সাব্রুম, ২৬ ডিসেম্বর: রাজ্য জুড়ে প্রতিদিনই বাড়ছে পথ দুর্ঘটনা। একের পর এক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। ফলে বহু পরিবার সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ছে। রাজ্য সরকার যান দুর্ঘটনা রুখতে নতুন ট্রাফিক আইন প্রণয়ন, কড়া নজরদারি ও নিয়মিত টহলদারির নির্দেশ দিলেও বাস্তব চিত্রে ধরা পড়ছে ভিন্ন বাস্তবতা—বিশেষত দক্ষিণ ত্রিপুরার সাব্রুম ও মনুবাজার থানাধীন এলাকায়।
স্থানীয় বুদ্ধিজীবী মহল ও সাধারণ মানুষের অভিযোগ, সাব্রুম ও মনুবাজার থানার নাকের ডগা দিয়েই দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় সড়ক ও গ্রামীণ পাহাড়ি রাস্তায় মালবাহী (ডি.আই) গাড়িতে গাদাগাদি করে বহন করা হচ্ছে শত শত হতদরিদ্র শ্রমিককে। অভিযোগ উঠেছে, এডভেন্ড ওয়েলফিল্ড সার্ভিস নামে এক বহিঃরাজ্যভিত্তিক বেসরকারি ঠিকাদার সংস্থা—যারা ওএনজিসি – এর বরাদপ্রাপ্ত কাজ পরিচালনা করছে—এই বিপজ্জনক শ্রমিক পরিবহনের সঙ্গে যুক্ত।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মনুবাজার থানার কাছাকাছি সাতচাঁদ আর.ডি. ব্লক সংলগ্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন সকাল সাতটা থেকে ন’টার মধ্যে মালবাহী গাড়িতে পশুর মতো গাদাগাদি করে শ্রমিকদের কাজের স্থলে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সন্ধ্যায় একইভাবে ফেরত আনা হয়। অথচ এই পুরো প্রক্রিয়া চললেও সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশের পক্ষ থেকে কোনও কার্যকর হস্তক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ।
এলাকাবাসীর প্রশ্ন—যেখানে সামান্য ওভারলোড, হেলমেট না থাকা বা কাগজপত্রের ত্রুটিতে পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে জরিমানা করছে, সেখানে কীভাবে প্রকাশ্যে মালবাহী গাড়িতে মানব পরিবহন চলতে পারে? যদি এই ধরনের কোনও গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে, তবে ওই শ্রমিকদের জীবন ও নিরাপত্তার দায়ভার কে নেবে? তাঁদের কি কোনও বীমা বা ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা রয়েছে?
বুদ্ধিজীবী মহলের মতে, এ ধরনের অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমিক পরিবহন শুধুমাত্র ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন নয়, এটি মানবাধিকার লঙ্ঘনেরও শামিল। প্রশাসনের নীরবতা ভবিষ্যতে বড়সড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়াচ্ছে বলে মনে করছেন তাঁরা।
এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে—কোথায় সাব্রুম মহকুমা প্রশাসন? কোথায় দক্ষিণ জেলার পুলিশ আধিকারিকদের নজরদারি? কোনও দুর্ঘটনায় যদি হতদরিদ্র শ্রমিকদের প্রাণহানি ঘটে, তবে তাঁদের পরিবার-পরিজনের দায়িত্ব কে নেবে?
এ বিষয়ে প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সংস্থার পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে এলাকাবাসীর দাবি, অবিলম্বে এই অনিয়ম বন্ধে প্রশাসনকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে, না হলে আগামী দিনে বড়সড় দুর্ঘটনা অনিবার্য।টি

