আগরতলা, ২৭ আগস্ট: রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবার সার্বিক উন্নয়নে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে বর্তমান সরকার। চিকিৎসার জন্য রোগীদের যাতে রাজ্যের বাইরে যেতে না হয় সেই দিশা নিয়ে হাসপাতালগুলিতে পরিকাঠামোর উন্নয়ন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে আগরতলা সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একাধিক সুপার স্পেশালিটি চালু করা হয়েছে। মানুষের জন্য চিন্তাভাবনা রেখে কাজ করতে হবে চিকিৎসকদের।
মঙ্গলবার ত্রিপুরা মেডিকেল কলেজের বিবেকানন্দ অডিটোরিয়ামে কলেজের ১৯তম প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপন সমারোহে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। অনুষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের হাতে বিভিন্ন পুরস্কার তুলে দেওয়ার পাশাপাশি নবনির্মিত ওপেন জিম ও ব্যাডমিন্টন কোর্টের শুভ উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। এর পাশাপাশি বন্যা দুর্গত মানুষকে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার জন্য চিকিৎসকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের প্রশংসা করেন।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, রাজ্যের চিকিৎসা ক্ষেত্রে এক প্রতিষ্ঠিত নাম ত্রিপুরা মেডিকেল কলেজ। ত্রিপুরা মেডিকেল কলেজে অনেক সফল অস্ত্রোপচার হয়েছে। আর ডাক্তারি পড়ুয়া এবং চিকিৎসকদের অবশ্যই আর্থিক লাভের চেয়ে জনগণের সেবাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এর মাধ্যমেই আমরা ‘এক ত্রিপুরা, শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে পারি।
মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, রাজ্যের ভয়াবহ বন্যায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের সম্মান প্রদর্শনের জন্য আজকের অনুষ্ঠানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে কোনও সাংস্কৃতিক কর্মসূচি না রাখার আহ্বান রাখি। তারা সেটা মেনে নিয়েছেন। সেই সঙ্গে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সাম্প্রতিক বন্যার সময় অন্যদের বাঁচাতে গিয়ে চিরঞ্জিত দে নামে এক যুবকের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের কথাও স্মরণ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, এবার ত্রিপুরায় ভূমিধ্বস এবং বাড়ি ধ্বসের কারণেই অধিক প্রাণহানি ঘটেছে। আমরা এই সমস্যাগুলির সমাধান করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছি। গোটা পরিস্থিতি নিয়ে আমি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এবং মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মোহন যাদবও সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছেন। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ১০ কোটি টাকা এবং মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ২০ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা করেছেন।
মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতিতে চিকিৎসকগণ বর্তমানে ত্রাণ শিবিরে আশ্রিত বিপন্ন মানুষের চিকিৎসা পরিষেবায় অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। কারণ এই সময়ে চর্মরোগ, ডায়রিয়া এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রাজ্যের চিকিৎসা পরিষেবার উন্নয়নে আমরা সুপার স্পেশালিটি সহ সমস্ত প্রয়োজনীয় সুবিধা প্রদান করছি। তবুও কিছু অংশ এখনও চিকিৎসার জন্য রাজ্যের বাইরে যাচ্ছেন। এতে প্রায়শই তাদের সম্পত্তি বিক্রি করতে হচ্ছে। ডাঃ সাহা বলেন, মেডিকেল পড়ুয়া ও চিকিৎসকদের সমস্ত কিছুর ঊর্ধ্বে উঠে মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত হতে হবে। যাতে চিকিৎসার জন্য আসা রোগীরা এখানে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। সেই সঙ্গে আমাদের অবশ্যই পরিকাঠামোর উন্নয়ন এবং গুণগত মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমানে মেডিকেল কলেজগুলিতে আমাদের চিকিৎসকরা নিষ্ঠার সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে, কলেজের অন্যান্য সিনিয়র অধ্যাপক সহ চিকিৎসক ও মেডিকেল পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীরা। এই অনুষ্ঠানে ত্রিপুরা মেডিক্যাল কলেজের কর্মচারী সংঘের পক্ষ থেকে বন্যা ত্রাণে ৩০ হাজার টাকা এবং কলেজের ফ্যাকাল্টিদের পক্ষ থেকে ১ লক্ষ টাকার চেক মুখ্যমন্ত্রী ত্রান তহবিলে দান করা হয়। মুখ্যমন্ত্রীর হাতেই এই আর্থিক সহায়তা তুলে দেওয়া হয়।