যা বিচারিক পর্যবেক্ষণে আসবে না এবং জরুরি অবস্থায় নাগরিকদের মৌলিক অধিকার থাকবে না। এটি ছিল সাধারণ মানুষের জন্য বড় আঘাত।”
তিনি বর্তমান প্রজন্মের তরুণদের উদ্দেশ্যে বলেন, “জরুরি অবস্থার সেই অন্ধকার সময়ের কথা আপনাদের জানতে হবে। প্রেসের উপর কি প্রভাব পড়েছিল? কারা কারাগারে গিয়েছিল? যারা আটক হয়েছিলেন, তাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ পরবর্তীতে দেশের প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি হয়েছেন। এজন্য তরুণদের এই ইতিহাস সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। এই কারণেই সরকার প্রতি বছর ২৫ জুন ‘সংবিধান হত্যা দিবস’ হিসাবে পালন করে যাতে এমন অন্যায় আর কখনো না ঘটে।”
উপরাষ্ট্রপতি ধনখড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর গুরুত্বের কথাও উল্লেখ করে বলেন, “শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শুধু ডিগ্রি বা সার্টিফিকেট পাওয়ার জায়গা নয়। ভার্চুয়াল শিক্ষার চেয়ে ক্যাম্পাস শিক্ষার আলাদা গুরুত্ব আছে, কারণ এখানে বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানোর মাধ্যমে মানসিকতা গড়ে ওঠে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো চিন্তার প্রসার ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্র। এখানে যদি ভয় থেকে কোনো ধারণা আসে, তাহলে সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবন সম্ভব নয়। আমাদের তরুণ সমাজের ওপর বিশ্বের নজর, কারণ তারা নিজেদের ক্যারিয়ারই নয়, দেশের ভবিষ্যত গড়ার সুযোগ পায়।”
তিনি আলুমনাইদের ভূমিকা ও অবদানের প্রতি জোর দিয়ে বলেন, “৫০ বছরের ইতিহাসে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার আলুমনাই হয়েছে। উন্নত দেশগুলোতে কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আলুমনাই ফান্ড কর্পাস ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি। আপনি ভাবুন, যদি এই ১ লক্ষ আলুমনাই বছরে মাত্র ১০ হাজার টাকা করে দান করেন, তাহলে বছরে ১০০ কোটি টাকা সংগ্রহ হবে। বছর বছর এটি চললেই প্রতিষ্ঠান স্বনির্ভর হয়ে উঠবে এবং আলুমনাই ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংযোগ বাড়বে। তাই আমি দেবভূমির তরফ থেকে আলুমনাই অ্যাসোসিয়েশন গঠনের উদ্যোগ নিতে বলছি।”
উপস্থিত শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা উপরাষ্ট্রপতির বক্তব্য থেকে গভীর অনুপ্রেরণা লাভ করেন এবং সংবিধান ও গণতন্ত্র রক্ষায় নতুন প্রজন্মের দায়িত্ববোধ জাগ্রত করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।