বিশাখাপত্তনম, ৩০ এপ্রিল : অন্ধ্রপ্রদেশের বিখ্যাত শ্রী বরাহা লক্ষ্মী নরসিংহ স্বামী মন্দিরে আজ ভোররাতে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় অন্তত ৮ জন ভক্তের মৃত্যু হয়েছে এবং আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন। ‘চন্দনোৎসব’ বার্ষিক উৎসব চলাকালীন ভোররাতে হঠাৎ একটি দেওয়াল ধসে পড়ে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
ঘটনাটি ঘটে ‘নিজরূপ দর্শন’-এর জন্য নির্ধারিত ৩০০ টাকার কিউ লাইনে, যেখানে শত শত ভক্ত জড়ো হয়েছিলেন। স্থানীয় প্রশাসনের মতে, গভীর রাতে প্রবল বৃষ্টির কারণে মাত্র ২০ দিন আগে নির্মিত দেওয়ালটি ধসে পড়ে। দেওয়াল ধসের সময় রাত প্রায় ২:৩০ থেকে ৩:৩০ টার মধ্যে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত মন্দিরের উত্তরাধিকারী ট্রাস্টি অশোক গজপতি রাজু তখন দেবতাকে ঐতিহ্যগত রীতি অনুযায়ী রেশমের বস্ত্র দান করছিলেন। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটে যায় এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা।
মৃত ৮ জনের মধ্যে ৫ জন পুরুষ ও ৩ জন নারী রয়েছেন। ৭ জন ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান, একজন পরে হাসপাতালে মারা যান। কিং জর্জ হাসপাতালের সুপারিন্টেনডেন্ট কে. শিবানন্দ জানান, এ পর্যন্ত তিনজনকে আধার কার্ডের মাধ্যমে শনাক্ত করা গেছে। পরবর্তীতে অবশ্য বাকিদের মধ্যে সাতজনকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। সবচেয়ে হৃদয়বিদারক ঘটনা হলো, নিহতদের মধ্যে রয়েছেন এক প্রযুক্তি কর্মী দম্পতি। পিল্লা উমা মহেশ্বর রাও (৩০) এবং পিল্লা শৈলজা (২৬), এই দম্পতি হায়দরাবাদে এইচসিএল ও ইনফোসিস-এ কর্মরত ছিলেন এবং সম্প্রতি বাড়ি থেকে কাজ করছিলেন। তাঁদের বাড়ি বিশাখাপত্তনম জেলার মাধুরাওয়াড়ার চন্দ্রপালেম গ্রামে। এই দম্পতি তিন বছর আগে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। মর্মান্তিকভাবে, শৈলজার মা ভেঙ্কট রত্না (৪৫) এবং কাকিমা জি. মহালক্ষ্মী (৬৫)-ও এই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। নিহত অন্যদের মধ্যে রয়েছেন দুর্গাস্বামী নাইডু (৩৩) এবং কে. মনিকান্ত (২৮), তাঁরা উভয়েই পূর্ব গোদাবরী জেলার বাসিন্দা। এছাড়াও নিহতদের তালিকায় আছেন ইদলা ভেঙ্কট রাও (৪৫), তিনি বিশাখাপত্তনম জেলার বাসিন্দা। অপর একজনকে এখনও শনাক্ত করা যায়নি
মুখ্যমন্ত্রী এন. চন্দ্রবাবু নাইডু ইতিমধ্যে নিহতদের পরিবারকে ২৫ লক্ষ টাকা এবং আহতদের ৩ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা করেছেন। পাশাপাশি, প্রয়াতদের পরিবারের একজন উপযুক্ত সদস্যকে আউটসোর্সিং চাকরি দেওয়া হবে এনডোয়মেন্টস দপ্তরের মাধ্যমে। এদিকে, এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে এবং প্রশাসনের তরফ থেকে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে উপযুক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পরপরই এনডিআরএফ, এসডিআরএফ দমকল এবং পুলিশ বাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। বিশাখাপত্তনমের জেলা কালেক্টর এম. এন. হরেন্দ্র প্রসাদ, পুলিশ কমিশনার ডঃ শঙ্ক ব্রত বাগচী ও গৃহমন্ত্রী ভাঙ্গালাপুড়ি অনীতা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন।
মুখ্যমন্ত্রী এন. চন্দ্রবাবু নাইডু এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করে জরুরি ভিত্তিতে একটি টেলিকনফারেন্স করেন। তিনি নির্দেশ দেন, আহতদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। একইসাথে তিনি একটি তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক্স-এ শোক প্রকাশ করে নিহতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা ও আহতদের ৫০,০০০ টাকা করে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় ত্রাণ তহবিল থেকে আর্থিক সহায়তার কথা জানান।
এদিকে, উপ-মুখ্যমন্ত্রী পবন কল্যাণ ঘটনাকে “চরম দুর্ভাগ্যজনক” বলে উল্লেখ করে আহতদের চিকিৎসায় যথাযথ তদারকি করার নির্দেশ দেন। রাজস্বমন্ত্রী অনাগানি সত্য প্রসাদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, সরকার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে আছে। এনডোয়মেন্টস মন্ত্রী অনাম রমণারায়ণ রেড্ডি জানান, ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু হয়েছে।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদ দাবি করেছে, জেলা কালেক্টর ও উত্সব কমিটির প্রধান রামচন্দ্র মোহন এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। ভিএইচপি-র মুখপাত্র পুড়িপেদ্দি শর্মা অভিযোগ করেন, “ভিআইপি নিরাপত্তার পেছনে সাধারণ ভক্তদের নিরাপত্তা অবহেলা করা হয়েছে। একজন ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া ভক্ত বলেন, “দেওয়াল ধসের মাত্র ৩ থেকে ৫ মিনিট আগেই আমি ওই জায়গা পার হয়েছিলাম। হঠাৎই এক বিকট শব্দে দেওয়াল ভেঙে পড়ে। তা ছিল ভয়ানক অভিজ্ঞতা।”
অন্ধ্রপ্রদেশের রাজ্যপাল এস. আব্দুল নাজির ও তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী এ. রেভন্ত রেড্ডি উভয়েই শোক প্রকাশ করে আহতদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা সুনিশ্চিত করার আহ্বান জানান। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওয়াই.এস. জগন মোহন রেড্ডি শোক প্রকাশ করে সরকারকে পূর্ণ সহায়তার নির্দেশ দেন। প্রশাসনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, দুর্ঘটনার তদন্ত চলছে এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা রোধে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে।

