প্রয়াত বিশিষ্ট সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ মনজিৎ মহন্ত

গুয়াহাটি, ১০ জুলাই (হি.স.) : অকালে চলে গেলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ মনজিৎ মহন্ত। আজ সোমবার ভোররাত ২.০০টায় গৌহাটি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন বছর ৫৫-এর মনজিৎ।

বেশ কিছুদিন ধরে তিনি দূরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগছিলেন মনজিৎ। স্বাস্থ্যের অবনতি হলে তাঁকে বেসরকারি নেমকেয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে ভরতি করে চিকিৎসা চলছিল। কিন্তু স্বাস্থ্যের আরও অবনতি হলে গৌহাটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় তাঁকে।

রাজনীতিতে আসার আগে মনজিৎ মহন্ত অসমীয়া প্ৰতিদিন-এর প্ৰতিষ্ঠালগ্ন থেকে জড়িত ছিলেন। এক সময় তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্ৰী প্ৰফুল্লকুমার মহন্তের অতি ঘনিষ্ঠ মনজিৎ অগপ সরকারের আমলে রাজ্য সরকারের জনসংযোগ বিভাগের উপ-অধিকর্তা স্তরের আধিকারিক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন।

অসম আন্দোলনের সঙ্গে সক্ৰিয়ভাবে জড়িত মনজিৎ মহন্ত ছিলেন মানব অধিকার আন্দোলনের এক সৈনিক। ১৯৯৯ সাল থেকে প্রায় এক দশক তিনি অসমীয়া প্ৰতিদিন-এর কাৰ্যনির্বাহী সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া তিনি কিছুদিন বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যম এনইটিভি এবং ফ্ৰন্টিয়ার টিবি-র সঙ্গেও জড়িত হয়ে পড়েছিলেন। গত প্রায় চার বছর আগে সাংবাদিকতা ছেড়ে তিনি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হয়ে যান। গঠন করেন অসম সংগ্ৰামী মঞ্চ নামের এক সংগঠন। মঞ্চের প্ৰতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি।

কংগ্ৰেসে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদানের আগে তিনি আরেক বরিষ্ঠ সাংবাদিক অজিত ভূঞা (বর্তমানে বিরোধী জোটের নির্বাচিত রাজ্যসভার সদস্য)-র নেতৃত্বে গঠিত আঞ্চলিক ও বিরোধী রাজনৈতিক মিত্রজোটের সদস্য হন। ২০২১ সালে বিরোধী মিত্রজোটের সমর্থনে কংগ্ৰেসের প্ৰতীক চিহ্ন নিয়ে দিশপুর বিধানসভা কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন তিনি। তবে বিজেপি প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়েছিলেন।

পরবৰ্তীতে অসম সংগ্ৰামী মঞ্চ ছেড়ে তিনি কংগ্ৰেসে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদান করেন। মনজিৎ মহন্তের মৃত্যুতে তাঁর এককালের সতীৰ্থরা শোক প্ৰকাশ করেছেন। শোক ব্যক্ত করেছেন বিজেপি, কংগ্রেস সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক দলের নেতৃবর্গ।

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক তথা প্ৰদেশ কংগ্ৰেসের মিডিয়া সেলের চেয়ারম্যান মনজিৎ মহন্তের মৃত্যুতে গভীর শোক প্ৰকাশ করেছেন প্ৰদেশ কংগ্ৰেস সভাপতি ভূপেনকুমার বরা। গহপুরের হাওয়াজানে প্রয়াত নেতার প্রতি শ্ৰদ্ধাঞ্জলি জানাতে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল কংগ্রেস। সেখানে জ্যেষ্ঠ কংগ্ৰেস নেতার প্রতি শেষ শ্ৰদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করেন ভূপেন বরা।

ভূপেন বলেন, অকালে মনজিৎ মহন্তকে হারানোর ঘটনা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। তিনি সংবাদ মাধ্যমে যথেষ্ট অবদান রেখে গেছেন। কংগ্ৰেস দলে যোগদান করার পর নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করেছেন মনজিৎ। অসমিয়া জাতির সংকটকালে তিনি যেভাবে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তা এক কথায় অনবদ্য, বলেন ভূপেন বরা। শ্ৰদ্ধাঞ্জলি অনুষ্ঠানে বিধায়ক ভরতচন্দ্ৰ নরহ, কংগ্ৰেস নেতা জয়প্ৰকাশ দাস, রাজপ্ৰসাদ শৰ্মা, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক অদীপ কুমার ফুকন, শান্তনু বড়ঠাকুর প্রমুখ বহু জ্যেষ্ঠ ও কনিষ্ঠ নেতা-কৰ্মী উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে সকালে মেডিক্যাল কলেজ থেকে মনজিৎ মহন্তের নশ্বর দেহ গীতানগরে তাঁর নিজস্ব বাসভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে যাবতীয় ক্রিয়াকর্ম সম্পন্ন করে প্রথমে জিএস রোডে অসম প্রদেশ কংগ্রেসের সদর দফতর রাজীব ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। রাজীব ভবনে তাঁর মরদেহে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা দেবব্রত শইকিয়া, অসম প্রদেশ কমিটির উপ-সভাপতি তথা বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ, মুখপাত্র অপূর্ব ভট্টাচার্য সহ দলের বহু নেতা-কর্মী এবং যুব ও মহিলা কংগ্রেসের নেতৃবর্গ।

কংগ্রেসের সদর দফতর থেকে সকাল ১১টা নাগাদ মনজিৎ মহন্তের নশ্বর দেহ নিয়ে যাওয়া হয় তাঁর পুরনো কর্মক্ষেত্র সাদিন ও অসমীয়া প্ৰতিদিন-এর কাৰ্যালয়ে। ‘সাদিন প্ৰতিদিন’-এর কাৰ্যালয়ে প্ৰয়াত সাংবাদিককে শেষ শ্ৰদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করেন তাঁর এককালের সতীর্থরা। শ্ৰদ্ধাঞ্জলি জানান, অসমীয়া প্ৰতিদিন-এর দুই প্ৰাক্তন সম্পাদক হাইদর হুসেইন, নিত্য বরা, ‘প্ৰতিদিন টাইম’-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর স্মিতাক্ষী বি গোস্বামী, ‘সাদিন প্ৰতিদিন গোষ্ঠী’র ডিরেক্টর ঋষি বরুয়া, চিফ ম্যানেজার মৃণ্ময় দে, ‘অসমীয়া প্ৰতিদিন’-এক প্রধান সহযোগী সম্পাদক অচ্যুত কুমার পাটোয়ারি, সহযোগী সম্পাদক প্ৰকাশ মহন্ত, কাৰ্যনিবাহী সম্পাদক ধৈৰ্য হাজরিকা সহ পত্রিকার সম্পাদনা, ডিটিপি, বিজ্ঞাপন প্রভৃতি সব বিভাগের কৰ্মীগণ।

সাদিন প্ৰতিদিন কাৰ্যালয় থেকে মনজিৎ মহন্তের নশ্বর দেহ গুয়াহাটি প্ৰেস ক্লাবে নিয়ে যাওয়া হয়। প্ৰেস ক্লাবে তাঁর নশ্বর দেহে শেষ শ্ৰদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করেন প্ৰেস ক্লাবের সভানেত্ৰী সুস্মিতা গোস্বামী, বরিষ্ঠ সাংবাদিক তথা রাজ্যসভার সদস্য অজিতকুমার ভূঞা, মৃণাল তালুকদার, নিউজ-১৮ অসম-এর প্রধান সম্পাদক পরাগমণি আদিত্য, দৈনিক জনমভূমি-র সঞ্জীব ফুকন, গুয়াহাটি প্ৰেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় রায় সহ বহু সিনিয়র ও জুনিয়র সংবাদিক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *