গতানুগতিক শিল্পকর্ম থেকে বেরিয়ে উদ্ভাবনী শিল্প কর্মের প্রতি মনোযোগী হতে হবে: মুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৯ ডিসেম্বর: ত্রিপুরার হস্ততাঁত ও হস্তকারু শিল্প রাজ্যের গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি এই রাজ্যের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। হস্ততাঁত ও হস্তকারু শিল্পের উন্নয়নে রাজ্য সরকার বিভিন্ন পরিকল্পনা রূপায়ণ করছে। আজ সচিবালয়ে ত্রিপুরা হস্ততাঁত ও হস্তকারু শিল্প উন্নয়ন নিগম লিমিটেড-এর এক পর্যালোচনা বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন।

বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী নিগমের সার্বিক কাজকর্ম পর্যালোচনা করে বলেন, হস্ততাঁত ও হস্তকারু শিল্প পণ্যের উৎপাদন, মান নিয়ন্ত্রণ, ব্যবসার উন্নয়ন ও বিপনণ এই প্রতিটি স্তরে পেশাদারিত্ব ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আধুনিক এবং ঐতিহ্যবাহী ডিজাইন সংযোজনের মাধ্যমে পণ্যের গ্রহণযোগ্যতা আরও বৃদ্ধি করতে হবে। এক্ষেত্রে বাইরে থেকে বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষক এনে প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উপর জোর দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী আধিকারিকদের পরামর্শ দেন। তিনি গতানুগতিক শিল্পকর্ম থেকে বেরিয়ে উদ্ভাবনী শিল্প কর্মের প্রতি মনোযোগী হওয়ার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের পণ্য কিনতে আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের উপরও গুরুত্ব আরোপ করেন। বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী পণ্যের ডিজাইন উন্নয়ন, মান নিয়ন্ত্রণ, ব্র্যান্ডিং প্রক্রিয়াকে আরও শক্তিশালীকরণ, কারিগরদের দক্ষতা বৃদ্ধি, আধুনিক উদ্ভাবনী ডিজাইনের সঙ্গে পরিচয় ঘটানো, প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উপর জোর দেওয়ার জন্য উপস্থিত আধিকারিকদের নির্দেশ দেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের রিসা এবং রাজ্যের হস্ততাঁত ও হস্তকারু শিল্পের বিরাট কদর রয়েছে। এগুলি আমাদের রাজ্যের ঐতিহ্য। এই সব পণ্যের মান আরও কিভাবে বৃদ্ধি করা যায় এবং বিশ্বের দরবারে তুলে ধরা যায় সেই বিষয়ে আরও বেশী করে উদ্যোগী হতে হবে। রাজ্যের বিশেষ করে জনজাতি অংশের ছেলেমেয়েদের মধ্যে এই বিষয়ে অনেক মেধা রয়েছে। এক্ষেত্রে তাদের মেধাকে কাজে লাগানোর কথাও মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

আজকের বৈঠকের শুরুতে সচিত্র প্রতিবেদনের মাধ্যমে নিগমের আর্থিক অবস্থা, উৎপাদন ক্ষমতা, পণ্য বিক্রয়ের অগ্রগতি, চলমান প্রকল্পসমূহ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন হস্ততাঁত ও হস্তকারু শিল্প উন্নয়ন নিগম লিমিটেড-এর চেয়ারম্যান তথা সচিব এল টি ডার্লং। বৈঠকে হস্ততাঁত ও হস্তকারু শিল্প উন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মা, মুখ্যমন্ত্রীর সচিব ড. পি কে চক্রবর্তী, শিল্প দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে এবং দপ্তরের এমডি অজিত শুরুদাস সহ অন্যান্য উচ্চপদস্থ আধিকারিকগণ উপস্থিত থেকে আলোচনা করেন।

এই সভার পর মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহার সভাপতিত্বে ত্রিপুরা খাদি ভিলেজ ইন্ডাস্ট্রি বোর্ডের পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। পর্যালোচনা সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সারা দেশেই খাদির পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আত্মনির্ভর ভারত গঠনের লক্ষ্যে খাদি ভিলেজ ইন্ডাস্ট্রির উৎপাদিত পণ্যের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। তাই সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে মানুষের চাহিদা অনুযায়ী খাদির উৎপাদিত পণ্যের গুণগতমান, ডিজাইন প্রভৃতি ঠিক করতে হবে। এর পাশাপাশি পণ্য বিক্রয়ের জন্যও পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। রাজ্যে একটি দেশলাই কারখানা গড়েতোলার বিষয়েও মুখ্যমন্ত্রী গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি ত্রিপুরা খাদি ভিলেজ ইন্ডাস্ট্রি বোর্ডের পরিচালন ব্যবস্থা, পণ্য উৎপাদন, পণ্য বিক্রয়, আর্থিক অবস্থা প্রভৃতি বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ খবর নেন। এবিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে বিস্তারিত অবহিত করেন খাদি বোর্ডের ডিরেক্টর ড. দীপক কুমার। শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে, খাদি বোর্ডের সিইও সহ পদস্থ আধিকারিকগণ আলোচনায় অংশ নেন।

Leave a Reply