আগরতলা, ১৮ মার্চ: পুস্পবন্ত প্রাসাদে তাজ হোটেল বানানোর ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানালো আমরা বাঙালি দল। এদিন এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে আমরা বাঙালি দল। পাশাপাশি রাজ্য সরকার ও তিপ্রা মথা দলের ভূমিকতেও তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, সম্প্রতি তিপ্রা মথাকে খুশি করার জন্য এডিসিকে ২৫৮ কোটি টাকা দেওয়া হবে জনজাতিদের উন্নয়নে ও তৎসঙ্গে ২০০ তিপ্রাসাকে তাজ হোটেলের মধ্যে চাকরি দেওয়া হবে এই ভিত্তিতে রাজ্য সরকার ও টাটা গ্ৰুপের সাথে মৌ স্বাক্ষরিত হয় মহারাজা বীরেন্দ্র কিশোর মাণিক্য মিউজিয়াম এন্ড কালচারাল সেন্টারকে তাজ হোটেল গ্ৰুপের হাতে তুলে দিয়েছে একটি ফাইভ স্টার হোটেল বানানোর জন্য।
রাজ্যের কৃষ্টি সাংস্কৃতিক বিসর্জন দিয়ে পাহাড়ী বাঙালীদের আবেগ জড়িত মাণিক্য রাজাদের অতিথিশালাকে ধ্বংস করে তাজ হোটেল বানানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। অথচ এর সামনেই আছে আন্তর্জাতিকমানের একটি হোটেল। সরকার হোটেল বানাবে রাজ্যের উন্নয়নে এতো ভালো কথা। অন্যত্র জায়গা পছন্দ করে তাজ হোটেল বানানোর জন্য চেষ্টা করতে পারতো। কারণ এই পুস্পবন্তের সাথে যেমন মাণিক্য রাজাদের স্মৃতি জড়িয়ে আছে তেমনি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আবেগও জড়িয়ে আছে। যার আরেকটি নাম ছিল কুঞ্জবন প্রাসাদ নামে পরিচিত। এটি ছিল মাণিক্য রাজাদের অতিথি শালা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শেষ বারের মতো ১৯২৬ সালে ত্রিপুরা রাজপরিবারের আমন্ত্রণে আসেন তখন মাণিক্য রাজাদের এই অতিথিশালাতেই কবি ছিলেন। আর তখনই বীরেন্দ্র কিশোর মাণিক্যের অনুরোধে উজ্জয়ন্ত প্রাসাদের নামের সাথে মিল রেখে কুঞ্জবন প্রাসাদের নাম রাখেন পুস্পবন্ত প্রাসাদ। এই প্রাসাদটি একশত বছরের পুরনো ঐতিহ্য।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ১৯৪১ সালের মে মাসে মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মাণিক্য বাহাদুর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সামনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮০ তম জন্মদিন পালন করেছিলেন। এখানে সুরক্ষিত আছে রাজ পরিবারের অনেক পুরনো স্মৃতি। যা ত্রিপুরা রাজ্যের গর্ব। ১৯৪৯ সালে ত্রিপুরা রাজ্য ভারতীয় ইউনিয়নের অন্তর্গত হওয়ার পর ৪/৩১ একর জায়গার ওপর নির্মিত এই প্রাসাদটি প্রধান কমিশনারের বাংলোতে পরিণত হয়। পরবর্তী সময়ে ত্রিপুরা পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা পেলে এই পুস্ত্রবন্ত হয়ে উঠে রাজভবন এবং ২০১৮ সাল পর্যন্ত এখান থেকেই রাজভবনের কার্যক্রম চলতো। এবং এর দক্ষিণ দিকের অংশে বাম আমলে রবীন্দ্র কানন গড়ে তোলা হয়। রাজভবন চলে যাওয়ার পর ১৪ই অক্টোবর ২০২২ সালে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রোপদী মুর্মু পুস্পবন্ত প্রাসাদটিকে উত্তর পূর্বাঞ্চলের কৃষ্টি সংস্কৃতি ধরে রাখার জন্য এটিকে ডিজিটাল জাদুঘর হিসেবে উদ্বোধন করেন। এর নামকরণ করা হয় প্রাসাদটির নির্মাতাকে সন্মান জানিয়ে মহারাজা বীরেন্দ্র কিশোর মাণিক্য মিউজিয়াম এন্ড কালচারাল সেন্টার নামকরণ করা হয়েছে।
তাই রাজ্যের এমন একটি প্রাচীন ঐতিহ্য যা জাতি জনজাতিদের মিলনায়তন ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত প্রতিষ্টানকে ধ্বংস করে তাজ হোটেল বানানোর তীব্র বিরোধিতা করেছে আমরা বাঙালি দল। তাজ হোটেল শহরের পাশ্ববর্তীস্থানে বানিয়ে রাজ্যের মান উন্নয়ন করুক সরকার এমনটাই দাবি দলের। রাজ্যের উন্নয়নে ও জনগণের উন্নয়নে আমরা বাঙালী দল সব সময় সহযোগিতা করবে বলেও জানানো হয়েছে বিবৃতিতে। যেই বুবাগ্ৰা পুস্পবন্ত প্রাসাদে তাজ হোটেল বানানোর ব্যাপারে জনজাতি অংশের লোকদের নিয়ে রাজ্যজুড়ে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন যে এখানে হোটেল বানালে জনজাতি অংশের লোকদের কৃষ্টি সংস্কৃতি ঐতিহ্য ধ্বংস হয়ে যাবে এই ভেবে আন্দোলন শুরু করেন। অথচ এখন দেখছি নিজের ও এডিসির স্বার্থ চরিতার্থ হওয়াতে তিনি টাটা গ্ৰুপের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে উঠেন। এই ঘটনায় সরকারের তীব্র বিরোধিতা করেছে আমরা বাঙালী দল। সরকার কাছে আমরা বাঙালী দল দাবি জানিয়েছেন, রাজ্যবাসীর ভবিষ্যতের কথা ভেবেই যেন সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে সরকার, তার আবেদন করেন আমরা বাঙালি দলের নেতৃত্বরা।