আগরতলা, ১৫ জানুয়ারি : মনু নদীর পাড়ে বাংলাদেশ উঁচু বাঁধ নির্মাণ করছে। তাতে, কৈলাসহর বন্যার কবলে পড়বে। কারণ, ভারতের অংশের বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়াই জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ভারি বৃষ্টিপাত হলে কৈলাসহরে ভয়াবহ পরিণতির আশঙ্কায় আজ বিধানসভায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এদিন বিধানসভা অধিবেশনের শূন্যকালে কংগ্রেস বিধায়ক বীরজিৎ সিনহা এই বিষয়টি উত্থাপন করেন এবং মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। মন্ত্রী সুধাংশু দাসও এদিন কংগ্রেস বিধায়কের উত্থাপিত বিষয়ে সহমত পোষণ করেছেন এবং মুখ্যমন্ত্রীকে পদক্ষেপের আহবান জানিয়েছেন।
এদিন কংগ্রেস বিধায়ক বিধানসভায় বলেন, কৈলাসহরে মনু নদীর দুই পাড়ে দুইটি বাঁধ রয়েছে। ভারতের অংশের বাঁধ ৪০ বছর আগে নির্মিত হয়েছিল। বর্তমানে ওই বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। অন্যদিকে, প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই তাঁদের অংশে উঁচু বাঁধ নির্মাণ শুরু করেছে। তাতে, ভারি বৃষ্টিপাত হলে কৈলাসহরের ভয়াবহ পরিণতির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।
বীরজিৎ বাবু বলেন, কংগ্রেস জমানায় রাঙ্গাউটি গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে কৈলাসহর শহর পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার জমি বাঁধের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত বাঁধের অবকাঠামো উন্নয়নে কার্যকরি পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তাই, তিনি বাঁধের বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা করে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন।
এদিকে, ফটিকরায় কেন্দ্রের বিধায়ক তথা মন্ত্রী সুধাংশু দাসও এদিন বিধানসভায় কংগ্রেস বিধায়ক বীরজিৎ সিনহার উত্থাপিত সমস্যা সম্পর্কে সহমত পোষণ করেছেন। তিনি বলেন, ঊনকোটি জেলার প্রতিনিধি হিসেবে ওই সমস্যাটি সমাধানে দ্রুত বিবেচনা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক বলে মনে করি। তিনিও বাংলাদেশে উঁচু বাঁধের কারণে কৈলাসহরে ভয়াবহ বন্যা হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
সাথে তিনি যোগ করেন, ইন্দো-বাংলা উন্মুক্ত সীমান্ত আরেকটি গম্ভীর সমস্যা। ওই অংশ দিয়ে গবাদি পশু পাচার, চোরাচালান এবং অন্যান্য অবৈধ কার্যকলাপের জন্য বাংলাদেশী নাগরিকদের ভারতীয় ভূখন্ডে অনুপ্রবেশ সম্ভব হচ্ছে। তাই, আমি মুখ্যমন্ত্রীকে এই বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি, বলেন তিনি।
জবাবে মুখ্যমন্ত্রী এদিন বিধানসভাকে ওই সমস্যা সমাধানে সক্রিয় পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, মনু নদীর ওপারে বাঁধ নির্মাণ নিয়ে বিধায়ক বীরজিৎ সিনহা এবং মন্ত্রী সুধাংশু দাস উভয়েই যথার্থ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ত্রিপুরা সরকার ইতিমধ্যে রাজ্যের অভ্যন্তরে প্রবাহিত ১২টি নদী সহ জল সম্পদ পর্যালোচনা করেছে। ওই সমস্যার স্থায়ী সমাধানে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ছবি সহ বিস্তারিত প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এদিন নিশ্চিত করেছেন, এটি আন্তর্জাতিক বিষয় এবং ত্রিপুরা সরকার ওই সমস্যা সমাধানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বিধানসভা অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে কংগ্রেস বিধায়ক বীরজিৎ সিনহা বলেন, রাঙ্গাউটি, লাটিয়াপুরা(ইরানি থানার এলাকাধীন) এবং বৌলাপাশা(কৈলাশহর থানা) বর্ডার আউট পোস্টের বিএসএফ মনু নদীর ওপারে বাঁধ নির্মান না করার জন্য বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশের কাছে প্রতিবাদ জানিয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ তাতে কর্ণপাত করেনি। সাথে তিনি যোগ করেন, বর্তমানে বাংলাদেশে অস্থিরতার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ফলে, বাংলাদেশ থেকে ভারতে অনুপ্রবেশ বাড়ছে। অন্যদিকে, ওই বাঁধ নির্মাণে বাংলাদেশ জোর কদমে তত্পরতা চালিয়েছে।