ঢাকা, ৩ অক্টোবর (হি.স.): বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারের আড়ালে পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলি বাংলাদেশে সক্রিয় হয়ে উঠছে। পাকিস্তানী চক্রটি সুন্নি ইসলাম প্রতিষ্ঠার নামে বাংলাদেশের চট্টগ্রামের বিবিরহাট সংলগ্ন ষোলশহর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসা আঞ্জুমান তথা গাউছিয়া সংগঠনেকে ব্যবহার করে পাকিস্তানী ভাবধারার রজনীতি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সুন্নীয়ত প্রতিষ্ঠার অন্তরালে নিজেদের কায়েমী স্বার্থ আদায়ের পাশাপাশি বাংলাদেশে পাকিস্তানী ভাবধারার রজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।
সাবের শাহ পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নুন) এর রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং পাকিস্তানের একজন সংসদ সদস্য। বর্তমান পাকিস্তান মুসলিম লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্বে রয়েছে সাবের শাহ, কাশেম শাহরা। এই পীর সাহেবরা জামাত সহযোগী ও পৃষ্ঠপোষক। ক্ষমতাসীন পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নুন) এর শরীক দলের প্রধান হিসেবে পীরে বাঙ্গাল (সাবির শাহ) পাকিস্তান কোয়ালিশন সরকারের অংশিদার। পাকিস্তান মুসলিম লীগের শীর্ষস্থানীয় একজন রাজনীতিক কিভাবে পীরে বাঙ্গাল হয়। এটা প্রশ্ন বাংলাদেশের সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলিম সমাজের। বর্তমান পাকিস্তানের পেশওয়ারের ছিরিকোটের পস্তু ভাষাভাষি অর্থাৎ একটি পাঠান বিশেষ পরিবারের সদস্যদের বংশ পরম্পরায় পরিচালনা করে আসছেন। যাদের সঙ্গে পাকিস্তান সমর্থিত তালেবান সংগঠনের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। তালেবানদের ঘনিষ্ঠতার ছবিও রয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে।
বাংলাদেশের আনজুমানে রহমানিয়া আহমেদিয়া সুন্নিয়া ট্রাষ্ট্রের বিশাল ফান্ড থেকে বড় অংকের একটি অংশ ব্যয় হচ্ছে ট্রাস্টের উর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দের ঘনঘন মধ্যপ্রাচ্য ও পাকিস্তান সফর সম্মানী ভাতা নেওয়া এবং সাবের শাহ- কাশেম শাহদের ঘনঘন বাংলাদেশে আসা-যাওয়ার জন্য। তাঁদেরকে সম্মানী হিসাবে পাঠানো টাকা পাকিস্তানের পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের ছিরিকোটে পাঠানোর ঘটনা সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। তাহের শাহ এবং তার ভাইদের কাছে প্রতিবছরে একাধিক বার পাঠানো টাকার পরিমানের কথা চমকে ওঠার মতো। চট্টগ্রামের রাউজান নোয়াপাড়ার ব্যবসায়ী দুবাই গাউসিয়া কমিটির নেতৃবৃন্দের ও দুবাই এক বিখ্যাত একটি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্ক্সশপের মালিক, সাবের শার বাবা তাহের শাহ এর একজন ঘনিষ্ঠ মুরিদ। এই গ্রুপটি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্ক্সশপের মালিকের মাধ্যমে ২০১০ সালে পাকিস্তানের উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের তালেবান অধ্যুষিত অ্যাবোটাবাদ জেলার ছিরিকোটে তাহের শাহেব নামে মাত্র ৩ মাসের ব্যবধানে ৪০ লক্ষ দেরহাম পাঠিয়েছিল। যা মার্কিন গোয়েন্দাদের নজরে আসলে আরব আমিরাত, পাকিস্তানসহ গোটা মার্কিন মুলুকে তোলপাড় সৃষ্টি করেছিল। আমেরিকার অনুরোধে আরব আমিরাত সরকার বাংলাদেশী মালিকাধিন ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্ক্সশপের মালিককে গ্রেফতার করে ব্যাপক তদন্ত চালিয়েছিল। ঐ টাকা পাকিস্তানের তালেবান যোদ্ধাদের হাতে পাঠানো হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখার জন্য। বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠিত গ্লাস ফ্যাক্টরির মালিকের তত্তাবধানে সার্বিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে এবং সাবের শাহ, কাশেম শাহরা আসলে সেখানেই গোপন বৈঠক করেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। প্রতি বছর আঞ্জুমান তথা গাউসিয়া কমিটির বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ পাকিস্তানের ছিরিকোটে তাহের শাহ এর পরিবারের কাছে বা এর চেয়ে বেশি পরিমাণ পাঠানো টাকা কোন জঙ্গি গোষ্ঠীর হাতে যাচ্ছে কি না সে-ব্যাপারে তদন্তের প্রয়োজন বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
উল্লেখ্য, পাকিস্তানের এই অ্যাবোটাবাদেই আল কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেন তার সুরক্ষিত আস্তানায় ২০১১ সালের ১মে মার্কিনীদের হামলায় নিহত হন। পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় একজন রাজনীতিবিদ মাসের পর মাসে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে অবাদে কোটি কোটি টাকা পাকিস্তানে পাচার করাকে ভালো ভাবে দেখছেন না বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক মুসলিম নাগরিকরা। পীরের আড়ালে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইর হয়ে তিনি বাংলাদেশের স্বার্থহানির কাজে লিপ্ত হচ্ছেন কি-না সেব্যাপারে তদন্তের দাবি করছেন ধর্মপ্রাণ মুসলিম সমাজ।
2022-10-03