“উন্নত ভারতের জন্য প্রযুক্তিনির্ভর সহযোগিতার নব সূচনা”, ভারত মণ্ডপমে ‘যুগ্ম ইনোভেশন কনক্লেভ’-এ দাবি প্রধানমন্ত্রীর

নয়াদিল্লি, ২৯ এপ্রিল : প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ নয়াদিল্লির ভারত মণ্ডপম-এ অনুষ্ঠিত ‘যুগ্ম ইনোভেশন কনক্লেভ’ (Yugm Innovation Conclave)-এ অংশ নিয়ে জাতির ভবিষ্যতের জন্য প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা, গবেষণা ও উদ্ভাবনের সমন্বিত প্রয়াসের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

তিনি বলেন, ‘যুগ্ম’ শুধুমাত্র একটি সম্মেলন নয়, বরং এটি সরকার, শিক্ষাজগৎ এবং বিজ্ঞান-গবেষণার সকল স্তরকে একত্রিত করে একটি শক্তিশালী মঞ্চ গড়ে তুলেছে**, যা উন্নত ভারত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। প্রধানমন্ত্রীর মতে, এই সম্মেলনের মাধ্যমে ভারতের গভীর প্রযুক্তি (Deep-Tech) ও উদ্ভাবনী ক্ষমতার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

প্রধানমন্ত্রী আইআইটি কানপুর এবং আইআইটি বোম্বে-তে এআই ও বায়ো-সায়েন্স ভিত্তিক সুপারহাব-এর উদ্বোধনের কথা জানান এবং ওয়াধওয়ানি ইনোভেশন নেটওয়ার্ক (WIN) চালুর উল্লেখ করে বলেন, এটি ন্যাশনাল রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যৌথভাবে গবেষণার পরিসরকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। তিনি ডঃ রমেশ ওয়াধওয়ানি ও তার ফাউন্ডেশনকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, “শিক্ষা ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রের প্রতি তাঁদের নিষ্ঠা আমাদের যুবশক্তিকে সঠিক দিশা দেবে।”

প্রযুক্তিকে জনসেবার উপায় হিসেবে ব্যবহারের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সত্যিকারের জীবন সেবা ও ত্যাগে উৎসর্গীত হয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিরও এমনই ভূমিকা হওয়া উচিত।” তিনি রমেশ ওয়াধওয়ানির সংগ্রামী জীবনের কথা স্মরণ করে বলেন, “বিভাজনের পর উদ্বাস্তু জীবন থেকে পোলিও আক্রান্ত অবস্থায় উঠে এসে, আজ তিনি বিশ্বখ্যাত উদ্যোক্তা – এটি সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক।”

প্রধানমন্ত্রী শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি (NEP), ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম যেমন পিএম-ই-বিদ্যা, DIKSHA এবং ‘ওয়ান নেশন, ওয়ান ডিজিটাল এডুকেশন ইনফ্রাস্ট্রাকচার’ গঠনের উল্লেখ করে বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হলো ছাত্রদের বহুভাষিক, আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষার সুযোগ প্রদান।”

তিনি গবেষণার পরিকাঠামোকে মজবুত করার কথা জানিয়ে বলেন, “২০১৩-১৪ সালে যেখানে গবেষণার জন্য ₹৬০,০০০ কোটি বরাদ্দ ছিল, তা এখন বৃদ্ধি পেয়ে ₹১.২৫ লক্ষ কোটিরও বেশি হয়েছে। প্রায় ৬০০০ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গবেষণা সেল গঠিত হয়েছে।”

মোদী হাইপারলুপ, ন্যানো প্রযুক্তি, ‘ব্রেইন অন এ চিপ’, দেশীয় এমআরআই মেশিন ইত্যাদি উদ্ভাবনের উল্লেখ করে বলেন, “ভারতীয় ক্যাম্পাসগুলো এখন উদ্ভাবনের কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছে।” তিনি বলেন, “২০১৪ সালে ৯টি ভারতীয় প্রতিষ্ঠান QS র‌্যাংকিং-এ ছিল, এখন তা ৪৬-এ পৌঁছেছে। ২০০০ আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯০টিরও বেশি ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এখন উচ্চ শিক্ষা ইমপ্যাক্ট র‍্যাংকিং-এ তালিকাভুক্ত।”

আন্তর্জাতিকীকরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আইআইটি দিল্লি, আইআইটি মাদ্রাজ ইতিমধ্যে আবুধাবি ও তাঞ্জানিয়ায় তাদের ক্যাম্পাস চালু করেছে এবং আইআইএম আহমেদাবাদ শীঘ্রই দুবাইতে ক্যাম্পাস চালু করতে যাচ্ছে। একইসঙ্গে বিশ্বের প্রথম সারির অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ও ভারতে ক্যাম্পাস স্থাপন করছে।”

তিনি অটল টিঙ্কারিং ল্যাব, পিএম-বিদ্যা লক্ষ্মী প্রকল্প, ইন্টার্নশিপ সেল এবং এআই-ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে বলেন, “প্রতিভা, প্রকৃতি এবং প্রযুক্তির সংমিশ্রণই ভারতকে বিশ্বমঞ্চে শীর্ষে পৌঁছে দেবে।” প্রধানমন্ত্রী মোদী আগামী ২৫ বছরে উন্নত ভারত গঠনের লক্ষ্য নিয়ে বলেন, “চিন্তা থেকে প্রোটোটাইপ এবং তারপর বাজার পর্যন্ত পৌঁছানোর গতি যত দ্রুত হবে, তত দ্রুত দেশের উন্নয়ন হবে।” তিনি গবেষকদের আর্থিক ও নীতিগত সহযোগিতার জন্য সরকার ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ গ্রহণ করছে বলে জানান।

এআই, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, স্পেস টেকনোলজি ও মেডিটেক-এর ক্ষেত্রে ভারতের অগ্রগতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ভারত এখন এআই-এর উৎপাদন এবং ব্যবহার – উভয়ক্ষেত্রেই নেতৃত্বে পৌঁছতে চলেছে।” তিনি মেক এআই ইন ইন্ডিয়া ও মেক এআই ওয়ার্ক ফর ইন্ডিয়া এই দুই লক্ষ্যকে সামনে রেখে ভারত-এআই মিশন এবং এআই এক্সিলেন্স সেন্টার্স গঠনের কথাও বলেন।

সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ওয়াধওয়ানি ফাউন্ডেশন ও শিক্ষা মন্ত্রকের যৌথ উদ্যোগ, যুগ্ম (YUGM) আগামী দিনে ভারতের উদ্ভাবনী দৃশ্যপটকে রূপান্তর করবে। এই প্রচেষ্টাগুলির জন্য আমি তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।” অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ডঃ জিতেন্দ্র সিং, সাংসদ জয়ন্ত চৌধুরী ও ডঃ সুকান্ত মজুমদার সহ অন্যান্য বিশিষ্টজনেরা।

পটভূমি:
‘যুগ্ম’ (যার অর্থ “সংগম”) হল একটি অনন্য কৌশলগত কনক্লেভ, যা প্রথমবারের মতো সরকার, শিক্ষাজগত, শিল্প ও উদ্ভাবনী ব্যবস্থার বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের এক মঞ্চে নিয়ে এসেছে। এই কনক্লেভটি ওয়াধওয়ানি ফাউন্ডেশন ও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগে প্রায় ১৪০০ কোটি টাকার একটি সহযোগী প্রকল্পের মাধ্যমে পরিচালিত, যা ভারতের উদ্ভাবনী যাত্রায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আত্মনির্ভর ও উদ্ভাবনভিত্তিক ভারতের দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সঙ্গতি রেখে, এই সম্মেলনে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের সূচনা করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে: আইআইটি কানপুরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ইন্টেলিজেন্ট সিস্টেমস নিয়ে সুপারহাব, আইআইটি বোম্বে-তে বায়োসায়েন্স, বায়োটেকনোলজি, স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানে কেন্দ্রীভূত সুপারহাব, শীর্ষ গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ‘ওয়াধওয়ানি ইনোভেশন নেটওয়ার্ক’ (WIN) কেন্দ্র স্থাপন, যা গবেষণার বাণিজ্যিকীকরণে সহায়তা করবে, ন্যাশনাল রিসার্চ ফাউন্ডেশন (ANRF)-এর সঙ্গে অংশীদারিত্ব, গবেষণা ও উদ্ভাবনকে বেগবান করার জন্য।

সম্মেলনের প্রধান আকর্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে উচ্চস্তরের গোলটেবিল বৈঠক, প্যানেল আলোচনা, যেখানে সরকারি কর্মকর্তা, শিল্পজগতের শীর্ষস্থানীয়রা এবং শিক্ষাবিদরা একত্র হবেন। গবেষণাকে বাস্তবায়নের পথে দ্রুত এগিয়ে নিতে কার্যকর আলোচনা হবে, এবং সারা দেশের অত্যাধুনিক ‘ডিপ-টেক স্টার্টআপ’-গুলির প্রদর্শনীও থাকবে। এছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রের জন্য বিশেষ নেটওয়ার্কিং সুযোগও তৈরি করা হয়েছে, যা সহযোগিতা ও অংশীদারিত্বকে আরও মজবুত করবে।

এই কনক্লেভের মূল লক্ষ্য হল: ভারতের উদ্ভাবনী ব্যবস্থায় ব্যাপক বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত করা, গবেষণা থেকে বাজারজাতকরণ পর্যন্ত প্রযুক্তিগত রূপান্তরকে দ্রুততর করা, শিক্ষা, শিল্প ও সরকারের মধ্যে অংশীদারিত্বকে মজবুত করা, ANRF ও AICTE-এর মত জাতীয় উদ্ভাবনী উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, সকল প্রতিষ্ঠানে উদ্ভাবনের সুলভ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা, ‘উন্নত ভারত@২০৪৭’ লক্ষ্যপূরণে উদ্ভাবনের মাধ্যমে জাতীয় অগ্রগতি সাধন করা

‘যুগ্ম’ কনক্লেভ ভারতকে একটি উদ্ভাবন-নির্ভর অর্থনীতিতে রূপান্তর করার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।