কলকাতা, ২৯ মার্চ (হি. স.) : রাজ্য ব্যবস্থা নেওয়ার পরও বগটুইয়ে সিবিআই নামাতে হল কেন, তা নিয়ে গোড়া থেকেই প্রশ্ন তুলছে তাঁর দল। রাজনৈতিক স্বার্থে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে এ বার সরব হলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এর বিরুদ্ধে একজোট হতে তাই সব অন্য রাজ্যের অ-বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী এবং বিরোধী দলনেতাদের চিঠি দিলেন তিনি।
মঙ্গলবার অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেসের টুইটারে ওই চিঠি প্রচার করা হয়। মমতার অভিযোগ, সরাসরি দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের উপর আঘাত করছে শাসকদল বিজেপি। রাজনৈতিক স্বার্থ প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট, সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন, সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশন এবং আয়কর দফতরের মতো কেন্দ্রীয় সংস্থাগুকে দেশের সর্বত্র বিরোধীদের নিশানা, হেনস্থা এবং কোণঠাসা করতে ব্যবহার করা হচ্ছে।
শুধুমাত্র ভোটের রাজনীতিতেই নয়, সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে বিরোধীরা ওয়াকআউট করা সত্ত্বেও বুলডোজার চালিয়ে দিল্লি স্পেশ্যাল পুলিশ (সংশোধনী) বিল ২০২১, সিভিসি (সংশোধনী) বিল ২০২১ পাশ করিয়ে নেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন মমতা। বিজেপি-র হাতে কেন্দ্রীয় সংস্থার অপব্যবহার রুখতে তাই বিরোধীদের একজোট হওয়ার বার্তা দিয়েছেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘ভোটের মুখেই কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে। এটা পরিষ্কার যে, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে শাসনব্যবস্থা যতই ফাঁপা হোক না কেন, কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির কাছ থেকে তারা ছাড়পত্র পেয়ে যায়। আমরা স্বচ্ছ এবং দায়িত্বশীল শাসনকার্যে বিশ্বাসী। বিজেপি-র এই প্রতিহিংসার রাজনীতি বরদাস্ত করব না, যার মাধ্যমে বিরোধীদের কার্যত বিরোধী শিকারে বেরিয়েছে তারা।’’
মমতা জানিয়েছেন, দেশের বিচারব্যবস্থার উপর পূর্ণ আস্থা রয়েছে তাঁর। কিন্তু বর্তমানে পক্ষপাতিত্বমূলক রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে ন্যায় বিচার মিলছে না, যা গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক। বিজেপি দেশের যুক্রাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোয় আঘাত হানার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করেন মমতা। তিনি লেখেন, ‘গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোকে ধরে রাখতে দেশে বিচারব্যবস্থা, সংবাদমাধ্যম, এবং সাধারণ মানুষ স্তম্ভের ভূমিকা পালন করেন। তার মধ্যে একটিও নড়বড়ে হয়ে উঠলে গোটা পরিকাঠামোই ভেঙে পড়ে। বিজেপি এই যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোটিকেই ভাঙে ফেলার চেষ্টা করছে। যে কারণে বিচারব্যবস্থার একাংশকে প্রভাবিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।’
সাংবিধানিক দায়িত্ব মেনে তাই বিরোধীদের বিজেপি-র বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে আহ্বান জানিয়েছেন মমতা। যে ভাবে বিরুদ্ধমতের কণ্ঠস্বর রোধের চেষ্টা চলছে, তার জন্য সরকারকে দায়ী করতে হবে বলে জানান তিনি। এ নিয়ে কৌশল রচনার জন্য সব বিরোধী শিবিরকে একছাতার নীচে এনে বৈঠকেরও প্রস্তাব দিয়েছেন মমতা। শাসনকার্যের নামে বিজেপি-র এই নিপীড়নকে রুখতে হলে প্রগতিশীল চিন্তা-ভাবনাকারী সব পক্ষকে একজোট হওয়ার বার্তা দেন তিনি। বিরোধীদের মমতার আর্জি, ঐক্যবদ্ধ এবং নীতিবদ্ধ বিরোধী জোট গড়ে তুলতে হবে। তবেই উপযুক্ত সরকার উপহার দেওয়া যাবে দেশকে।