নয়াদিল্লি, ২১ ফেব্রুয়ারী : প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায়, ভারতের কৃষি রপ্তানি অভূতপূর্বভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, অনেক পণ্য প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করেছে। এই ঐতিহাসিক সম্প্রসারণ বাণিজ্যের জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি তা, কৃষকদের ক্ষমতায়ন, গ্রামীণ আয় বৃদ্ধি এবং ভারতের সমৃদ্ধ কৃষি ঐতিহ্যকে বিশ্ব মানচিত্রে স্থান করে দেবার জন্যও বিশেষ গুরুত্ব বাহন করেছে। বিদেশি ফল থেকে শুরু করে ঐতিহ্যবাহী প্রধান পণ্য পর্যন্ত এখন রফতানি হচ্ছে। লক্ষ্যণীয় যে, মোদী সরকারের আত্মনির্ভর ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি ভারতীয় কৃষকদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করছে।
প্রথমবারের জন্য রপ্তানি করতে পারা উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কৃষি পণ্যের কথা তুলে ধরা হল:
ভারতীয় বেদানা বা ডালিমের সমুদ্র পথে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি :
ভারতের কৃষি রপ্তানির ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসাবে, ভারত সমুদ্রপথে প্রথবারের মতো অস্ট্রেলিয়ায় যথাক্রমে প্রিমিয়াম সাঙ্গোলা এবং ভগওয়া ডালিমের প্রথম চালান পাঠিয়েছে। এই সাফল্য অস্ট্রেলিয়ায় ভারতের ফলের বাজারে প্রবেশাধিকার বাড়িয়েছে, যা আরও বেশি ভারতীয় পণ্যকে বিশ্ব সরবরাহ শৃঙ্খলে প্রবেশের পথ সুগম করেছে।
পোল্যান্ডে প্রথমবার রপ্তানি করা ফিগ জুস:
ভারতের অনন্য জিআই-ট্যাগযুক্ত পুরন্দর ডুমুর এখন ইউরোপের বাজারেও বেশ উদ্দীপনা তৈরি করছে। ২০২৪ সালে, মোদী সরকারের উদ্যোগে পুরন্দর ডুমুর থেকে তৈরি পানীয় থেকে প্রস্তুত ডুমুরের রস পোল্যান্ডে রপ্তানির ব্যবস্থা করা হয়। এর আগে ২০২২ সালে জার্মানিতেও এই পণ্য রপ্তানি করা হয়েছিল। পুরন্দর ডুমুর তার অনন্য স্বাদ এবং আকৃতির জন্য বিশেষ পরিচিত। এটি বিশ্ব মঞ্চে ভারতের অনন্য কৃষি-পণ্যের প্রচারের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্যও বটে।
প্রথমবার ড্রাগন ফল রপ্তানি হলো লন্ডন, বাহরাইনে :
ফল রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনার জন্য ভারত সরকারের প্রচেষ্টার অঙ্গ হিসাবে, ফাইবার এবং খনিজ গুনে সমৃদ্ধ ড্রাগন ফল, যা স্থানীয়ভাবে ‘কমলম’ নামে পরিচিত, ২০২১ সালে লন্ডন এবং বাহরাইনে রপ্তানি করা হয়। লন্ডনে রপ্তানি করা চালান গুজরাটের কচ্ছ অঞ্চলের কৃষকদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছিল, অন্যদিকে বাহরাইনে পাঠানো চালান পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুরের কৃষকদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছিল।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে টাটকা ডালিমের প্রথম পরীক্ষামূলক চালান:
২০২৩ সালে, ভারত বিমানের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডালিমের প্রথম পরীক্ষামূলক চালান রপ্তানি করে মার্কিন বাজারে তার উপস্থিতি সম্প্রসারণের দিকে একটি বড় পদক্ষেপ নিয়েছে। মহারাষ্ট্র থেকে ভগওয়া ডালিম রপ্তানির যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে এবং দেশ থেকে ফল রপ্তানির প্রায় ৫০ শতাংশ রাজ্যের সোলাপুর জেলা থেকে আসে।
অসমের ‘লেটেকু’ ফল দুবাইয়ে রপ্তানি:
উত্তর-পূর্বের জন্য একটি বড় উৎসাহের কাহিনী হিসেবে, ২০২১ সালে, অসমীয়া ভাষায় ‘লেটেকু’ নামে পরিচিত বার্মিজ আঙ্গুরের প্রথম চালান গুয়াহাটি থেকে দিল্লি হয়ে দুবাইতে পাঠানো হয়েছিল। এই রপ্তানি অসমের ফলকে বিদেশী পণ্যের বিশ্ব মানচিত্রে স্থান দিয়েছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলির সম্ভাবনার কথাও তা প্রমাণ করে।
ত্রিপুরা থেকে জার্মানি পর্যন্ত কাঁঠাল:
জার্মানি ২০২১ সালে ত্রিপুরার সুস্বাদু কাঁঠালের স্বাদ পেয়েছে কারণ সেবছর ত্রিপুরা থেকে প্রথমবারের মতো জার্মানিতে বিমান পথে টাটকা কাঁঠাল রপ্তানি করা হয়। আগরতলা থেকে এক মেট্রিক টন তাজা কাঁঠালের প্রথম চালান পাঠানো হয়। এটি উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিকে ভারতের কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য পণ্য রপ্তানি মানচিত্রে আনার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের প্রচেষ্টার প্রতিফলন।
প্রথমবার নাগাল্যান্ড থেকে লন্ডনে রাজা চিলি ‘রাজা লংকা’:
২০২১ সালে, উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে জিআই পণ্যের রপ্তানির ক্ষেত্রে একটি বড় উৎসাহের আকর হিসাবে, নাগাল্যান্ড থেকে ‘রাজা লংকা’, যা ‘কিং চিলি’ নামেও পরিচিত তার একটি চালান, , প্রথমবারের মতো গুয়াহাটি হয়ে লন্ডনে রপ্তানি করা হয়। এর পচনশীল প্রকৃতির কারণে, এই পণ্যটি রপ্তানি করা একটি চ্যালেঞ্জ ছিল, কিন্তু ভারত সফলভাবে তার বিমান পরিষেবা দেবার মাধ্যমে বিশেষ কৃষি-রপ্তানি পরিচালনার ক্ষেত্রে তার সক্ষমতাকে তুলে ধরে।
অসম থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম ‘লাল চাল’ র রপ্তানি:
২০২১ সালে, ভারতের চাল রপ্তানির সম্ভাবনাকে বড়রকমের উৎসাহ দেওয়ার জন্য, ‘লাল চাল’-এর প্রথম চালানটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়েছিল। এই লাল চাল অসমের বিখ্যাত পণ্য। কোনও রাসায়নিক সার ব্যবহার না করেই অসমের ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় লোহা সমৃদ্ধ ‘লাল চাল’ চাষ করা হয়। চালের এই জাতটি ‘বাও-ধান’ পরিচিত, যা অসমীয়া খাবারের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।
কেরল থেকে দুবাই ও শারজায় ভাজাকুলাম আনারসের প্রথম চালান:
২০২২ সালে, ভারত কেরলের এর্নাকুলামের ভাজাকুলাম থেকে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির দুবাই ও শারজাহ পর্যন্ত জিআই ট্যাগযুক্ত “ভাজাকুলাম আনারস”-এর প্রথম চালানটি রপ্তানি করে। এর ফলে আনারস চাষিরা আরও ভালো আয় করতে পারবেন এবং বিশ্ব বাজারে তাঁদের উৎপাদিত পণ্যের আরও বেশি প্রচার প্রসার পাবেন।