আগরতলা, ২৭ নভেম্বর (হি. স.) : উন্মত্ত ব্যক্তির নৃশংসতার শিকার হয়েছেন দুই শিশু কন্যা ও পুলিশ আধিকারিক সহ পাঁচজন৷ বধ্যভূমি ত্রিপুরায় খোয়াই জেলায় উত্তর রামচন্দ্রঘাট এলাকায় ভিড় চৌমুহনীর শেওরাতলি৷ শুক্রবার গভীর রাতে প্রদীপ দেবরায় তাঁর দুই অবুঝ সন্তান মন্দিরা দেব রায় ও আরতি দেব রায়, বড় ভাই অমলেশ দেব রায়, অটো যাত্রী কৃষ্ণ দাস এবং খোয়াই থানার সেকেন্ড অফিসার সত্যজিত মল্লিককে শাবল দিয়ে এলোপাথারি আঘাত দিয়ে খুন করেছে৷ তাঁর স্ত্রী মিনা পাল দেব রায় এবং অটো যাত্রী কর্ণবীর দাসকেও খুনের চেষ্টা করেছে৷ তাঁরা বর্তমানে আশঙ্কাজনক অবস্থায় জিবি হাসপাতালে চিকিত্সাধীন রয়েছেন৷ত্রিপুরা পুলিশের মহানির্দেশক ভি এস যাদব জানিয়েছেন, উন্মত্ত ওই ব্যক্তিকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে৷ তাঁর নৃশংস আক্রমণ প্রতিরোধ করতে গিয়ে খোয়াই থানার পুলিশ আধিকারিক শহীদ হয়েছেন৷ খোয়াই জেলা পুলিশ সুপার কিরণ কুমার রাও বলেন, ওই ব্যক্তি গতকাল বিকেলেও স্বাভাবিক ছিলেন৷ তবে, তিনি দুয়েক দিন ধরে মানসিক অবসাদগ্রস্তের মতো আচরণ করছিলেন, স্থানীয় জনগণের রিপোর্টে এমনটা পুলিশ জানতে পেরেছে৷ কর্বত্যরত অবস্থায় পুলিশ আধিকারিক সত্যজিত মল্লিকের শহীদ হওয়ার গভীরভাবে মর্মাহত হয়েছেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ণ মন্ত্রকের রাষ্ট্র মন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিকও ওই ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন৷ খোয়াই জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাজীব সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, শহীদ সত্যজিত মল্লিকের শেষকৃত্য পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পন্ন হবে৷
শুক্রবার রাত খোয়াই জেলায় শেওরাতলি এলাকা নৃশংস হত্যালীলার সাক্ষী রইল৷ নৃশংসতা এতটাই কঠোর স্থানীয় জনগণ তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছেন না৷ জন্মদাতা পিতা নিজের সাত বছরের কন্যা সন্তান এবং এক বছর বয়সী কন্যা সন্তানকে শাবল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে৷ খুনি প্রদীপ দেব রায়ের নৃশংসতায় হতবাক হয়ে পরেন তার স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যরা৷ খোয়াই জেলা পুলিশ সুপার স্থানীয় জনগণের উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, শুক্রবার রাত ১১তা নাগাদ নিজ ঘরেই প্রথমে বড় মেয়ে মন্দিরা দেব রায় এবং কোলের শিশু ছোট মেয়ে আরতি দেব রায়কে শাবল দিয়ে এলোপাথারি কুপিয়ে খুন করেছে প্রদীপ৷ তার স্ত্রী মিনা পাল দেব রায় এগিয়ে আসলে তাকেও শাবল কুপিয়েছে প্রদীপ৷ চিত্কার শুনে বড় ভাই অমলেশ দেব রায় ছুটে আসেন৷ তাকেও শাবল দিয়ে এলোপাথারি আঘাত করেন প্রদীপ৷ তাতে বাড়ির ভেতরেই দুই কন্যা সন্তান ও তার বড় ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে৷ পুলিশ সুপার আরও বলেন, বাড়িতে হত্যাযজ্ঞ শেষ করে প্রতিবেশীদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়েছিল প্রদীপ৷ সেখান থেকে রাস্তায় ছুটে গিয়ে একটি অটোতে হামলা চালিয়েছিলেন তিনি৷ অটোতে থাকা এক যাত্রী কৃষ্ণ দাস তার আক্রমনে নিহত হন৷ ওই যাত্রীর ছেলে কর্ণবীর দাসও গুরুতর আহত হয়েছেন৷ খবর পেয়ে খোয়াই থানার সেকেন্ড অফিসার সত্যজিত মল্লিক ছুটে যান৷ তাকে লাঠি দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করেন৷ কিন্ত, তার এলোপাথারি আক্রমনে পুলিশ আধিকারিক গুরুতর আহত হন এবং হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান৷ তিনি বলেন, থানার অন্যান্য পুলিশ কর্মীকে তাকে কোনক্রমে আটক করতে সক্ষম হন৷ বর্তমানে তাকে খোয়াই থানায় রাখা হয়েছে৷ আজকেই তাকে হাসপাতালে সোপর্দ করবে পুলিশ৷
পুলিশ গতকাল আহতদের উদ্ধার করে খোয়াই জেলা হাসপাতালে ভর্তি করেছিল৷ কিন্ত কর্তব্যরত চিকিত্সকরা তাঁদের অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে তাঁদের জিবি হাসপাতালে স্থানান্তর করেছেন৷ এদিকে, শহীদ পুলিশ আধিকারিক সহ নিহতদের খোয়াই হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে৷ তাঁদের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে৷ শহীদ পুলিশ আধিকারিকের মরদেহ আজ দুপুরে আগরতলায় ইন্দ্রনগরস্থিত নিজ বাড়িতে আনা হবে৷ পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁর শেষকৃত্ব সম্পন্ন হবে৷ওই ঘটনায় ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, নিষ্ঠার সঙ্গে নিজের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে উন্মত্ত এক দুর্বৃত্তের হামলায় খোয়াই থানার সেকেন্ড অফিসার সত্যজিৎ মল্লিকের শহীদ হওয়ায় আমি গভীরভাবে মর্মাহত। নিষ্ঠাবান এই পুলিশ অফিসার সহ এই ঘটনায় নিহত প্রত্যেকের আত্মার সদগতি কামনা করছি। পরিবার পরিজনদের প্রতি জানাই আমার গভীর সমবেদনা। ঈশ্বরের কাছে আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।

