‘ঐক্য উৎসব-এক কণ্ঠ, এক রাষ্ট্র’ উৎসবে অমিত শাহর বার্তা

নয়াদিল্লি, ২১ ফেব্রুয়ারি (হি.স.): “উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য ঐক্য শব্দটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। স্বাধীনতার বহু বছর পরেও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এক বিস্তৃত অঞ্চল বাস্তবিক এবং আবেগগত দিক থেকে দিল্লির থেকে দূরে থেকে গেছিল।”

শুক্রবার নয়াদিল্লিতে অসম রাইফেলস আয়োজিত ‘ঐক্য উৎসব-এক কণ্ঠ, এক রাষ্ট্র’ উৎসবে এ কথা বলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও সমবায়মন্ত্রী অমিত শাহ। অসম রাইফেলস-এর মহানির্দেশক সহ অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

অমিত শাহ বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে দিল্লির বাস্তবিক ও আবেগগত ব্যবধানকে যোগাযোগ সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে দূর করেছেন। আজ উত্তর-পূর্বাঞ্চল সমগ্র ভারতের সঙ্গে যেমন জড়িত, তেমনি সমগ্র ভারতও জড়িত উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে। মোদী সরকার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য ৩-৪ গুণ বেশি বাজেট সংস্থান বৃদ্ধি করেছেন। ২০২৭-এর মধ্যে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৮টি রাজ্য দিল্লির সঙ্গে রেল ও বিমান পথে যু্ক্ত হবে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদী দেশ জুড়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে অষ্টলক্ষ্মী হিসেবে জনপ্রিয় করে তুলেছেন এবং এই এলাকার ৮টি রাজ্যই প্রতিটি ক্ষেত্রে দেশকে সমৃদ্ধ করতে সক্ষম। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, প্রতিরক্ষা, ক্রীড়া এবং গবেষণা ও উন্নয়ন সমস্ত ক্ষেত্রেই উত্তর-পূর্বাঞ্চলের যুব সম্প্রদায়ের জন্য প্রভূত সম্ভাবনা রয়েছে। মোদী সরকার পর্যটন থেকে প্রযুক্তি, ক্রীড়া থেকে মহাকাশ, কৃষি থেকে উদ্যোগ এবং ব্যাঙ্কিং থেকে ব্যবসা সমস্ত ক্ষেত্রেই উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য অসংখ্য সম্ভাবনার পথ খুলে দিয়েছে।

অমিত শাহ বলেন, ২২০টির বেশি জাতিগোষ্ঠী এবং ১৬০টিরও বেশি উপজাতির উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বাস। ২০০টির ও বেশি উপ-ভাষা ও ভাষায় এখানে কথা বলা হয়। ৫০টিরও বেশি অনন্য উৎসবের এখানে আয়োজন হয় এবং ৩০টির ও বেশি প্রথাগত নৃত্য এবং ১০০রও বেশি রন্ধন প্রণালী রয়েছে এই এলাকায়। তিনি বলেন, সমগ্র ভারতের জন্যই তা এক সমৃদ্ধ ঐতিহ্যশালী সম্পদ এবং নিঃসন্দেহে গর্বের। তিনি বলেন উত্তর-পূর্বাঞ্চল ছাড়া ভারত এবং ভারত ছাড়া উত্তর-পূর্বাঞ্চল অসম্পূর্ণ।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও সমবায় মন্ত্রী বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উৎসবের বিষয় ‘এক কণ্ঠ এক রাষ্ট্র’। আমাদের দেশ নানা ভাষা, সংস্কৃতি, রন্ধন প্রণালী এবং পোশাক-পরিচ্ছদের এক অপরূপ মিশ্রণ। বৈচিত্র্যের মধ্যে এই ঐক্যই আমাদের দেশের বিশেষত্ব ও বড় শক্তি। ৫ দিনের ঐক্য উৎসবে দিল্লিতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সামগ্রিক ঐক্যকে তুলে ধরা হয়েছে।

অমিত শাহ বলেন, অসম রাইফেলস ভারতে সর্বপ্রাচীন আধা সামরিক শক্তি এবং এই শক্তি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বন্ধু হিসেবে চিহ্নিত। তিনি বলেন, আজকের অনুষ্ঠানের আয়োজনের মধ্যে দিয়ে অসম রাইফেলস উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ঐক্য এবং সাংস্কৃতি সমগ্র দেশ তথা বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে।

অমিত শাহ বলেন, ২১২টি দল এবং ১৫০০ ছাত্র এই অনুষ্ঠানে ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে। এবং ১৫০ জনেরও বেশি ছাত্র অংশ নিয়েছে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। বেশিরভাগ পুরস্কারই জিতেছে মণিপুর। যার থেকে বোঝা যায়, মণিপুরে ক্রীড়ার গুরুত্ব।

অমিতবাবু বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ক্রীড়ার জনপ্রিয়তার কথা মাথায় রেখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশের প্রথম ক্রীড়া বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলেছেন মণিপুরে। তিনি বলেন, ক্রীড়া সকলের জন্য এবং ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শনের- এই কথাই এখন ভারতের ক্রীড়া উন্নয়নের ফর্মুলা হয়ে উঠেছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আস্থা প্রকাশ করে বলেন, ২০৩৬-এ ভারত ক্রীড়া অলিম্পিকের আয়োজন করবে এবং এই সাফল্য অর্জনে দেশকে প্রথম ১০-এর মধ্যে জায়গা করে দিতে উত্তর-পূর্বাঞ্চল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিগত ১০ বছরে বিশেষত গত ৫ বছরে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেছে। তিনি বলেন, হিংসাশ্রয়ী ঘটনা এবং সুরক্ষা কর্মীদের প্রাণহানির সংখ্যা ৭০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। অনুরূপভাবে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জনসাধারণের প্রাণহানিও ৮৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। হিংসাশ্রয়ী ঘটনা হ্রাস পাওয়ার মধ্যে দিয়ে বোঝা যায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এখন ক্রমাগত শান্তির পথবিন্যাস হচ্ছে এবং বিকাশের এক নব অধ্যায় ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন শুরু হয়েছে।

অমিত শাহ বলেন, ২০১৪ সাল থেকে ১০,৫০০-রও বেশি জঙ্গি উত্তর-পূর্বাঞ্চলে তাদের অস্ত্র সমর্পণ করেছে এবং ২০১৯ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে ১২টি শান্তি চুক্তি এই এলাকায় স্বাক্ষরিত হয়েছে। দশকের পর দশক ধরে অনেক বিবাদ ঘটে চলতে দেখা যেত, কিন্তু মোদী সরকার দু’ কদম এগিয়ে গেছেন এবং যুব সম্প্রদায়কে বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন তাদের জন্য অনেক সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত। যারা হিংসায় প্রশ্রয় দিচ্ছে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেই যুব সম্প্রদায়কে অস্ত্র সমর্পণ করে জীবনের মূল স্রোতে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও সমবায় মন্ত্রী বলেন, দেশের এমন কোনও জায়গা নেই, উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে যারা নিজের বলে ভাবেনা এবং এই এলাকার মানুষের জন্য সর্বত্রই ভালোবাসা ছড়িয়ে রয়েছে। দেশের প্রত্যেকটি রাজ্যের মানুষের হৃদয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য বিশেষ জায়গা রয়েছে। তাই উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রত্যেকটি রাজ্যকে দেশের সামগ্রিক বিকাশে সক্রিয়ভাবে যোগ দিতে এগিয়ে আসতে হবে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে জন্য দরকার শান্তি ও উন্নয়ন এবং ভারতের অভিন্ন অঙ্গ হিসেবে তারা কাজ করুক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *