আগরতলা, ২৮ ডিসেম্বর : পঞ্চভূতে বিলীন হলেন বিধায়ক সুরজিৎ দত্ত। তাকে শ্রদ্ধার সাথে শেষ বিদায় দেওয়া হয়েছে। বটতলা মহাশ্মশানে তাঁকে গার্ড অফ অনার দেওয়া হয়েছে।
আজ দুপুরে প্রয়াত বিধায়ক সুরজিৎ দত্তের মরদেহ আগরতলা নিয়ে আসা হয়েছে। তাঁকে এমবিবি বিমান বন্দর থেকে প্রথমে নেওয়া হয়েছে বিধানসভা ভবনে। সেখানে তাঁর মরদেহে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন রাজ্যপাল ইন্দ্রসেনা রেডিড নাল্লু। এরপর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন ত্রিপুরা বিধানসভার অধ্যক্ষ বিশ্ববন্ধু সেন, বিধানসভার সরকারি মুখ্যসচেতক কল্যাণী রায়, রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য সহ বিধানসভার সচিব এবং অন্যান্য আধিকারিকগণ।
তারপর মরদেহকে রাজ্য সচিবালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডাঃ) মানিক সাহা পুষ্পস্তবক দিয়ে প্রয়াত বিধায়কের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন। তারপর একে একে রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য কৃষিমন্ত্রী রতন লাল নাথ, অর্থমন্ত্রী প্রনজিৎ সিংহ রায়, যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া মন্ত্রী টিংকু রায়, তপশিলিজাতি কল্যাণ মন্ত্রী সুধাংশু দাস, তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের সচিব ড. পি কে চক্রবর্তী, সচিব টি কে দেবনাথ সহ রাজ্য প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে সচিব এবং আধিকারিকগণ পুষ্পস্তবক দিয়ে প্রয়াত বিধায়কের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক (ডা.) মানিক সাহা বলেন,সুরজিৎ দত্ত (সুনু দা) শুধু একজন বিধায়কই ছিলেন না, তিনি ছিলেন সবার খুব আপনজন। প্রায় পাঁচ দশকের রাজনৈতিক পথচলায় তাঁর গুণমুগ্ধদের সংখ্যা অগনিত।
এদিন তিনি আরও বলেন, সাত রামনগর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে সাতবার জয়ী হয়েছিলেন তিনি। কংগ্রেসের জোট সরকারের আমলে তিনি পূর্ত দপ্তরের মন্ত্রী ছিলেন। পরোপকারী খোলা মনের মানুষ ছিলেন তিনি।জনপ্রিয়তায় তিনি এলাকাবাসীর মনে দাগ কেটেছিলেন। রাজনৈতিক মহলের অপূরনীয় ক্ষতি হয়েছে।
শোকবার্তায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রয়াত সুরজিৎ দত্ত দীর্ঘদিন ধরে রাজ্য রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন। জনগণের সাথে শ্রীদত্তের নিবিড় সম্পর্ক রাজ্য রাজনীতির পরিমন্ডলে এক নতুন মাত্রা সংযোজিত করেছে। রাজনীতির পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজেও তাঁর অবদান রাজ্যবাসী দীর্ঘদিন মনে রাখবে। দলমত নির্বিশেষে সকল স্তরের মানুষের কাছেই তিনি ছিলেন অত্যন্ত প্রিয় মানুষ।
বার্তায় শ্রী সাহা আরও বলেন, রাজ্য রাজনীতির এক বর্ণময় ব্যক্তিত্ব। সুরজিৎ দত্তের মৃত্যু রাজ্য রাজনীতিতে এক অপূরণীয় ক্ষতি। রাজ্যের জনগণ হারালো পরোপকারী জনদরদী একজন অভিজ্ঞ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে। তাঁর পরিবার পরিজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতি গভীর সমবেদনা ব্যক্ত করেছেন এবং বিদেহী আত্মার চিরশান্তি কামনা করেছেন।
এদিন রতনলাল নাথ বলেন, জননেতা, প্রাক্তন মন্ত্রী এবং সাত বারের বিধায়ক প্রয়াত হয়েছেন। তাঁর মত বিধায়ক রাজ্যে বিরল। একজন জনপ্রতিনিধি কেমন হওয়া উচিত তা সুরজিৎ দত্তকে দেখলে বোঝা যেত। তিনি রামনগরবাসীর কাছে চিরকাল সুনু দা নামে পরিচিত ছিলেন। তাঁর প্ৰায়ণে নক্ষত্রপতন ঘটলো রাজ্যের সংসদীয় রাজনীতির।
এদিকে বিধায়ক সুরজিৎ দত্তের প্রয়াণে শোকাহত কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক।গতকাল রাতেই তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে তিনি কলকাতার বেসরকারি হাসপাতলে ছুটে গিয়েছেন।
আজ তিনি সংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, দলীয় কাজে ব্যস্ত থাকায় তিনি ত্রিপুরায় আসতে পারেননি। যার দরজা চিরদিন সাধারন মানুষের জন্য খোলা থাকতো তিনিই আজ চিরনিদ্রায়। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কথায়, একজন জননেতা কিরকম হতে হয় তা সুনুদা প্রমাণ করে গেছেন।
এদিন বিধায়ক সুরজিৎ দত্তের প্রয়াণে বিজেপি প্রদেশ সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। রাজীব ভট্টাচার্য্য বলেন, তাঁর প্রয়াণে ত্রিপুরাবাসী সহ রাজনৈতিক মহলের অপূরনীয় ক্ষতি হয়েছে। তাঁর এই কর্মময় জীবন ও অবদান ভারতীয় জনতা পার্টি চিরকাল মনে রাখবে। এদিন তিনি তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। এই কঠিন সময়ে শোকাহত পরিবার পরিজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি।
এদিন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক তথা বিধায়ক জিতেন্দ্র চৌধুরী বলেন, তাঁর প্রয়াণে শোক প্রকাশ করেছেন। তাঁর পরিবার পরিজনদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি।
তাছাড়া, বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন বিধায়ক সুরজিৎ দত্ত ( সুনু দা ) প্রয়াণে শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, সুনু দা নেই মানেই একটা রাজনৈতিক অধ্যায়ের অবসান এবং রাজনৈতিক আঙ্গিনার উজ্জ্বল এক নক্ষত্রের পতন। তিনি জীবদ্দশায় মানুষের সেবায় সর্বদায় ব্রতী ছিলেন। তাঁর জীবনের প্রতি মহুর্তে নিজের সাধ্যমত মানুষকে পরিষেবা দিয়ে গেছেন। তাঁর প্রয়াণ নিঃসন্দেহে রাজ্য রাজনীতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।
তারপর বিজেপি পার্টি অফিসে তাঁকে দলীয় পতাকা প্রদান করলেন বিজেপির প্রদেশ সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য ও মুখ্যমন্ত্রী ডক্টর মানিক সাহা। তারপর সেখান থেকে তাঁর বাসভবনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে রামনগরবাসি সনু দা কে শেষবারের মতন দেখতে জনতার ভিড় ছিল লক্ষণীয়। জনতার চোখে বিদায়ের জল সেখান থেকে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় বটতলা মহাশ্মশানে। সেখানে গার্ড অফ অনার মাধ্যমে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে তাঁর।