রাজ-উদ্ভবের একত্রিত হওয়া: রাজনীতি ও রাজনৈতিক বাস্তবতার পালাবদল

মুম্বাই,২৪ ডিসেম্বর : ২০১৩ সালে উদ্ভব ঠাকরে তাঁর সংবাদপত্র ‘সামনা’ মাধ্যমে রাজ ঠাকরেকে পুনর্মিলনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কিন্তু রাজ ঠাকরে সেসময় সেই প্রস্তাব পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এখন, ১২ বছর পর, রাজ ও উদ্ভব একত্রিত হয়েছেন। মহারাষ্ট্রের রাজনীতির বিশ্লেষকরা এখন তাদের সম্পর্কের নতুন অধ্যায় নিয়ে আগ্রহী। বর্তমানে, উভয়েই রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে আছেন, যা তাদের পুরনো বিরোধ ভুলে একত্রিত হওয়ার দিকে ঠেলে দিয়েছে।

১৯৮৮ সালে রাজ ঠাকরে যখন শিব সেনার কার্যক্রমে সক্রিয় হতে শুরু করেন, তখন রাজনৈতিক মহলে আলোচনা চলছিল যে, তিনি হয়তো বাল ঠাকরের পরবর্তী রাজনৈতিক উত্তরসূরি হতে চলেছেন। রাজ ঠাকরের অনেক গুণ বাল ঠাকরের মতো ছিল—তার উচ্চকণ্ঠ বক্তৃতার কৌশল, তীব্র রাগ এবং কার্টুন আঁকার প্রতি ভালোবাসা। তবে, উদ্ভব ঠাকরে, যিনি বাল ঠাকরের তৃতীয় পুত্র, প্রথমে তার পিতার র্যালির ছবি তোলার কাজে আগ্রহী ছিলেন। পরে তিনি ধীরে ধীরে রাজনীতির প্রতি আগ্রহী হন এবং রাজনৈতিক কার্যক্রমে যুক্ত হন।

বাল ঠাকরে উদ্ভবকে শিব সেনার নেতৃত্বের জন্য প্রস্তুত করতে শুরু করেন, কিন্তু রাজের তুলনায় উদ্ভব ছিলেন স্বভাবগতভাবে একেবারে ভিন্ন—তিনি ছিলেন সংযত ও সংকোচী, যা তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছিল। তবে এক পর্যায়ে, রাজের ওপর রাজনৈতিক চাপ বাড়তে থাকে এবং তার অবস্থান শিব সেনার মধ্যে দুর্বল হয়ে পড়ে।

১৯৯৬ সালে রাজ ঠাকরে যখন একটি বিতর্কের মধ্যে জড়িয়ে পড়েন—যেখানে তাকে এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে এক ব্যক্তির ওপর মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়—তখন রাজের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বিপাকে পড়ে। যদিও পরে তিনি এই অভিযোগ থেকে মুক্তি পান, তবে এই ঘটনায় রাজের রাজনৈতিক শক্তি ক্ষুণ্ন হয় এবং উদ্ভব শিব সেনার কার্যক্রমে আরও প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন।

এ সময় রাজ অনুভব করতে থাকেন যে, উদ্ভব শিব সেনার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিচ্ছেন এবং তার নিজস্ব রাজনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ২০০৬ সালে, উদ্ভবের সিদ্ধান্তের কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে রাজ শিব সেনা ছাড়েন এবং নিজস্ব দল—মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা (এমএনএস)—গঠন করেন। এমএনএস শিব সেনাকে প্রচণ্ড প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রদর্শন করে, বিশেষ করে ২০০৯ সালের বিধানসভা নির্বাচনে।

এমএনএস শিব সেনাকে সমর্থনকারীদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়, তবে রাজ ঠাকরে ও উদ্ভবের মধ্যে শীতলতা বজায় থাকে। ২০০৯ সালে, রাজ ঠাকরে তার খোলামেলা প্রত্যাখ্যান প্রকাশ করেছিলেন, যা একে অপরকে আরও দূরে নিয়ে যায়। তবে, কয়েক বছর পর ২০২৩ সালে, রাজ এক পডকাস্টে বলেন যে, তিনি পুরনো বিরোধগুলো ভুলে যেতে প্রস্তুত। উদ্ভবও রাজের সঙ্গে পুনর্মিলন করার ইঙ্গিত দেন, তবে তিনি শর্ত দেন যে রাজ বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক রাখবেন না।

বর্তমান পরিস্থিতি দুজনকেই পুরনো বিরোধ ভুলে একত্রিত হওয়ার দিকে ঠেলে দিয়েছে। উদ্ভব ঠাকরের নেতৃত্বাধীন শিব সেনা বর্তমানে কঠিন সময় পার করছে, বিশেষ করে একনাথ শিন্ডে বিদ্রোহের পর। অন্যদিকে, রাজ ঠাকরের এমএনএস গত বিধানসভা নির্বাচনে বিশেষ কিছু ফলাফল অর্জন করতে পারেনি। তাদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব সুরক্ষিত রাখতে একত্রিত হওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই।

জুলাই মাসে তারা প্রথমবারের মতো প্রায় দুই দশক পর এক মঞ্চে এসেছিলেন। পরবর্তীতে, এক গণসমাবেশে তারা ঘোষণা করেন যে, আগামী ১৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নগরপালিকা নির্বাচনগুলিতে একত্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন এবং ভবিষ্যতে একে অপরের সাথে স্থায়ী সম্পর্ক বজায় রাখবেন।

এভাবে, দুই কাকা-মামীর পুরনো বিরোধ একত্রীকরণের নতুন অধ্যায়ে পরিণত হয়েছে, যা রাজনৈতিক সমীকরণে নতুন দিগন্তের ইঙ্গিত দেয়।

Leave a Reply