BRAKING NEWS

দেশের অর্থনৈতিক বিকাশে অংসগঠিত শ্রমিকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে: মুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৫ অক্টোবর: ভারতীয় অর্থনীতিতে শ্রমশক্তির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হচ্ছে আমাদের দেশের প্রথাগত ঐতিহ্যবাহী কারিগর ও শিল্পীরা। দেশের অর্থনৈতিক বিকাশে অংসগঠিত শ্রমিকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আজ আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনের ১ নং প্রেক্ষাগৃহে পিএম-বিশ্বকর্মা প্রকল্পে প্রদর্শনী ও বাণিজ্যিক মেলার উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ মন্ত্রকের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতন রাম মাঁঝি। তিনদিনব্যাপী এই প্রদর্শনী ও বাণিজ্যিক মেলা আগামী ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে।

অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা বলেন, আমাদের দেশের সমস্ত প্রথাগত কারিগর ও শিল্পীদের সার্বিক উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পিএম-বিশ্বকর্মা প্রকল্পটি চালু করেছিলেন, যাদের জন্য আগে কখনও ভাবা হয়নি। কার্পেন্টার, রাজমিস্ত্রী, নাপিত, ধোপা, মালাকার, দর্জি, পুতুল ও খেলনা প্রস্তুতকারক সহ ১৮টি নির্বাচিত ট্রেডের সাথে যুক্ত ঐতিহ্যবাহী প্রথাগত কারিগর ও শিল্পীদের সুবিধা প্রদান করাই এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য। এই প্রকল্পে কারিগর শ্রেণীর মানুষদের দক্ষতা প্রশিক্ষণ, জামানতবিহীন ঋণ, আধুনিক যন্ত্রপাতি বা সরঞ্জাম, ডিজিটাল লেনদেনের জন্য ইনসেনটিভ প্রভৃতির সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। পিএম-বিশ্বকর্মা প্রকল্প রূপায়ণের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিভঙ্গি সবকা সাথ সবকা বিকাশ সবকা বিশ্বাস সবকা প্রয়াসই প্রতিফলিত হয়।

মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, রাজ্যের গ্রামীণ অর্থনীতির অবস্থা এখন অনেক উন্নত। আগের চেয়ে স্বসহায়ক গোষ্ঠীর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের মাধ্যমে স্বসহায়ক গোষ্ঠীগুলিকে সহায়তা করা হচ্ছে। পাশাপাশি ব্যাঙ্ক থেকেও স্বসহায়ক গোষ্ঠীগুলি ঋণের সুবিধা পাচ্ছেন। রাজ্যের প্রথাগত কারিগরি শিল্পীগণ তথা বিশ্বকর্মারা এই প্রকল্পের মাধ্যমে উপকৃত হবেন বলে মুখ্যমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।

অনুষ্ঠানে অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পদ্যোগ মন্ত্রকের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতন রাম মাঁঝি বলেন, পিএম-বিশ্বকর্মা প্রকল্পে দেশব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এই প্রকল্পের মুখ্য উদ্দেশ্য হলো সমাজের গরীব অংশের মানুষের রোজগার সৃষ্টি করা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগের মাধ্যমে স্বরোজগারের উপর বিশেষভাবে গুরুত্ব আরোপ করেছেন। এই দৃষ্টিভঙ্গিতেই প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ এলাকার জনগণ যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করতে পারেন তারজন্যই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

পিএম-বিশ্বকর্মা প্রকল্প রূপায়ণে ত্রিপুরা উত্তর পূর্বাঞ্চলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রগতি করেছে। উন্নয়ন কর্মসূচি রূপায়ণের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আত্মনির্ভর ও বিকশিত ভারত গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। পিএম-বিশ্বকর্মা প্রকল্প রূপায়ণের মধ্য দিয়ে আগামীদিনে আমাদের দেশের প্রথাগত ঐতিহ্যবাহী কারিগর ও শিল্পীদের জীবনমান আরও উন্নত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানে শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী সান্ত্বনা চাকমা বলেন, আত্মনির্ভর ভারত ও আত্মনির্ভর ত্রিপুরা গঠনে অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এজন্য পিএম- বিশ্বকর্মা প্রকল্পটি চালু করা হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ১৮টি প্রথাগত পেশার সাথে যুক্ত কারিগরদের জীবনমান আরও উন্নত হবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে বলেন, পিএম-বিশ্বকর্মা প্রকল্পটি আর্থিক ব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি রাজ্যের প্রথাগত শিল্পকলাকেও সংরক্ষণ করে রাখবে। রাজ্যে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫২ হাজার কারিগর পিএম- বিশ্বকর্মা পোর্টালে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করেছেন। যার মধ্যে প্রায় ১৮ হাজার কারিগরকে তৃতীয় স্তরের স্ক্রিনিং কমিটি দক্ষতা প্রশিক্ষণের জন্য অনুমোদন দিয়েছে। এরমধ্যে অনেকেই সফলভাবে প্রশিক্ষণ শেষ করেছেন। পিএম-বিশ্বকর্মা প্রকল্পে রাজ্যে ২৯টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে।

অনুষ্ঠানে এছাড়াও অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পদ্যোগ মন্ত্রকের অধীনস্ত পিএম- বিশ্বকর্মা প্রকল্পের অধিকর্তা মিলিন্দ রামটেক উপস্থিত ছিলেন। ধন্যবাদ সূচক বক্তব্য রাখেন শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের অধিকর্তা বিশ্বশ্রী বি। অনুষ্ঠানে রাজ্যে পিএম-বিশ্বকর্মা প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন বিভাগে পুরস্কার প্রদান করা হয়। পিএম-বিশ্বকর্মা প্রকল্প রূপায়ণে উৎকৃষ্ট কাজের জন্য সেরা জেলা হিসেবে উত্তর ত্রিপুরা, সেরা ভিলেজ কমিটি হিসেবে লেফুঙ্গা ব্লকের উত্তর দেবেন্দ্রনগর ভিলেজ কমিটি, সেরা নগরশাসিত সংস্থা হিসেবে জিরানীয়া নগর পঞ্চায়েত এবং বিশালগড় পুরপরিষদ, সেরা ব্যাঙ্ক হিসেবে পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক পুরস্কৃত হয়েছে। এছাড়াও অনুষ্ঠানে কয়েকজন সুবিধাভোগীকে ঋণের চেক ও প্রশিক্ষণের শংসাপত্র তুলে দেওয়া হয়।

এছাড়াও অনুষ্ঠানে সুবিধাভোগীদের মধ্যে যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম সম্বলিত টুল কিট প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে ঊনকোটি ব্র্যান্ডের ধূপকাঠিরও সূচনা হয়। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী সহ অতিথিগণ পুরস্কার প্রাপকদের হাতে পুরস্কারগুলি তুলে দেন। অনুষ্ঠানে পিএম-বিশ্বকর্মা যোজনা সম্পর্কিত একটি ভিডিও প্রদর্শিত হয়। অনুষ্ঠান শুরুর পূর্বে মুখ্যমন্ত্রী, অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ মন্ত্রকের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সহ অতিথিগণ অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণে প্রদর্শিত প্রদর্শনী স্টলগুলি ঘুরে দেখেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *