রাজ্যে সহসা কাটছে না বিএসএনএল’র রাহুর দশা, ব্যর্থতার ট্র্যাডিশন বজায় রাখলেন জিএম

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২২ জুলাই৷৷ রাজ্যে বিএসএনএল’র রাহুর দশা কাটানো হয়তো বা সম্ভব হবে না৷ অন্তত

বিএসএনএল ত্রিপুরা শাখার জেনারেল ম্যানেজার বক্তব্য রাখেন৷ ছবি নিজস্ব৷
বিএসএনএল ত্রিপুরা শাখার জেনারেল ম্যানেজার বক্তব্য রাখেন৷ ছবি নিজস্ব৷

বিএসএনএল ত্রিপুরা শাখার জেনারেল ম্যানেজার আর. রবিচন্দ্রনের স্বীকারোক্তিতে এমনটাই মনে করা হচ্ছে৷ শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলনে গত কয়েকদিনের বিএসএনএল মোবাইলের বেহাল পরিষেবার কারণ বর্ননা দিতে গিয়ে তিনি অকপটে অন্যান্য বিষয়েও দূর্বলতা রয়েছে তা স্বীকার করেছেন৷ শুধু মোবাইল নয়, ল্যান্ড লাইন এবং ইন্টারনেট পরিষেবা নিয়ে যে বিপর্যয় এরাজ্যে সেকথা মেনে নিয়ে তিনি বলেন, চেষ্টা করা হচ্ছে খুব শীঘ্রই বিএসএনএল-কে চাঙ্গা করে তুলতে৷ অবশ্য, বিএসএনএল-কে কবে নাগাদ চাঙ্গা করা সম্ভব হবে সেই বিষয়ে নির্দিষ্ট ভাবে কোন কিছুই জানাতে পারেননি৷ বরং বিএসএনএল’র পরিষেবা বিপর্যয় নিয়ে বর্ননা দিতে গিয়ে অনেকটা অস্বস্তিতে পড়েছেন তিনি৷
এদিন, মোবাইল পরিষেবা নিয়ে বিএসএনএল ত্রিপুরা শাখার কর্তাদের ডেকে পাঠান মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার৷ সূত্র অনুসারে জানা গিয়েছে, বিএসএনএল’র আধিকারীকদের কাছে পরিষেবা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন৷ পাশাপাশি শীঘ্রই পরিষেবার মানোন্নয়নের বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য বলেছেন৷ বিএসএনএল’র আধিকারীকরা মুখ্যমন্ত্রীকে মোবাইল পরিষেবার বিপর্যস্ত হওয়ার কাহিনী সবিস্তারে জানিয়েছেন৷ শুধু তাই নয় খুব শীঘ্রই পরিষেবা স্বাভাবিক করা হবে বলেও মুখ্যমন্ত্রীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন৷
এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে বিএসএনএল ত্রিপুরা শাখার জেনারেল ম্যানেজার রাজ্যের মোবাইল পরিষেবার বিপর্যয়ের জন্য শিলংয়ে যান্ত্রিক ত্রুটিকে দায়ী করেছেন৷ এরই সাথে ত্রুটি সারাইয়ের কাজে নিযুক্ত সংস্থা পিজিসিআইএল-কেও দায়ী করেছেন৷ তিনি বলেন, গত ১৮ এবং ২১ জুলাই ও শুক্রবার রাজ্যে মোবাইল পরিষেবা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়েছে৷ শিলং প্রান্তে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেই রাজ্যে মোবাইল পরিষেবা স্তব্ধ হয়ে পড়েছিল৷ কিন্তু, তিনি দাবি করে বলেন, যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ত্রুটি সারাইয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে৷ তবে, রাজ্যে মোবাইল পরিষেবার যখনই বিপর্যয় ঘটে আগের মতো এবারও অন্যের ঘাড়েই দোষ চাপিয়ে দেওয়ার ট্রেডিশান বজায় রেখেছে বিএসএনএল’র ত্রিপুরা শাখা৷ বিশাল পরিকাঠামো সত্বেও টেলি যোগাযোগের ক্ষেত্রে অন্য রাজ্যের উপর ত্রিপুরাকে কেন নির্ভর করতে হচ্ছে সেই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ভাবে কিছু জানাতে ব্যর্থ হয়েছেন সংস্থাটির ত্রিপুরা শাখার জেনারেল ম্যানেজার৷ তবে, তাঁর মতে ভৌগোলিক কারণে ত্রিপুরাকে শিলংয়ের উপর নির্ভরশীল থাকতেই হবে৷ তাতে স্পষ্ট আগামীদিনেও মোবাইল বিপর্যয় ঘটলে সংস্থাটির ত্রিপুরা শাখার কর্তাদের করণীয় কিছুই থাকবে না৷ এদিন তিনি নিজে সমস্যা সমাধানের বিষয়ে কেবল উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো পর্যন্ত এক্তিয়ার রয়েছে বলে জানিয়েছেন৷
এদিকে, ল্যান্ড লাইন পরিষেবাটি খুব শীঘ্রই দেওলিয়া হয়ে যাচ্ছে তা জেনারেল ম্যানেজারের বক্তব্যে ফুটে উঠেছে৷ তিনি স্বীকার করেছেন, ল্যান্ড লাইন পরিষেবা দিতে গিয়ে নানা দূর্বলতা ও ঘাটতি রয়েছে৷ রাজ্যের বহু ল্যান্ড লাইন গ্রাহক এই পরিষেবা নিতে চাইছেন না৷ সেই বিষয়েও তিনি অবগত আছেন বলে জানিয়েছেন৷ রাজধানী আগরতলা শহরের নাগেরজলা এবং জয়নগর এলাকার কিছু তথ্য তুলে ধরে তিনি জানান, ঐ এলাকাগুলিতে বেশ কিছু ল্যান্ড লাইন সংযোগ বিপর্যস্ত হয়ে রয়েছে৷ চেষ্টা করা হচ্ছে খুব শীঘ্রই সেগুলি সারাই করার৷ তবে, আগরতলা শহরের অন্যান্য প্রান্ত এমনকি গোটা রাজ্যের বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে ল্যান্ড লাইন পরিষেবা নিয়ে বিএসএনএল কতটা বেকায়দায় রয়েছে তা জানাতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি৷ ইন্টারনেট পরিষেবাও জনগণের প্রত্যাশা পুরণে ব্যর্থ৷ সেই বিষয়ে তিনি জানান, রাজ্যবাসীকে যে পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে তাতে প্রশ্ণ উঠার কোন বিষয় রয়েছে বলে মনে করছেন না৷ তা সত্বেও বহু গ্রাহক ইন্টারনেট পরিষেবা নিয়ে প্রশ্ণ তুলেছেন, সেই কথাও স্বীকার করে তিনি জানান ৫ আগষ্ট ইন্টারনেট গ্রাহকদের সাথে মত বিনিময় করা হবে৷ সেখানে বিভিন্ন ত্রুটি এবং অভিযোগের ভিত্তিতে পরিষেবা আরও উন্নত করা যায় কিনা ভেবে দেখবে বিএসএনএল৷