রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা ও গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ প্রদেশ কংগ্রেসের

আগরতলা, ২৫ ডিসেম্বর:
রাজ্যে ক্রমবর্ধমান আইনশৃঙ্খলার অবনতি, গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ, বিরোধী রাজনৈতিক কর্মসূচির উপর হামলা, নারী নির্যাতন ও খুনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেস। বুধবার এক বিবৃতিতে রাজ্যের সামগ্রিক পরিস্থিতিকে “ভয়াবহ ও উদ্বেগজনক” বলে উল্লেখ করা হয়।

প্রদেশ কংগ্রেসের অভিযোগ, রাজ্যে সংবাদ ভবন ও সাংবাদিকদের উপর আক্রমণ, বিরোধী দলগুলোর রাজনৈতিক কর্মসূচি বানচাল করা, দলীয় কার্যালয়, বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, খুনের চেষ্টা ও খুনের ঘটনা বেড়েই চলেছে। পাশাপাশি নারী নির্যাতনের ঘটনা—ধর্ষণ, গণধর্ষণ, আগুনে পুড়িয়ে হত্যার মতো বর্বরোচিত অপরাধ রাজ্যে ভয়ংকর আকার নিয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সাধারণ নাগরিকদের স্বাধীন ব্যবসা, জীবিকা ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রাও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শাসক জোটের মাফিয়াদের দৌরাত্ম্যে জমি ও ঠিকাদারি সংক্রান্ত হিংসা, অবৈধ নেশা দ্রব্য ও মানব পাচার বেড়েই চলেছে। এমনকি শাসক দলের মধ্যেও ক্ষমতা ও অর্থ লুটকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ বাড়ছে বলে অভিযোগ।

এই পরিস্থিতির মধ্যেও মুখ্যমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর “জিরো টলারেন্স” নীতির দাবি এবং রাজ্য পুলিশের দক্ষতার প্রশংসাকে কংগ্রেস “বাস্তবতা বিবর্জিত” বলে কটাক্ষ করেছে। কংগ্রেসের দাবি, ২০১৮ সালের পর রাজ্যে আইনশৃঙ্খলার উন্নতির যে পরিসংখ্যান ও বক্তব্য তুলে ধরা হচ্ছে, তা বাস্তব ঘটনার সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক।

বিবৃতিতে সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনার উল্লেখ করে বলা হয়, মাত্র তিন দিনের মধ্যেই রাজধানী আগরতলার ভুবনবনে এক সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধাকে নিজ ঘরে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে। এর রেশ কাটতে না কাটতেই মিলনচক্র এলাকায় ৭৪ বছরের এক বৃদ্ধাকে নিজ বাসগৃহে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে।

এছাড়াও অভিযোগ করা হয়, মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ সদর দপ্তরের মাত্র ১০০ গজের মধ্যে পুলিশের অনুমতি ও প্রহরার মধ্যেই রাজ্যের স্বীকৃত বিরোধী দল সিপিআই(এম)-এর এক সভায় শাসক দলের সমর্থকদের হামলায় পাঁচজনের বেশি কর্মী গুরুতর আহত হন। হামলার সময় ব্যাপক মোটরবাইক ভাঙচুর, মাইক ভাঙচুর এবং রাস্তার পাশে ছোট দোকানিদের মালামাল লুট করা হলেও পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে বলে অভিযোগ।

এই সমস্ত ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন তুলেছে—এই ঘটনাগুলিকেও কি “জনরোষের প্রতিফলন” বলে এড়িয়ে যাওয়া হবে? কংগ্রেসের দাবি, যদি এগুলিকেই আইনশৃঙ্খলা ও গণতন্ত্রের উন্নতি হিসেবে ধরা হয়, তবে রাজ্যবাসীকে জানানো হোক ভবিষ্যতে আরও কতটা পাশবিক ও নারকীয় পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে।

বিবৃতির শেষে প্রদেশ কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আহ্বান জানিয়েছে, দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে “রাজ্যবাসীর মুখ্যমন্ত্রী” হিসেবে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হোক। একই সঙ্গে তারা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, “গণতন্ত্র মানুষের প্রাণবায়ুর মতো” এবং মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষার জন্য প্রয়োজনে জনগণ রুখে দাঁড়ায়—যার বহু নজির ইতিহাসে রয়েছে।

Leave a Reply