ঝাড়খণ্ড বন্‌ধে বিপর্যস্ত জনজীবন, আদিবাসী ধর্মীয় স্থান রক্ষার দাবিতে রাজ্যজুড়ে পথ অবরোধ

রাঁচি, ৪ জুন: আদিবাসী ধর্মীয় স্থানের রক্ষার দাবিতে বুধবার ঝাড়খণ্ডজুড়ে ডাকা বন্‌ধে স্বাভাবিক জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। রাজ্যের একাধিক জেলায় রাস্তা অবরোধ ও বিক্ষোভের ফলে যানচলাচল কার্যত স্তব্ধ হয়ে যায়।

আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল আদিবাসী বাঁচাও মোর্চা ও সিরমাটোলি বাঁচাও মোর্চা, যারা রাঁচির কেন্দ্রীয় সারনা স্থলের আশেপাশে অবৈধ নির্মাণ এবং জবরদখলের বিরুদ্ধে এই বন্‌ধ ডাকে। এছাড়াও, তারা মারাং বুরু, লুগু বুরু, পরশনাথ, মুধার পাহাড় (পিঠোরিয়া), ও তামাড় ও বেদোর মহদানি সারনা স্থলের সুরক্ষার দাবি জানান।

রাঁচি ছাড়াও গুমলা, রামগড়, হাজারিবাগ, লাতেহার ও পূর্ব সিংভূম জেলার বিভিন্ন স্থানে রাস্তা অবরোধ করা হয়। বন্‌ধ সমর্থকরা রাঁচি-পাটনা সড়ক (কুজু, রামগড় জেলা), এনএইচ-৩৯ (উদয়পুরা চৌক, লাতেহার), ও টোটো গ্রাম (গুমলা জেলার ১০ কিমি দূরে)-তে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। রাঁচি জেলার খেলগাঁও চৌমুহনী, অরগোরা, মোড়াবাদি, কান্কে, অর্মাঞ্জি, কাদরু, টাটিসিলভে, রাতু, ও মন্দর-এও বাঁশের ব্যারিকেড ও জ্বলন্ত টায়ার ব্যবহার করে অবরোধ সৃষ্টি করে বিক্ষোভকারীরা। অনেকেই হাতে লাঠি ও আদিবাসী ঐতিহ্যবাহী অস্ত্র নিয়ে বিক্ষোভে অংশ নেন।

পূর্ব সিংভূমের ঘাটশিলা, চাকুলিয়া, গালুডি ও বহারাগোড়ায় বাজার বন্ধ করে দেয়া হয়। বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় মিছিল করে স্লোগান দিতে দিতে দোকানপাট বন্ধ করতে বাধ্য করেছেন। বন্‌ধকে কেন্দ্র করে রাজ্য প্রশাসন সতর্কতা অবলম্বন করেছে। শুধুমাত্র রাঁচিতেই ২,০০০-এর বেশি পুলিশ মোতায়েন করা হয় এবং সংবেদনশীল এলাকাগুলিতে টহলদারি বাড়ানো হয়েছে।

রাঁচিতে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে এসে প্রাক্তন মন্ত্রী গীতাশ্রী ওরাঁও সংবাদমাধ্যমকে জানান, “সিরমাটোলির সারনা স্থলের কাছ দিয়ে নির্মীয়মান ফ্লাইওভারের র‍্যাম্পটি আমাদের পবিত্র জমিকে আচ্ছাদিত করছে। জানুয়ারি মাস থেকে লাগাতার প্রতিবাদ সত্ত্বেও, সরকার কার্যত চুপ। আদিবাসীবান্ধব সরকারের দাবির সঙ্গে এ আচরণ মেলেনা।”

আন্দোলনকারী সংগঠনগুলির দাবি, সরকারের বিভিন্ন নির্মাণ প্রকল্প ও পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজে আদিবাসী ধর্মীয় স্থানের পবিত্রতা ও অস্তিত্ব বিপন্ন হচ্ছে, যা তাঁদের সংস্কৃতি ও পরিচয়ের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। রাজ্যজুড়ে বন্‌ধের প্রভাবে বেশ কয়েকটি জেলায় স্কুল-কলেজ, বাজার ও অফিস কার্যক্রম প্রভাবিত হয়েছে। পুলিশের কঠোর নিরাপত্তা সত্ত্বেও রাজ্যজুড়ে উত্তেজনা বজায় রয়েছে।