কলকাতা, ২৬ এপ্রিল (হি. স.) : “যেখানে ময়নাতদন্তর রিপোর্টে স্পষ্ট, কোনও শক্তিশালী আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি ছোড়া হয়েছে, সেখানে এতদিনেও সিআইডি কোন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি ছোড়া হয়েছে সেটা সনাক্ত করতে পারলো না?” উত্তর দিনাজপুরের দাড়িভিটে গুলিতে দুই যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা এই প্রশ্ন তুললেন।
এই বিষয়ে পরস্পর বিরোধী দুটি তথ্য নিয়ে হতবাক আদালত। আবার, ঘটনার দিন পুলিশের ভূমিকায নিয়েও আদালত সংশয়ে। বিচারপতির মন্তব্য, যেখানে ৫০০র বেশি উন্মত্ত জনতার ভিড় থেকে বোমা ছুড়ছে, ভোজালি, বাঁশ, লাঠি, বোতল, রড নিয়ে পুলিশকে আক্রমণ করছে, সেখানে কেন পুলিশ আকাশের দিকে গুলি ছুড়েও জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করল না? কেন শুধুমাত্র লাঠি চালানো আর কাঁদানে গ্যাসের উপর ভরসা করে থাকলো পুলিশ?
আদালতের আরও প্রশ্ন, হঠাৎ করে কেন ঘটনার পাঁচ দিন পরে সিআইডি তদন্তের দায়িত্ব নিল? কেনই বা বিধায়ক বা পুলিশ সুপার সেখানে উপস্থিত ছিলেন বলে অভিযোগ করা হলেও সেই ব্যাপারে তদন্ত এগলো না সিআইডি? এত বড় একটা ভিড় সশস্ত্র অবস্থায় জমায়েত হল, তার মানে সেখানে আগের থেকে একটা ষড়যন্ত্র ছিল। সেই ষড়যন্ত্র বা রহস্য উদঘাটনে সিআইডি কী পদক্ষেপ করেছে?
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন তাদের তদন্ত রিপোর্ট থেকে জানায়, মৃতের বাবার চিঠি পেয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ডিআইজির নেতৃত্বে ১১ অক্টোবর ইসলামপুর যায়। বারবার রাজ্যকে বলার পরেও কোনো নথি দেওয়া হয়নি। কোনো সহযোগিতা প্রশাসনের না পেয়ে নিজেরাই তদন্ত শুরু করে গ্রামে গিয়ে। তাপস বর্মনের মৃত্যু গুলিতে। উপর দিক থেকে চালানো গুলিতে খুন তাপস। রাজেশ সরকারও গুলিতে খুন। খুব কাছ থেকে ছোড়া গুলিতে খুন। দেহের ভিতরে যাওয়ার পর গুলি ঘুরেছে তাই ভিতরে ছিন্নভিন্ন।রাইফেল থেকে ছুড়লে এমন হতে পারে। পরিমল অধিকারী নামে পুলিশকর্মী গুলিতে জখম বলে দাবি করা হলেও তিনি গুলিতে জখম হননি।
২০০০ পড়ুয়ার স্কুলে বহু শিক্ষক পদ ফাঁকা। অথচ উর্দু শিক্ষক নিয়োগ কেন, এই নিয়েই গোলমাল। সেটা নিয়ে পরে দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে গোলমাল ছড়ায়। স্কুলে শিক্ষকরাও দুটো দিকে ভাগ হয়ে যায়।। রাজ্যের অভিযোগ, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে তদন্ত করেছে। রাজ্যকে কোনো কপিও দেওয়া হয়নি। তাছাড়া ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ অভিযোগ হয়। সেখানে কারোর বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই, এসপি বা বিধায়ক। আবার ২৩ সেপ্টেম্বর ইংরেজিতে লেখা চিঠিতে এসপি সুমিত কুমার, বিধায়কের নাম দেওয়া হয়েছে। সেই চিঠি থানায় নয়, পাঠানো হয়েছে মুখ্য সচিবকে ইমেল করে। ঘটনার দিন বিধায়ক কলকাতায় ছিলেন। এসপিও ঘটনাস্থলে ছিলেন না। তাদের সিকিউরিটি, চালকদের সঙ্গে কথা বলা মোবাইল ফোনের টাওয়ার লোকেশন নেওয়ার পর এই সিদ্ধান্তে এসেছে সিআইডি।
বিচারপতির বক্তব্য, অনেক হয়েছে। আর না। এতদিন ধরে এই ভাবে দুজনের দেহ কবরে রয়েছে। আর না। বৃহস্পতিবার বেলা দুটোয় মামলার পরবর্তী শুনানি।