তথাকথিত ‘নিউ ইন্ডিয়া’র কৃষি-শিল্প নীতিতে সংকটে চা শিল্প, আশঙ্কায় প্রদেশ কংগ্রেস

আগরতলা, ২৪ ডিসেম্বর : মোদি সরকারের ‘নিউ ইন্ডিয়া’র নামে তথাকথিত কৃষি ও শিল্প বিপ্লবের প্রভাব দেশের কৃষিজীবী ও শ্রমজীবী মানুষের অর্থনৈতিক জীবনে গভীর সংকট তৈরি করেছে। এর ফলে যুবসমাজের ভবিষ্যৎও ক্রমশ অনিশ্চিত হয়ে উঠছে। এই চিত্র আমাদের রাজ্যেও ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। আজ সাংবাদিক সম্মেলনে এমনটাই অভিযোগ তুলেছেন প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র প্রবীর চক্রবর্তী।

এদিন তিনি বলেন, রাজ্যের সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রীর একাধিক প্রচারধর্মী কর্মসূচি ও বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাস্তব পরিস্থিতি আড়াল করার চেষ্টা করা হলেও, প্রকৃত সত্য আর গোপন থাকছে না। বিশেষ করে রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন চা শিল্পকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সময়ের সরকারি উদ্যোগ ও প্রচার নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।

‘রান ফর টি’-সহ নানা মনোমুগ্ধকর শ্লোগানভিত্তিক কর্মসূচি প্রতিবছর জাঁকজমক করে আয়োজন করা হলেও বাস্তবে বৃহৎ ও পুরনো চা বাগানগুলিতে নতুন নতুন সমস্যা দেখা দিচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, সরকারি মদতপুষ্ট শাসকদলীয় প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ বেড়েছে। পাশাপাশি, রাজ্যের কৃষিমন্ত্রীর উদ্যোগে চা বাগানে আপ গাছ ও আম গাছ রোপণের মাধ্যমে তথাকথিত কৃষি বিকাশের যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, তা চা শিল্পের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে বলে মত প্রকাশ করেন তিনি।

তাঁর কথায়, দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যের চা বাগানগুলিতে চা গাছের আচ্ছাদনের জন্য ইউক্যালিপটাস, কলাগাছ, কড়ই-সহ এমন সব গাছ ব্যবহার করা হতো যা স্থানীয় মাটির সঙ্গে উপযোগী এবং আর্থিক দিক থেকেও লাভজনক ছিল। কিন্তু তার পরিবর্তে আম গাছ কতটা উপযুক্ত, সে বিষয়ে কোনও বিজ্ঞানসম্মত সমীক্ষা হয়েছে কি না, তা চা শ্রমিক, ছোট-বড় চা উৎপাদক বা সাধারণ রাজ্যবাসীর কাছে স্পষ্ট নয়।

প্রদেশ কংগ্রেসের তরফে কৃষি ও উদ্যানপালন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাম জাতীয় গাছ মাটির উপরিভাগের জল দ্রুত শুষে নেয়, ফলে মাটির উর্বরতা কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এর প্রভাব চা উৎপাদনের উপর মারাত্মক হতে পারে বলেই অনুমান করা হচ্ছে।

অভিযোগ, ২০১৮ সালের পর থেকে চা উন্নয়ন পর্ষদ চা শিল্পের উন্নয়ন বা শ্রমিক কল্যাণে কার্যত নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। বরং কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে কীভাবে সুবিধা দেওয়া যায়, সেদিকেই তাদের বেশি মনোযোগ। এর ফলে সরকার ও শাসক জোটের একাংশের পাশাপাশি কিছু সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তির ব্যক্তিগত আর্থিক সমৃদ্ধি ঘটছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

উল্লেখযোগ্যভাবে, ১৯৬০ সালের ভূমি সংস্কার আইন অনুযায়ী চা বাগানে চা কারখানা ও শ্রমিকদের আবাসন ছাড়া অন্য কোনও নির্মাণ অবৈধ। অথচ বর্তমানে অভিযোগ উঠেছে, সরকার ও মাফিয়ার যোগসাজশে চা বাগানে পাম, নারকেল, সুপারি এমনকি কোথাও কোথাও গাঁজা চাষও হচ্ছে। অতীতে চা শিল্পকে অলাভজনক দেখিয়ে রাবার বাগান তৈরির প্রবণতা দেখা দিলে রাজ্য সরকার আইন করে তা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিল।

রাজনৈতিক মহলের মতে, বিজেপি নেতৃত্বাধীন ‘ট্রিপল ইঞ্জিন’ সরকারের এই কার্যক্রম কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। মোদি জমানায় দেশের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ দেশি-বিদেশি কর্পোরেটদের হাতে তুলে দেওয়ার যে নীতি নেওয়া হয়েছে, তারই অঙ্গ হিসেবে প্রাকৃতিক সম্পদ ও কৃষিক্ষেত্রকে কর্পোরেটদের জন্য উন্মুক্ত করা হচ্ছে। ২০১৮ সালের পর থেকে সেই নীতি রাজ্যেও কার্যকর হয়েছে বলে অভিযোগ।

এরই মধ্যে মোদি-ঘনিষ্ঠ কর্পোরেট গোষ্ঠীর অন্যতম পতঞ্জলী ট্রাস্টের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। অভিযোগ, রামদেবের মালিকানাধীন পতঞ্জলীর ওষুধ ও খাদ্যদ্রব্যের মান নিয়ে একাধিক হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে প্রশ্ন উঠেছে এবং বিভিন্ন মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, একসময় দেশের সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনীতে খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহকারী ছিল পতঞ্জলী ট্রাস্ট, কিন্তু আদালতের পর্যবেক্ষণের পর সেই সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে।

Leave a Reply