ঘিলাতলি প্যাক্স সমবায় সমিতির আর্থিক নয়ছয়ে দিশেহারা সাধারণ মানুষ

নিজস্ব প্রতিনিধি, কল্যাণপুর, ১৪ নভেম্বর : গ্রামীণ অর্থনীতির বুনিয়াদকে বলিষ্ঠ করার জন্য যেখানে রাজ্য সরকার থেকে শুরু করে দেশের সরকার প্রতিনিয়ত মানুষকে প্যাক্স বা সমবায় সমিতির মধ্য দিয়ে অর্থ সঞ্চয় থেকে শুরু করে বিভিন্নভাবে উপকৃত হওয়ার আহ্বান করে চলেছেন , ঠিক সেই জায়গায় বিপরীত চিত্র উঠে এল তেলিয়ামুড়া মহকুমার অন্তর্গত কল্যাণপুর আরডি ব্লক এলাকার ঘিলাতলী থেকে।

দীর্ঘ প্রায় ৪০ বছর ধরে ঘিলাতলী এলাকাতে প্যাক্স সমবায় সমিতির অবস্থান থাকলেও প্রথম বিজেপি সরকারের আমলে গ্রামীণ এলাকার আর্থ সামাজিক ব্যবস্থার কথা মাথায় রেখে ব্যাংকিং কাউন্টার চালু করা হয়। এই ব্যাংকিং কাউন্টার চালু হওয়ার পর এলাকার মানুষ বিভিন্নভাবে যাতে করে প্রতারণার শিকার না হন বা নিজেদের কষ্টার্জিত টাকা-পয়সাগুলোকে নিরাপদে সঞ্চয় করার জন্য সংশ্লিষ্ট পেক্সের শরণাপন্ন হতে শুরু করেন। দেখতে দেখতে কৃষি নির্ভর বিস্তীর্ণ ঘিলাতলী এলাকার প্রায় ছয় শতাধিক গ্রাহক বিভিন্নভাবে সংশ্লিষ্ট সমবায় সমিতির সাথে যুক্ত হতে শুরু করেন বলে জানা গেছে।

 প্রথম প্রথম ভালো চললেও বিগত প্রায় বছর খানেক ধরে সংশ্লিষ্ট সমবায় সমিতির ম্যানেজার প্রানেশ দেব বিভিন্নস্তরের গ্রাহকদের সাথে প্রতারণা করে আসছেন বলে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে অভিযোগ।

 এলাকার বিভিন্ন অংশের গ্রাহকদের সম্মিলিত অভিযোগ হচ্ছে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন লোভনীয় স্কিমে প্রাণেশ দেবের কথায় টাকা রাখার পরে যখন মেচুরিটি হয় তখন তালবাহানা করতে শুরু করেন শ্রীদেব।

 এলাকার বেশ কিছু অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক থেকে শুরু করে কৃষক ,শ্রমিক অংশের মানুষ গোটা জীবনের কষ্টার্জিত টাকা ঘিলাতলি প্যাক্স সমবায় সমিতিতে রাখলেও প্রাণেশ দেবের ভূমিকা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন চিহ্ন তৈরি হয়েছে বর্তমানে।

নিজেদের কষ্টার্জিত টাকার অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে এলাকার বেশ কয়েকজন অভিভাবক স্থানীয় গ্রাহক সংশ্লিষ্ট সমবায় সমিতির প্রেসিডেন্ট গৌতম দেব রায়ের সাথে সাক্ষাৎ করলে গৌতম বাবু সংশ্লিষ্ট গ্রাহকদের অভিযোগ শোনার বদলে তাদের সাথে অনেকটাই দুর্ব্যবহার করেন বলেও অভিযোগ করেছেন মানিক শুক্ল দাস সহ একাধিক প্রতারিত।

শুধু তাই নয় একাংশ গ্রাহকদের অভিযোগ হচ্ছে তারা যখন ঘিলাতলী প্যাক্স সমবায় সমিতি থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন প্রকারের রশিদ এবং পাসবুক নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রেসিডেন্ট গৌতম বাবুকে দেখান তখন গৌতম বাবু এগুলোকে কলাপাতা হিসেবে আখ্যায়িত করে গ্রাহকদের সরাসরি জানিয়ে দেন এই ব্যাপারে প্যাক্স কোন বিষয়ে জানে না।

গোটা বিষয় সম্পর্কে গ্রাহকদের পক্ষ থেকে এলাকার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মানিক শুক্ল দাস দাবি করেছেন তিনি তার সারা জীবনের কষ্টার্জিত টাকা নিজের নামে এবং ওনার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নামে এই সমবায় সমিতিতে গচ্ছিত রেখেছিলেন, কিন্তু বর্তমানে উনি অনুধাবন করতে পারছেন উনার সাথে বড়সড়ো প্রতারণা করা হয়েছে। মানিক শুক্ল দাসের মতো জিতেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ, রাকেশ চন্দ্র দেব, গিতা রানী দেবনাথ, ক্ষিতীশ দেবনাথ, পিন্টু দেবনাথ প্রমূখরা সংশ্লিষ্ট সমবায় সমিতিতে টাকা রেখে এখন সর্বস্ব হারিয়েছেন বলে এলাকায় কান পাতলেই শোনা যায়।

গোটা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিগত কয়েকদিন ধরে ঘিলাতলি এলাকায় চাপা উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এলাকার মানুষ সঙ্গবদ্ধ ভাবে দিনে কয়েকবার প্যাক্স সমবায় সমিতিতে অভিযান সংঘটিত করছেন, কিন্তু অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ম্যানেজার প্রানেশ দেব ইতিমধ্যে গা ঢাকা দিয়েছেন এবং উনার মোবাইল বন্ধ করে রেখেছেন। এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের টাকা নিয়ে প্রতারণা হয়েছে এ বিষয়টা পরিষ্কার , কারণ বিভিন্নভাবে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখা গেছে সংশ্লিষ্ট প্যাক্স সমবায় সমিতির ম্যানেজার প্রাণের দেব ঘিলাতলী প্যাক্স সমবায় সমিতির নাম ছাড়াও ঘিলাতলি স্মল সঞ্চয় লিমিটেড এর নামে রসিদ প্রদান করে এলাকার মানুষের কাছ থেকে টাকা পয়সা সংগ্রহ করেছেন, যার বেশ কিছু প্রমাণ গোটা এলাকার বিভিন্ন গ্রাহকদের কাছে রয়েছে।

 সার্বিক পরিস্থিতির নিরিখে অনুমান গোটা ঘিলাতলি সমবায় সমিতির আর্থিক ঘোটালার পরিমাণ টাকার অংকের হিসেবে অর্ধ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। এই ঘটনার মাস্টারমাইন্ড প্রাণেশ দেব হলেও সংশ্লিষ্ট ঘটনার সাথে অন্য কেউ জড়িত কিনা, এনিয়ে এলাকা জুড়ে গুঞ্জন।
তবে আপাতত গোটা ঘটনা যেদিকে মুর নিচ্ছে তাতে এটুকু ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে ঘিলাতলী প্যাক্স সমবায় সমিতি লিমিটেডে সাধারণ মানুষদের গচ্ছিত টাকা নিয়ে ব্যাপক ঘোটালা হয়েছে এবং এলাকা সূত্রে দাবি উঠছে অবিলম্বে উপযুক্ত ঘটনার তদন্তক্রমে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক এবং যাদের দৌলতে এই প্রতারণা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ সহ সাধারণ মানুষ যাতে করে তাদের গচ্ছিত টাকা ফেরত পেতে পারে সেই দাবিও কিন্তু উঠছে।
পাশাপাশি গোটা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এখনো পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ম্যানেজারের বিরুদ্ধে কেন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি, তা নিয়ে একাংশ প্রশ্ন তুলছেন।
পাশাপশি সমবায় দপ্তরের একাধিক আধিকারিককে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে উনাদের অভিমত হচ্ছে সমবায় সমিতিগুলি যেহেতু স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা তাই দপ্তর সরাসরি হস্তক্ষেপ করেনা। সংশ্লিষ্ট সমবায় সমিতিগুলো নিজেরাই নিজেদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরিচালিত হয় বলে দপ্তর সুত্রে জানা গেছে। এখন দেখার বিষয় গোটা বিষয় আগামী দিনে মোড় নেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *