অব্যবস্থা? কী বলছেন মহাকুম্ভে আসা পুণ্যার্থীরা

অশোক সেনগুপ্ত

(প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভ থেকে)

প্রয়াগরাজ, ১৩ ফেব্রুয়ারি (হি.স.): তিনবার আগুন ধরেছে। পদপিষ্ট হয়ে হতাহত হয়েছে অনকে। এসব নিয়ে খবর হয়েছে দেশের সর্বত্র। বিভিন্ন ট্রেন নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরিতে চলছে। ট্রেনের শীতাতপ-নিয়ন্ত্রিত কামরাও যেন লোকাল ট্রেন। ভিতরে যাতায়তের পথ রুদ্ধ। ফলে যাত্রীদের বাথরুমে যাওয়া দায়। তবু সরকারের তরফে, রেলের তরফে ক্রমাগত বিভিন্ন পরিষেবার প্রশংসা করা হচ্ছে। বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে সাফল্যের বড় বড় বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে। বিজ্ঞাপনের সেই সব দাবি কতটা সত্যি?

সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাতে হাওড়া স্টেশন থেকে প্রয়াগরাজ রামবাগগামী ১২৩৩৩ বিভূতি এক্সপ্রেসের এসি বি১ কামরায় চা ওয়ালা, জল-বিক্রেতার দেখা মেলেনি। হয়তো ভিতরে ভিড়ের জন্য ঢুকতে পারছে না। উপচে পড়া ভিড়ে ব্যাগে রাখা খাবার বার করাও শক্ত। ট্রেনের অধিকাংশ কামরার ছবিটা এরকমই। মহাকুম্ভের ট্রেনযাত্রীদের এরকম পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়েছে। একই ছবি বৃহস্পতিবারের হাওড়ামুখী ফিরতি ট্রেনের।

এই বিভূতি এক্সপ্রেসেই প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভে এসেছেন জয়দীপ রায়। তিনি অবশ্য এসব সমস্যাকে অব্যবস্থা বলে মানতে রাজি নন। এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, “১৪৪ বছর অন্তর মহাকুম্ভ হয়। তাতে আসতে পেরে গর্ববোধ করছি। এই ট্রেনে যে সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হচ্ছি, সব ট্রেনেই যে এরকম হয়, তা তো নয়! এরকম একটা বড় সমাবেশে এরকম কিছু অসুবিধে হতেই পারে। সেটাকে ইস্যু করলে চলে না!”

বাগবাজারের গৌঢ়ীয় মঠের গৃহস্থ প্রভু রঞ্জন কুমার দাসের দীক্ষার ২৫ বছর হল ২০২৫-এ। স্ত্রী সুপর্ণা দীক্ষিতা ৯ বছর ধরে। স্বামী এবং মা-বাবার সঙ্গে এই ট্রেনেই এসেছেন মহাকুম্ভে। রঞ্জনের মন্তব্য, “আমার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা আছেন এস ফাইভ কামরায়। সেটির অবস্থা এতটা শোচনীয় নয়। আর মহাকুম্ভ মূলত সাধুদের জন্য। আমজনতা সবার জন্য নয়। মূলত সামাজিক মাধ্যমে মহাকুম্ভ নিয়ে ক্রমাগত পোস্ট হচ্ছে। সেটা দেখে দলে দলে লোক প্রয়াগমুখী হয়েছে। সরকার এই বিপুল পুণ্যার্থীদের সুব্যবস্থা করবে কীভাবে?

পশ্চিম মেদিনীপুরের ময়নার যোগদা সৎসঙ্গ বিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই আধ্যাত্মিকতার প্রতি আকর্ষণ তৈরি হয় রঞ্জনের। তিনি এই

প্রতিবেদককে বলেন, “মোট ৪২ দিন ধরে এই মহাকুম্ভ চলবে। এইরকম ভিড় হচ্ছে নির্দিষ্ট কটা পুণ্যদিনের আগে পরে। আপনি এই দিনগুলো ছেড়ে অন্য দিন আসুন! মোটেই এত অসুবিধা হবে না। কিন্তু আমাদের যেন এই পুণ্যদিনে স্নান করতে হবে! পাপ কি গায়ের ময়লা যে পুণ্যদিনে সঙ্গমের জলে স্নান করলাম আর সব পাপ দূর হয়ে গেল? আমরা নিজেরাই কি এই তথাকথিত অব্যবস্থার জন্য দায়ী নই?”

গঙ্গা-যমুনার মিলনস্থলের কাছে যে বিস্তীর্ণ জায়গায় তৈরি হয়েছে মহাকুম্ভের নগরী, তার ব্যাপকতা আর পরিকল্পনা অবশ্যই প্রশংসনীয়। কিন্তু আমজনতা হিসাবে মহাকুম্ভে আসতে গেলে প্রথম দরকার অসম্ভব মনের জোর। হাঁটার শক্তি। ভাল হোটেল বা দামি আশ্রয়শিবিরে না থাকলে বাথরুম-বিষয়ক অব্যবস্থার মুখোমুখি হতে হবে।

ব্যবসায়ী মিতালি সাহা তাঁর অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে বলেন, ”দুরকম ভাবে ভাবা যায়। যুক্তিবাদী মন যাঁদের, তাঁরা ভাববেন একরকম। ছ’জন থাকার উপযোগী বাড়িতে কোনও অনুষ্ঠানে বাড়তি সমাগমের কথা মাথায় রেখে অনুষ্ঠানবাড়ি ভাড়া করি। সেটা সম্ভব। কিন্তু মহাকুম্ভের সঙ্গমস্থলকে স্থানান্তরিত করতে পারি না। বহু কোটি মানুষের মিলনকেন্দ্র যত বড় করা প্রয়োজন, মহাকুম্ভের তত বড় অস্থায়ী নগরী করা সম্ভব নয়।

মিতালির মতে, মহাকুম্ভে যাঁরা আসবেন, সেই মানসিকতা নিয়ে আসতে হবে। আর পুণ্যার্থীদেরও নিজেদের দায়িত্ব আছে। পরিচ্ছন্নতাবোধ ও স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতন না হলে প্রশাসন অগুনতি শিবিরের বাথরুম এবং অন্যন্য পরিষেবা দেবে কী করে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *