ওড়িশায় শীর্ষ তেলুগু মাওবাদী নেতা নিকেশ, বড় সাফল্য নিরাপত্তা বাহিনীর

হায়দরাবাদ, ২৫ ডিসেম্বর :
ওড়িশায় বড়সড় সাফল্য পেল নিরাপত্তা বাহিনী। বৃহস্পতিবার যৌথ অভিযানে শীর্ষ তেলুগু মাওবাদী নেতা গণেশ উইকে (৬৯) নিহত হয়েছেন। তিনি সিপিআই (মাওবাদী)-র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং ওড়িশায় সংগঠনের কার্যকলাপের প্রধান ছিলেন। সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ও কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ বাহিনী (সিআরপিএফ)-এর যৌথ অভিযানে কন্ধমাল ও গঞ্জাম জেলার সীমান্তবর্তী রামপা বনাঞ্চলে এই এনকাউন্টার হয়।

এই অভিযানে আরও তিন মাওবাদী নিহত হয়েছে, যার মধ্যে দু’জন মহিলা ক্যাডার। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে মাওবাদী আন্দোলনের বিরুদ্ধে এটি অন্যতম বড় আঘাত বলে মনে করা হচ্ছে। এর ফলে ওড়িশায় সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্ব কার্যত ভেঙে পড়ল বলে নিরাপত্তা সূত্রের দাবি।

বৃহস্পতিবার সকাল প্রায় ৯টা নাগাদ রম্ভা বনাঞ্চলে একটি সশস্ত্র মাওবাদী দলের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর মুখোমুখি সংঘর্ষ শুরু হয়। মাওবাদীরা প্রথমে গুলি চালায়, যার পর তীব্র গুলির লড়াই শুরু হয়। দুপুর নাগাদ ঘটনাস্থল থেকে চার মাওবাদীর দেহ উদ্ধার করা হয়, যার মধ্যে গণেশ উইকের দেহও ছিল।

অভিযানস্থল থেকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। এর মধ্যে দুটি ইনসাস রাইফেল এবং একটি .৩০৩ রাইফেল রয়েছে, যা নিহত দলের উচ্চস্তরের অবস্থানকে নির্দেশ করে।

গণেশ উইকের মাথার দাম ছিল ১ কোটি ১০ লক্ষ টাকা। তিনি সিপিআই (মাওবাদী)-র হাতে গোনা কয়েকজন অবশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যের একজন ছিলেন। নালগোন্ডা (তেলঙ্গানা) জেলার বাসিন্দা উইকে ‘পাক্কা হনুমন্তু’, ‘রাজেশ তিওয়ারি’ ও ‘রূপা’—সহ একাধিক ছদ্মনামে পরিচিত ছিলেন।

প্রায় চার দশকের বেশি সময় ধরে তিনি দণ্ডকারণ্য স্পেশাল জোনাল কমিটি (ডিকেএসজেডসি)-তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ও তথাকথিত ‘রেড করিডোর’-এর বিভিন্ন অঞ্চলের স্থানীয় ইউনিটগুলির মধ্যে মূল সেতুবন্ধন ছিলেন তিনি। নিরাপত্তা সংস্থার মতে, পূর্বঘাটে মাওবাদী সংগঠন বিস্তারের ‘মস্তিষ্ক’ ছিলেন উইকে।

বর্তমানে মাওবাদীদের কেন্দ্রীয় কমিটির মাত্র তিনজন সদস্য অবশিষ্ট ছিলেন—গণেশ উইকে (ওড়িশা), মল্লারাজি রেড্ডি ওরফে সংঘম (ছত্তীসগঢ়) এবং আনন্দা ওরফে তুফান (ঝাড়খণ্ড)। বৃহস্পতিবার নিহত বাকি তিন মাওবাদীর পরিচয় যাচাই করা হচ্ছে।

এই অভিযানের ফলে ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে দেশকে মাওবাদীমুক্ত করার কেন্দ্রের লক্ষ্যের আরও কাছাকাছি পৌঁছনো সম্ভব হল বলে মনে করছে প্রশাসন। চলতি বছরেই একের পর এক শীর্ষ মাওবাদী নেতা নিহত হওয়ায় কেন্দ্রীয় কমিটির শক্তি উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। মে মাসে সাধারণ সম্পাদক বাসবরাজ এবং নভেম্বরে কমান্ডার মাদভি হিদমার নিহত হওয়ার পর এবার গণেশ উইকের মৃত্যু সংগঠনের জন্য বড় ধাক্কা।

এক শীর্ষ আধিকারিক বলেন, “এটি আমাদের বাহিনীর ঐতিহাসিক সাফল্য। ১.১ কোটি টাকার মাথার দাম থাকা নেতাকে নিকেশ করা মানে এই অঞ্চলে মাওবাদী সংগঠনের মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া।”

Leave a Reply