আগরতলা, ২৭ জুলাই৷৷ গোটা বিশ্বের সাথে রাজ্যে পালিত হবে হেপাটাইটিস দিবস৷ এই দিবস উদযাপন নিয়ে বুধবার সাংবাদিক সম্মেলনে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন বিশিষ্ট চিকিৎসক তথা হেপাটাইটিস ফাউন্ডেশন ত্রিপুরা শাখার সভাপতি ডা প্রদীপ ভৌমিক৷ তিনি জানান, ২৮ শে জুলাই বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে ৮টি স্বাস্থ্য দিবসকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে সরাসরি উদযাপন করে, বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস তার অন্যতম৷ ২০১০ সাল থেকে সারা বিশ্বের সমস্ত সদস্যদের সরকারি এবং বেসরকারি স্তরে ২৮ শে জুলাই কে বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস হিসাবে পালন করে৷
সারা বিশ্বে বর্তমানে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন মানুষ হেপাটাইটিস বি রোগে আক্রান্ত৷ হেপাটাইটিস সি রোগের আক্রান্তের সংখ্যা ১৭০ মিলিয়ন৷ ভারতবর্ষে প্রায় ৫০ মিলিয়ন মানুষ হেপাটাইটিস বি রোগের জীবানু বহন করছে এবং ১০ মিলিয়ন মানুষ হেপাটাইটিস সি রোগে আক্রান্ত৷ পৃথিবীতে প্রতিবছর প্রায় ১ মিলিয়ন মানুষের হেপাটাইটিস রোগের কারনে মৃত্যু হয়, এবং এই সংখ্যাটি এইডস, ম্যালেরিয়া এবং টি বি থেকে অনেক বেশি, কিন্তু তথাপিও হেপাটাইটিস রোগের প্রতিরোধে যথাযোগ্য ব্যাবস্থা পূর্বে গ্রহন করা হয়নি৷
তাই বর্তমানে হেপাটাইটিস রোগ প্রতিরোধে বিশেষ ব্যবস্থা হিসাবে টিকাকরন, রোগ নির্ণয় এবং রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে৷ এই বছরের বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হেপাটাইটিসকে জানুন, এক্ষুুনি ব্যাবস্থা গ্রহন করুন৷
২০১৬ সালের মে মাসে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড হেলথ এস্যামব্লি তে সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয় যে ২০৩০ সালের মধ্যে হেপাটাইটিসকে নির্মূল করা হবে, তাই এবারের বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবসের স্লোগান নির্মূলীকরন৷ এর অর্থ ২০৩০ সালের পর নতুন করে কোন ব্যাক্তি যাতে হেপাটাইটিস রোগে আক্রান্ত না হয়৷ তাই সারা বিশ্বব্যাপী বিশেষ উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে এবারের বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবসে৷
এ বছর হেপাটাইটিস ফাউন্ডেশন অব ত্রিপুরার ৩৪টি শাখাই বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস বিশেষ বিশে, কার্যক্রম গ্রহন করেছে৷ রাজ্যভিত্তিক অনুষ্ঠানের অঙ্গ হিসাবে ২৮ শে জুলাই বিকাল ৫ টায় মুক্তধারা অডিটোরিয়ামে হেপাটাইটিস নির্মূলীকরন, সামাজিক পটভূমি বিষয়ক সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে৷ এই সেমিনারে উদ্ভোদক এবং প্রধান অতিথি হিসাবে থাকবেন রাজ্য সরকারের শিক্ষা মন্ত্রী শ্রী তপন চক্রবর্তী, সেমিনারে বক্তা হিসাবে উপস্থিত থাকবেন ত্রিপুরা বার কাউন্সিলের সভাপতি শ্রী পিযুষ কান্তি বিশ্বাস, সংবাদ ব্যাক্তিত্ব শ্রী শানিত দেবরায়, সমাজ সেবিকা শ্রীমতি পাঞ্চালি ভট্টাচার্য্য, টি জি ই এ-এর সভাপতি শ্রীমতি মহুয়া রায় এবং টি জি টি এ (এইচ জি বি রোর্ড) এড সাধারন সম্পাদক শ্রী স্বপন বল৷ হেপাটাইটিস ফাউন্ডেশন অব ত্রিপুরার পক্ষ থেকে সকলকে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রন জানানো হয়েছে৷ এছাড়া ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে রাজ্যব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য-বিদ্যালয় এবং মহাবিদ্যালয়ে আলোনাচক্রে, হেপাটাইটিস বি টিকাকরন কর্মসূচী, বুদ্ধিজীবিদের সাথে মতবিনিময় এবং সচেতনতা র্যালি৷ এই সমস্ত অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য হল সচেতনতার বৃদ্ধির মাধ্যমে রাজ্যে হেপাটাইটিসকে সম্পূর্ণ রূপে প্রতিরোধ করা৷
ত্রিপুরাতে বর্তমানে প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ হেপাটাইটিস বি রোগে আক্রান্ত৷ হেপাটাইটিস সি রোগের প্রাধান্য এ রাজ্যে কিছুটা কম ০১ শতাংশ৷ কিন্তু রাজ্যের উত্তর জেলার কিছু অংশে বর্তমানে মাদকাসক্তদের মধ্যে হেপাটাইটিস সি রোগের প্রাদুভার্ব দেখা দিচ্ছে৷ যে সকল রোগীরা নিয়মিত ডায়ালিসিস গ্রহন করেন, তাদের মধ্যে হেপাটাইটিস সি এর প্রবনতা প্রায় ১১ শতাংশ৷ রাজ্যে উপজাতিদের মধ্যে হেপাটাইটিস বি এর প্রাদুভার্ব সবচাইতে বেশী৷ এরমধ্যে চাকমা উপজাতিদের মধ্যে ১১৪১ শতাংশ এবং রিয়াংদের মধ্যে ৭৬৯ শতাংশ জমাতিয়াদের মধ্যে ৫৭ শতাংশ৷ তাই রাজ্যে হেপাটাইটিস বি র নিয়ন্ত্রনের জন্য উপজাতি অংশের মানুষের মধ্যে বিশেষ গুরুত্ব সহকারে কর্মসূচী গ্রহন করতে হবে৷ এ ব্যাপারে হেপাটাইটিস ফাউন্ডেশন ইতিমধ্যে এডিসি প্রশাসনের নিকট অনুরোধ পাঠিয়েছে৷
সার্বিবভাবে হেপাটাইটিস বি রোগ প্রতিরোঘ হেপাটাইটিস ফাউন্ডেশন জন্মলগ্ণ থেকে কাজ করে আসছে৷ হেপাটাইটিস ফাউন্ডেশন অফ ত্রিপুরার মূল লক্ষ্য তিনটি , হেপাটাইটিস রোগ ষিষয়ে সচেতনতা, হেপাটাইটিস বি টিকাকরন এবং হেপাটাইটিস রোগের চিকিৎসা৷ গত একদশকের বেশী সময় দরে সচেতনতামূলক কর্মসূচী গ্রহণের মাধ্যমে রাজ্যের মানুষের মধ্যে হেপাটাইটিস রোগ বিষয়ে সচেতনতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে৷ তার ফলস্বরূপ রাজ্যর প্রায় ৩০শতাংশ মানু, হেপাটাইটিস বি টিকা গ্রহন করেছে, যা দেশের অন্যান্য রাজ্যগুলোর তুলনায় অনেক বেশী৷ হেপাটাইটিস বি এবং সি রোগের চিকিৎসার জন্য ফাউন্ডেশন ২০০৮ সাল থেকে বিশেষ লিভার ক্লিনিকের পরিষেবা প্রদান করছে৷ হেপাটাইটিস বি রোগ প্রতিরোধযোগ্য এবং ৯০শতাংশ হেপাটাইটিস সি রোগ চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পূর্ণ নিরাময় করা সম্ভব৷
দেখা গেছে শতকরা প্রায় ৯৫ শতাংশ মানুষই তাদের শরীরে হেপাটাইটিস রোগের উপস্থিতি সম্পর্কে অবগত থাকেননা৷ এ কারনে হেপাটাইটিস রোগ নিশব্দে দীর্ঘ সময় লিভাবে অবস্থান করে অতপর লিভারের সিরোসিস বা ক্যান্সার রোগের সৃষ্টি করে৷ তাই হেপাটাইটিস বি এবং সি এবং সার্বজনীন নি,শুল্ক পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করা সরকারের আশু কর্তব্য৷ হেপাটাইটিস ফাউন্ডেশন বিভিন্ন ক্যাম্পের মাধ্যেমে বিনামূল্যে হেপাটাইটিস বি এবং সি পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করে থাকে৷ এটাকে আরো প্রসারনের প্রয়োজন রয়েছে৷
যদিও, বিশ্বব্যাপী নির্মূলীকরনের লক্ষ্য মাত্রা ধার্য্য করা হয়েছে ২০৩০ ৷ কিন্তু হেপাটাইটিস ফাউন্ডেশন ত্রিপুরাতে ২০২০ সালের মধ্যে হেপাটাইটিস বি রোগে টিকাকরন সম্পূর্ণ করতে চায়৷ তাই এ বছরের বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস থেকেই হেপাটাইটিস বি সচেতনতায় মানুষের স্বত,স্ফূর্ত অংশগ্রহনের মাধ্যমে ত্রিপুরাকে হেপাটাইটিস বি মুক্ত করতে ফাউন্ডেশন সচেষ্ট৷
2016-07-28