বারুইপুর, ৩ জুলাই (হি.স.) : কোচবিহার থেকে ফিরেই বাসন্তীর উদ্দেশে রওনা হয়েও নিহত তৃণমূল কর্মী জিয়ারুল মোল্লার বাড়িতে যাওয়া হল না রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের। পরিবারের দাবি, পুলিশ ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁদের বাড়িতে পৌঁছতে দেননি। এই ঘটনায় এখনও সিবিআই তদন্তের দাবিতে সরব নিহত তৃণমূল কর্মীর মেয়ে। পরে অবশ্য রাজ্যপাল জিয়ারুলের মেয়েকে ক্যানিং গেস্ট হাউজে ডেকে নেন। সেখানেই কথা বলেন তাঁর সঙ্গে।
শনিবার রাতে আততায়ীদের গুলিতে মৃত্যু হয় বাসন্তীর রামচন্দ্রখালি পঞ্চায়েতের খিরীশখালি গ্রামের বাসিন্দা জিয়ারুল মোল্লার। কোচবিহারে বসে সেই খবর পান রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। এরপর সোমবার কোচবিহার থেকে ফিরেই দ্রুত বাসন্তী রওনা হন তিনি। জিয়ারুলের মৃত্যুর পর শনিবার রাতেই তেতে উঠেছিল বাসন্তী থানার ফুলমালঞ্চ গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘাগরামারী এলাকা। এদিন এই সমস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন রাজ্যপাল। জিয়ারুল মোল্লার পরিবারের সঙ্গেও দেখা করার কথা ছিল তাঁর।
রাজ্যপাল আসবেন তাঁদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে। এটা জেনে অপেক্ষায় ছিলেন জিয়ারুলের পরিবার। কিন্তু শেষপর্যন্ত তাঁদের সঙ্গে দেখা না করেই ফিরে যান রাজ্যপাল। এটা জানার পরেই মৃতের পরিবার ক্ষোভ উগরে দেন। এই ঘটনাকে চক্রান্ত বলে দাবি করেছেন তাঁরা। পরে অবশ্য ক্যানিং গেস্টহাউজে নিহত যুব তৃণমূল কর্মীর মেয়েকে ডেকে পাঠান। বেলা তিনটের সময় তাঁকে সময় দেন রাজ্যপাল। কথাও বলেন।
পঞ্চায়েত ভোটের আগে সন্ত্রাসে লাগাম টানতে উদ্যোগী হয়েছেন রাজ্যপাল। সন্ত্রাসের খবর পেয়ে এর আগে তিনি ছুটে গিয়েছিলেন ভাঙড় ও ক্যানিংয়ে। কোচবিহারের পরিস্থিতি দেখতেও যান তিনি। রবিবার দিনহাটায় বসেই বাসন্তীতে যুব তৃণমূল কর্মী খুনের খবর পান। সঙ্গে সঙ্গেই বাসন্তী যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। তবে বাসন্তী গিয়েও নিহত যুব তৃণমূল কর্মীর বাড়ি যান নি রাজ্যপাল । তা নিয়ে শুরু হয় জোরদার বিতর্ক।
তবে জিয়ারুলের মেয়ে অভিযোগ করেন, রাজ্যপালকে বিভ্রান্ত করেছে স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসন। তাঁর পক্ষে বাড়ি চেনা সম্ভব নয়। যারা তাঁর বাবাকে খুন করেছে, তারাই পুলিশকে দিয়ে অন্যপথে রাজ্যপালের গাড়ি ঘুরিয়ে দিয়েছে। সে কারণেই তাঁদের বাড়ি যেতে পারেননি তিনি।
প্রসঙ্গত, বাসন্তী থানার ফুলমালঞ্চ গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘাগরামারী এলাকায় শনিবার রাতে খুন হল জিয়ারুল মোল্লা নামে ওই যুব তৃণমূল কর্মী। পুলিশ সূত্রে খবর শনিবার বিশেষ কাজে ক্যানিংয়ে এসেছিলেন রামচন্দ্রখালি পঞ্চায়েতের খিরীশখালি গ্রামের বাসিন্দা জিয়ারুল। রাতে বাইক চালিয়ে বাড়িতে ফিরছিলেন। সেই সময় ঘাগরামারী এলাকায় দুটি বাইকে করে আসা দুষ্কৃতীরা তাকে ঘিরে ধরে। মাথা লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি চালায়। রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়েন জিয়ারুল। রাতের অন্ধকারে গুলির আওয়াজ শুনে আশপাশের লোকজন বাইরে বেরিয়ে আসেন। রক্তাক্ত অবস্থায় একজনকে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেন। বাসন্তী থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে রক্তাক্ত অবস্থায় ওই ব্যক্তিকে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। হাসপাতালেই মৃত্যু হয় জিয়ারুলের। এলাকায় যুব তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী হিসেবেই পরিচিত ছিলেন জিয়ারুল। এই ঘটনায় তৃণমূলেরই অন্য গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল উঠেছে। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত চলছে। খুব দ্রুত অপরাধীরা গ্রেফতার হবে।