রূপান্তরকামীদের অধিকার নিয়ে আগরতলায় কর্মশালা, সরব সর্বভারতীয় নেতৃত্ব

আগরতলা , ৫ মার্চ : রাজ্যের রূপান্তরকামীদের একজোট করে তাদের অধিকার, সুরক্ষা এবং সামাজিক অবস্থান নিয়ে আগরতলায় দুদিনের কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগরতলায় ত্রিপুরা স্টেট এইডস কন্ট্রোল সোসাইটির মিলনায়তনে আয়োজিত এই কর্মশালায় সর্বভারতীয় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা সহ রূপান্তরকামিদের নিয়ে নিয়মিত গবেষণা কার্য চালাচ্ছেন , এমন প্রতিথযশা ব্যক্তিত্বরা উপস্থিত ছিলেন। এই কর্মশালায় রাজ্যের রূপান্তরকামীরা তাদের প্রতিদিনকার দুঃখ দুর্দশা, সামাজিক হেনস্থা, কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য এবং বঞ্চনা এমনকি পুলিশ কর্তৃক তাদের হেনস্তার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। রূপান্তর কামিদের নিয়ে কাজ করছেন এমন সব সর্বভারতীয় নেতৃত্ব জানিয়েছেন, মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অনুযায়ী আইন তাদের পাশে রয়েছে ।

রূপান্তর কামিতা তাদের বৈষম্য , বঞ্চনা এবং হেনস্থার কারণ হতে পারে না। আইন তাদের সুরক্ষা কবজ দিয়েছে। তবে তাদেরকেও দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে চলতে হবে । এমন কোন কাজ করা চলবে না যেখানে সামাজিকতা নষ্ট হয় এবং সমাজ বিব্রত বোধ করে। তবে সমাজের অন্য মানুষদের মতই রূপান্তরকামিরাও মাথা উঁচু করে যে কোন সামাজিক, রাজনৈতিক সহ যেকোনো কাজে যোগ দিতে পারবেন। কর্মক্ষেত্রে তাদের উপর বৈষম্য কিংবা বঞ্চনা অথবা হেনস্তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। এ বিষয়ে পুলিশকেও সচেতন হতে হবে। রূপান্তরকামীদের উপর কোন নির্যাতন হলে পুলিশও আইনের আওতায় চলে আসবেন। তারাও আইনের বাইরে নন।

ভারত সরকারের সামাজিক ন্যায়বিচার ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রকের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল ডিফেন্সের সহায়তায় সম্প্রতি ত্রিপুরার আগরতলায় একটি দুই দিনের সক্ষমতা বৃদ্ধি বিষয়ক এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। ত্রিপুরা স্টেট এইডস কন্ট্রোল সোসাইটির সহযোগিতায়, কর্মশালাটি ডাক্তার, এনজিও এবং সম্প্রদায়-ভিত্তিক সংগঠন সহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারগন উপস্থিত ছিলেন। এই কর্মশালায় বিশিষ্ট আলোচকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন রাবীনা বারিহা, যিনি হিজড়া ব্যক্তি (অধিকার সুরক্ষা) আইন 2019 এবং বিধিমালা 2020 এর উপর আলোকপাত করেছিলেন। বিস্তৃত আলোচনায় বৈষম্যের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা, বসবাসের অধিকার, চাকরি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, শংসাপত্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলি উল্লেখ করেন । ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিদের পরিচয়, সরকারের কল্যাণমূলক ব্যবস্থা, অপরাধ এবং জরিমানা এবং ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিদের জন্য জাতীয় কাউন্সিলের (এনসিটি) ভূমিকা ইত্যাদি নিয়ে কথা বলেন বিদ্যা রাজপুত । ছত্তিশগড় সরকার তের জন ট্রানজেনডার কে কনস্টেবল এবং ৯ জনকে বস্তার জেলায় ফাইটার হিসাবে নিয়োগের কথা উল্লেখ করে বিভিন্ন রাজ্যের সফল অনুশীলনগুলি তুলে ধরেন।
তিনি বিভিন্ন সরকারি চাকরিতে রিজার্ভেশন নীতিগুলিকেও স্পর্শ করেছেন এবং বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সাথে ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিদের যোগসূত্র প্রদান এবং অ্যাডভোকেসির গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেছেন। পাপি দেবনাথ, একজন ট্রান্সম্যান কর্মী, সমাজে ট্রান্সম্যানদের মুখোমুখি হওয়া চ্যালেঞ্জগুলির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করেছেন, মূলধারার সম্প্রদায়ের মধ্যে তাদের আর্থ-সামাজিক, শিক্ষাগত এবং সামাজিক দিকগুলিতে সীমিত প্রকাশের প্রভাবের উপর জোর দিয়েছেন। গোবিন্দ সান্দেকার এইচআইভি/এইডস-এর সমস্যা, লক্ষণ, রোগ নির্ণয়, কারণ, চিকিৎসা এবং প্রতিরোধ বিষয়ে কথা বলেছেন ।

কর্মশালায় সিদ্ধার্থ গোপ, স্নেহা জি এবং কৃষ জি-এর অবদানও রয়েছে, যারা ত্রিপুরার এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং শিক্ষাগত চ্যালেঞ্জগুলির বিষয়ে তথ্য শেয়ার করেছেন এবং তাদের উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় প্রচেষ্টার সাথে। ত্রিপুরায় LGBTQ+ অধিকারের জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করা একটি সম্প্রদায়-ভিত্তিক সংগঠন, স্বাভিমান, তার মূল্যবান অবদানের জন্য স্বীকৃত হয়েছিল। তারা ভবিষ্যতের হস্তক্ষেপের জন্য মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে, সম্প্রদায়ের মুখোমুখি হওয়া চ্যালেঞ্জগুলি সম্পর্কে মূল তথ্য প্রদান করে। ডাঃ ঈশিতা গুহ, জেলা পরিবার কল্যাণ আধিকারিক, এবং ডাঃ অর্পিতা দেবনাথ আইজিএম হাসপাতালের নোডাল অফিসার এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে রূপান্তরকামী এবং হিজড়াদের বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন ।

আয়োজকরা ত্রিপুরা এইডস কন্ট্রোল সোসাইটির ডেপুটি ডিরেক্টর (প্রতিরোধ) মৌসুমী দেবনাথকে তার প্রচেষ্টা এবং সমন্বয়ের জন্য বিশেষ ধন্যবাদ জানান, যা রাজ্যে অনুষ্ঠানটি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনে যথেষ্ট কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করে। ত্রিপুরায় ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়ের ক্ষমতায়ন এবং উন্নতির দিকে অব্যাহত প্রচেষ্টার ভিত্তি স্থাপন করে দুই দিনের কর্মশালা শেষ হয়। তবে সর্বভারতীয় রূপান্তরকামী নেতৃত্ব এবং গবেষকরা জানিয়েছেন তারা বারে বারে রাজ্যে আসবেন। এখানকার হিজরে এবং রূপান্তরকামীদের একত্রিত করে তাদের অধিকার আদায়ের সর্বোতভাবে সহযোগিতা করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *