করিমগঞ্জ (অসম), ১৬ এপ্রিল (হি.স.) : সরকারি শিক্ষকদের সমহারে ভালোভাবে কাজ করেও আজও জীবন সংগ্রামে বিপন্ন টিউটররা। তাই তাঁদের ন্যায্য পাওনা ও অধিকারের জন্য দীর্ঘদিন থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রতিবাদ ও আন্দোলন করে যাচ্ছেন তাঁরা, তবুও আজ পর্যন্ত একই সমস্যায় ভুগছেন তাঁরা। জীবন বদলায়নি তাঁদের।
এবার তাঁদের ন্যায়িক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সমগ্র আসামের টিউটরদের সাথে তাল মিলিয়ে মরণপণ লড়াই করে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়ে করিমগঞ্জ জেলা অ্যাকমডেট টিউটর সংস্থার এক বিশেষ জরুরি সভা আজ রবিবার নগেন্দ্রনাথ এলপি স্কুলে অনুষ্ঠিত হয়।
করিমগঞ্জ জেলার অ্যাকমডেট টিউটর সংস্থার সম্পাদক শতদীপ চক্রবর্তীর পৌরোহিত্যে অনুষ্ঠিত সভায় জেলার টিউটরগণ তাঁদের বিরুদ্ধে সরকারের বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠেন।
সভায় সংস্থার সম্পাদক শতদীপ চক্রবর্তী সহ কয়েকজন টিউটর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তাঁদের দুঃখ-দুর্দশার কথা তুলে ধরে বলেন, সরকার সবসময় টিউটরদের বেতন বৃদ্ধি সহ শিক্ষকের মর্যাদা লাভের ব্যাপারটি শীঘ্রই সুরাহা করে দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়ে টালাবাহনা করে দুই বছরের বেশি সময় পার করে দিয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত সমগ্র অসমের টিউটরদের বেতন বৃদ্ধি সহ শিক্ষকের মর্যাদা লাভের দাবি পূরণের ব্যাপারে কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপ বর্তমান সরকার নেননি। এমন-কি এ সব সমস্যার স্হায়ী সমাধানের দাবি নিয়ে অ্যাকমডেট টিউটর সংস্থার রাজ্য প্রতিনিধিরা অনেকবার মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা ও শিক্ষামন্ত্রী রণোজ পেগু সহ বিভাগীয় আধিকারিকদের দরবারে গিয়ে বার বার স্মারকপত্র প্রেরণ করা সহ বেতন বৃদ্ধির ব্যাপারে আকুল আবেদন করার পরও এখন পর্যন্ত আশ্বাস ছাড়া কিছুই মেলেনি, জানান তাঁরা।
তাছাড়া টিউটরদের বেতন বৃদ্ধির ব্যাপারে বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ, অখিল গগৈ, আমিনুল ইসলাম সহ অন্যান্যরা বিষয়টি বিধানসভার অধিবেশনে উত্থাপন করলেও এখন পর্যন্ত সরকার টিউটরদের মোটামুটিভাবে মাসোহারা বৃদ্ধি করে সাধারণভাবে জীবন-যাপন করার পথ সুগম করে দেয়নি বলেও তাঁরা ক্ষোভের সুরে সভায় বক্তব্য পেশ করেন।
সমগ্র অসমের টিউটরদের বেতন বৃদ্ধির ব্যাপারে সরকার কোনও সঠিক পরিকল্পনা এখন পর্যন্ত গ্রহণ না করায় দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, স্কুল ডিউটি সহ সরকারের কোভিড, ইলেকশন ডিউটি ছাড়াও নানা কাজ সুষ্ঠুভাবে পালন করে আসছেন তাঁরা। এর পরও বিনিময়ে তাঁরা পরিতোষিক পাচ্ছেন অতি সামান্য। যা দিয়ে স্কুলে প্রতিদিন যাতায়াত করা সহ সম্পূর্ণ পেটের ক্ষুধা নিবারণ করার পাশাপাশি নিজেদের ছোট ছোট শিশুদের লালন করে সংসার চালিয়ে যাওয়া খুব দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তাঁরা বলেন, বর্তমানে সরকারের নতুন জারিকৃত নির্দেশিত ট্যাবলেটে উপস্থিতির কড়া ফরমানও তাঁরা সম্পূর্ণভাবে মানতে রাজি আছেন। তার আগে সরকার অন্ততপক্ষে তাঁদের দূর-দূরান্তের স্কুলে পৌঁছার যাতায়াত খরচ সহ পরিবার চালাবার মতো মোটামুটি একটা বেতন বৃদ্ধি করে দিতে তাঁরা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা ও শিক্ষামন্ত্রী রণোজ পেগুর কাছে করজোড়ে সভায় বিনম্র আর্জি রাখেন।
সভায় সর্বসম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সরকার ট্যাবলেটে উপস্থিতি লাগু করার আগে তাঁদের বেতন বৃদ্ধির দাবি জানানো সহ দূরদুরান্তের টিউটরগণকে তাঁদের কাছের কোনও স্কুলে বদলি করার দাবি জানিয়ে করিমগঞ্জের জেলাশাসকের মাধ্যমে আপাতত মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর কাছে স্মারকপত্র প্রেরণ করা হবে। অসম রাজ্য অ্যাকমডেট টিউটর সংস্থার সাথে বসে পরবর্তী কার্যসূচি গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
রবিবারের সভায় উপস্থিত ছিলেন সংস্থার সম্পাদক শতদীপ চক্রবর্তী, টিউটর রাহুল রায়, রামেন্দ্র মালাকার, বানসি গুপ্তা, অঞ্জন দত্ত, আশিস নাগ, হুবাইর আহমেদ চৌধুরী, সেলিম উদ্দিন, সম্পা পাল, প্রদীপ দেব, শংকর রায়, লুৎফর রহমান চৌধুরী, শিলা দাস সহ আরও অনেকে।