কলকাতা, ২৭ সেপ্টেম্বর (হি. স.) : দুর্গাপুজোকে ভিত্তি করে রাজনীতির লড়াই এবার এ রাজ্যে তীব্রতর হয়েছে। রাজ্যের শাসকদল যদিও কেন্দ্রের শাসকদলের চেয়ে বেশ কয়েক কদম এগিয়ে, তবু চেষ্টার ত্রুটি নেই বিজেপি-র।
বিধানসভা নির্বাচনে কাঙ্খিত লক্ষ্যের ধারেকাছে না পৌঁছলেও দুর্গা পুজোকে হাতিয়ার করেই ফের একবার বাঙালি ভাবাবেগকে ছুঁতে চায় বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব৷ এর আগে রাজ্যে ভোট প্রচারে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে দুর্গা পুজোর আয়োজনে অসহযোগিতার মতো গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ২০২০ সালেও কলকাতায় পুজো উদ্বোধনে এসেছিলেন অমিত শাহ। সেই বার সল্টলেক বিজে ব্লকের একটি পুজোর উদ্বোধন করেছিলেন তিনি। এবারেও রাজ্যে আসতে পারেন বলে এখনও বাজারে খবর।
পুজোর আগে চলছে বিজেপি-র সেবা পক্ষকাল কর্মসূচি। এ তালিকায় রয়েছে বৃক্ষরোপণ, স্বচ্ছতা মিশন, রক্তদান শিবির-সহ একগুচ্ছ কর্মসূচি। বিজেপির দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে সেই কর্মসূচি শুরু হয়েছে। ২ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। এই কর্মসূচি সেরেই বিজেপির নেতারা পুজোকে কাজে লাগিয়ে জনসংযোগে নেমেছে বলে বিজেপির দলীয় সূত্রে খবর।
এক সময়ে তৃণমূলের দু’নম্বর গুরুত্বপূর্ণ নেতা মুকুল রায় দলনেত্রীর সঙ্গে মন কষাকষির পর ২০১৭-তে প্রকাশ্যেই অভিযোগ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংখ্যালঘুদের খুশি করার রাজনীতি করছেন। বাধা দিচ্ছেন দুর্গা ও লক্ষীপুজোয়। এর পর অমিত শায়ের নির্দেশ পেয়ে কলকাতার পুজোয় বিজেপি-র প্রভাব বাড়াতে চেষ্টা করেও সফল হননি। ফের ফিরে যান তৃণমূলেই। এবার বিজেপির দুর্গা পূজোতে বঙ্গ রাজনীতির ছোঁয়া লাগতে চলেছে পুরোদমে।
রবিবার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী একাধিক বস্ত্র বিতরণ শিবিরে অংশ নিয়েছেন। দলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক প্রিয়ঙ্কা টিবরেওয়াল ব্যস্ত ছিলেন বিভিন্ন বস্ত্র-ফল-রুটি বিতরণ শিবিরে। সোমবার মহালয়ায় টুইটারে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
একাধিক জায়গায় পুজোর উদ্বোধন করেছেন মিঠুন চক্রবর্তী। মঙ্গলবার সকাল থেকেই বিজেপি-র নেতাকর্মীদের একাংশ ব্যস্ত এই পুজো নিয়ে। সুকান্ত মজুমদার দিনের প্রথমার্দ্ধেই চূঁচড়ায় ব্যস্ত প্রাক পুজো সম্মেলনে। বিকেলে পুজোর উদ্বোধন হাওড়ার ইছাপুর শিয়ালডাঙায়। সন্ধ্যায় তারক প্রামাণিক রোডের বস্ত্র বিতরণে। অন্যদিকে দলের সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ ব্যস্ত উত্তর ২৪ পরগণার হিঙ্গলগঞ্জে মামুদপুর-কেওড়াখালির পুজো উদ্বোধনে। তার আগে টাকিতে রক্তদান শিবির।
বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল আসানসোলের ওয়ার্ড ৮০ (পূর্ণিয়া তালাব), ওয়ার্ড ৯৫ (শ্যামবাঁধ হনুমান মন্দির ), ওয়ার্ড ৯৬, ওয়ার্ড ৯৭, ওয়ার্ড ৯৯ (নরসিংহবাঁধ)-এ বসিয়েছেন বস্ত্রদান শিবির। রাহুল সিনহা সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যার, নারকেলডাঙার গিরিশ বিদ্যারত্ন লেনে পুজোর উদ্বোধনের পর থাকবেন তারক প্রামাণিক রোডের বস্ত্রদান শিবিরে। গিরিশ বিদ্যারত্ন লেনের এই পুজোর থিম ভোট পরবর্তী হিংসা। নিহত বিজেপি কর্মী অভিজিৎ সরকারের দাদা এবং বন্ধুরা মূল উদ্যোক্তা। এবছর সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার তাঁদের পুজোয় স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মসূচি ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’কে তুলে ধরছে।
এবার, রাজ্য বিজেপির পুজোর থিম “বাংলায় নারী নির্যাতনের ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়া।” এক কথায় বঙ্গে মহিলা নির্যাতন। এই থিমকে মাথায় রেখেই এবার সল্টলেকের পূর্বাঞ্চলীয় সংস্কৃতি-কেন্দ্রে বিজেপির পূজো পরিকল্পনা। পুজোর থিমের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই, এবার পুজোয় মহিলা পুরোহিত থেকে শুরু করে পুজোর আয়োজনের যাবতীয় দায়িত্বে মহিলারা। সৌজন্যে রাজ্য বিজেপির মহিলা মোর্চা।বিজেপির দূর্গাকে মর্তে আবাহন করে যিনি আনবেন তার নাম সুলতা মণ্ডল। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের জেলার গঙ্গারামপুরের মেয়ে।
গরু পাচার মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা বীরভূমের দাপুটে নেতা অনুব্রত মণ্ডল। এর পরেই অনুব্রতের না থাকার সুযোগ কাজে লাগাতে চাইছেন বিরোধী দলের নেতারা। এই পরিস্থিতিতে দুর্গাপুজোর মতো বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবকে হাতছাড়া করতে নারাজ গেরুয়া শিবির। বিজেপি দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে সমস্ত স্তরের নেতাদের নিজের নিজের এলাকার ক্লাব বা পুজো উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা, নিয়মিত সেখানে যাওয়া এবং পুজোর কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

