আগরতলা, ১৯ জানুয়ারি : মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধ সম৷ ত্রিপুরায় দেববর্মা, ত্রিপুরা, রিয়াং, জমাতিয়া, নোয়াতিয়া, কলই সহ বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর প্রায় আট লক্ষ মানুষ ককবরক ভাষায় কথা বলেন। বাঙ্গালীদের মধ্যেও অনেকেই ককবরক ভাষায় অভ্যস্ত। মনের ভাব প্রকাশের ভাষা যদি দুর্বল হয়ে যায় তা অত্যন্ত দুঃখজনক। সেদিকে লক্ষ্য রেখে বিভিন্ন ভাষা চর্চার প্রসারে গুরুত্ব আরোপ করেছে রাজ্য সরকার। আজ রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে আয়োজিত ৪৪তম ককবরক সাল-২০২২ শীর্ষক অনুষ্ঠানে একথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী রতন লাল নাথ।
তিনি বলেন, রাজ্যে অনেকদিন ধরেই ককবরক ভাষায় সাহিত্যের চর্চা ও বই প্রকাশ হয়ে আসছে। এর ফলে ককবরক ভাষার প্রসার অনেকটাই সুনিশ্চিত হয়েছে। ককবরক ভাষার উপরে বর্তমানে বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষও গবেষণা এবং চর্চা করছেন। ককবরক ভাষার প্রচার ও প্রসারে বিভিন্ন ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে রাজ্য সরকার। সাথে তিনি যোগ করেন, মাধ্যমিক থেকে মাস্টার ডিগ্রি পর্যন্ত বোর্ডের পরীক্ষায় ককবরকে সর্বোচ্চ স্থানাধিকারীদের সম্মাননা জানানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ককবরক ভাষা ও সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য দুটি স্মৃতি পুরস্কার চালু করা হয়েছে। ককবরক ভাষায় শিক্ষা গ্রহণে চাকরি ও রোজগারের নিশ্চয়তা এসেছে।
তাঁর দাবি, প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত ৪৫টি বিদ্যালয়কে প্রাথমিকভাবে ককবরক ভাষা চালু করা হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের ককবরক ভাষা চর্চার বিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। টিআরবিটি’র মাধ্যমে পিজিটি শিক্ষক নিয়োগে অনেক কৃতিরা উঠে আসছেন। টিপিএসসি’র মাধ্যমে ২২ জন সহকারী অধ্যাপক নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাঁর কথায়, ককবরক ভাষা ও অন্যান্য সংখ্যালঘু ভাষা অধিকার এর তরফে ককবরক ভাষা প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ককবরক শিক্ষা প্রদানে শিক্ষকের সহায়তায় ককবরক টিচার্স হ্যান্ড বুক প্রকাশ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ককবরক এর পাশাপাশি অন্যান্য ভাষার প্রসারে সরকার আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। গবেষণার সুযোগ সম্প্রসারিত হয়েছে। নিয়োগের ক্ষেত্রেও প্রাধান্য পাচ্ছে ককবরক ভাষা। সরকারি প্রেস রিলিজ, সরকারি প্রকল্পের প্রচারেও ককবরক ভাষা যুক্ত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে জনজাতি কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী মেবার কুমার জমাতিয়া বলেন, ত্রিপুরা সহ দেশের বাইরেও ককবরক ভাষা চর্চা বিদ্যমান। সব মিলিয়ে প্রায় ১৫ থেকে ২০ লক্ষ মানুষ এই ভাষায় কথা বলেন। এই ভাষার এক গৌরব উজ্জ্বল অতীত রয়েছে। সমৃদ্ধ ককবরক ভাষায় বস্তুভেদে গণনা পদ্ধতিও অভিনব। তাঁর বক্তব্য, রাজ্য সরকার ককবরক ভাষার প্রচার ও প্রসারে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। বাইশটি সাধারণ ডিগ্রী কলেজর ককবরক সহকারি অধ্যাপক নিয়োগের উদ্যোগ এক উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। প্রতি বছর ভালো সংখ্যায় ছাত্রছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ককবরক বিষয়ে মাস্টার ডিগ্রী সম্পন্ন করছেন।

