নয়াদিল্লি, ২৭ মে: দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে প্রচার খরচে শীর্ষে ছিল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি), যারা মোট ৫৭ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। চমকপ্রদভাবে, কংগ্রেস তাদের আগের তুলনায় খরচ প্রায় দ্বিগুণ করে ৪৬.১৮ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। অন্যদিকে, আম আদমি পার্টি (আপ) সবচেয়ে কম ১৪.৫১ কোটি টাকা খরচ করেছে বলে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া তথ্য থেকে জানা গেছে।
২০২৫ সালের দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে প্রচার খরচের হিসাবে বিজেপি শীর্ষে রয়েছে। দলটি মোট ₹৫৭ কোটি ব্যয় করেছে, যার মধ্যে সাধারণ প্রচারের জন্য বরাদ্দ ছিল ₹৩৯.১৪ কোটি এবং প্রার্থীদের জন্য ₹১৮.৫ কোটি। কংগ্রেস মোট ₹৪৬.১৮ কোটি ব্যয় করেছে, যার মধ্যে সাধারণ প্রচারে ₹৪০.১৩ কোটি এবং প্রার্থীদের জন্য ₹৬.০৫ কোটি বরাদ্দ করা হয়। তুলনামূলকভাবে, আম আদমি পার্টি (আপ) সবচেয়ে কম ₹১৪.৫১ কোটি খরচ করেছে—এর মধ্যে ₹১২.১২ কোটি দলীয় প্রচারে এবং ₹২.৩৯ কোটি প্রার্থীদের জন্য ব্যয় হয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, ২০২০ সালে আপের মোট খরচ ছিল ₹২১.০৬ কোটি, যা এবার অনেক কমেছে।
বিজেপি অনলাইন বিজ্ঞাপনে অন্য সব দলকে ছাড়িয়ে গেছে। মেটা (ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম)-তে তাদের খরচ ছিল ₹৪.১৫ কোটি, যা আপ-এর ₹১.৩৮ কোটি এবং কংগ্রেসের ₹৬৬.৬২ লক্ষ থেকে অনেক বেশি। বিজেপির দিল্লি ইউনিট একাই এই ডিজিটাল খরচের প্রায় ৯১.৮ শতাংশ বহন করেছে, যা তাদের সংগঠনের প্রচার কৌশলে ডিজিটাল মাধ্যমের উপর নির্ভরতার প্রতিফলন।
এডিআর-এর এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিজয়ী বিজেপি প্রার্থীরা গড়ে আপ প্রার্থীদের চেয়ে বেশি খরচ করেছেন। যদিও প্রতি আসনের জন্য সর্বোচ্চ ₹৪০ লক্ষ খরচের সীমা রয়েছে, তথাপি নির্বাচিত বিধায়কদের ৪৫% বলেছেন তারা এর অর্ধেকেরও কম খরচ করেছেন।
দিল্লি বিধানসভার ইতিহাসে নতুন অধ্যায় রচনা করে, বিজেপি ৭০টি আসনের মধ্যে ৪৮টি জিতে বিপুল জয় পেয়েছে। ২০২০-তে তাদের আসন সংখ্যা ছিল মাত্র ৮। এবারের নির্বাচনে ৭.১ শতাংশ ভোট শেয়ার বৃদ্ধি ঘটেছে।
মঙ্গোলপুরী এবং জঙ্গপুরা-র মতো আপ প্রভাবিত আসনেও বিজেপি জয়ী হয়েছে, যা তাদের প্রভাব বিস্তারের ইঙ্গিত দেয়।
দিল্লিতে ২০১৫ সাল থেকে শাসনকারী আম আদমি পার্টি (আপ) ২০২৫ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বড় ধাক্কা খেয়েছে। দলটি এবারে মাত্র ২২টি আসনে জয়লাভ করতে পেরেছে, যেখানে তাদের ভোট শেয়ার কমেছে ১০ শতাংশ। সবচেয়ে প্রতীকী এবং তাৎপর্যপূর্ণ পরাজয় ঘটেছে দলের মুখ্য নেতা ও তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের, যিনি নিজ আসন নিউ দিল্লি থেকে পরাজিত হয়েছেন। তাঁকে হারিয়েছেন বিজেপির প্রার্থী রেখা গুপ্তা, যিনি নির্বাচনের পর দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন।
বিজেপির এই ঐতিহাসিক জয়ের পেছনে মূল ভূমিকা নিয়েছে জনগণের মধ্যে আপ সরকারের প্রতি ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ। আপ দীর্ঘদিন ধরে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছিল, তার বাস্তবায়ন না হওয়ায় জনমনে হতাশা তৈরি হয়েছে। বিশেষত যমুনা নদীর ক্রমাগত দূষণ, রাজধানীর বায়ু মানের অবনতি, জল সংকট এবং বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ—যেমন বিতর্কিত মদনীতি এবং মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন সংস্কারে অপ্রয়োজনে বিপুল অর্থ ব্যয়—এসব ইস্যু আপ-এর ভাবমূর্তিকে বড় ধাক্কা দেয়। এই পরিস্থিতিতে বিজেপি জনমানসের ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে সুনির্দিষ্ট প্রচার কৌশলের মাধ্যমে ভোটারদের আস্থা অর্জন করে এবং ২৭ বছর পর দিল্লির ক্ষমতায় ফিরে আসে।
এই নির্বাচনের ফলাফলে স্পষ্ট, প্রচার খরচে আগ্রাসী কৌশল ও জনগণের বাস্তব অভিজ্ঞতার মধ্যে সংযোগ ঘটিয়ে বিজেপি দিল্লির রাজনীতিতে নতুন করে নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছে।

