আরবালি পর্বতমালার সুরক্ষা ও ব্যবস্থাপনা: সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়

নয়া দিল্লি, ২৩ ডিসেম্বর : ভারতের সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি একটি ঐতিহাসিক রায় প্রদান করেছে, যা আরবালি পর্বতমালার সংজ্ঞা নির্ধারণ এবং তার সুরক্ষা ব্যবস্থাপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এ রায়টি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, খনি উত্তোলন এবং পরিবেশগত সুরক্ষার ক্ষেত্রে একটি সুনির্দিষ্ট ও একক ব্যবস্থা প্রবর্তন করার লক্ষ্যে গৃহীত হয়েছে।

আধুনিক এবং ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন আরবালি পর্বতমালাটি ভারতের বিভিন্ন রাজ্য—দিল্লি, হরিয়ানা, রাজস্থান ও গুজরাট—জুড়ে বিস্তৃত। এই পর্বতমালা পরিবেশগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি মরুভূমির বিস্তার রোধে সহায়ক এবং জীববৈচিত্র্য, জল সম্পদ ও জলবায়ু স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে।

আরবালি পর্বতমালা সুরক্ষিত রাখতে সুপ্রিম কোর্ট নতুন দুটি সংজ্ঞা প্রতিষ্ঠা করেছে—একটি আরবালি পাহাড়ের জন্য এবং অন্যটি পুরো আরবালি রেঞ্জের জন্য। একটি আরবালি পাহাড়ের সংজ্ঞা হিসেবে যেকোনো ভূমিরূপ, যেটি তার চারপাশের স্থানীয় স্তরের থেকে ১০০ মিটার বা তার বেশি উঁচু, তা আরবালি পাহাড় হিসেবে গণ্য হবে। একইভাবে, দুটি বা তার অধিক পাহাড় যদি ১০০ মিটার উচ্চতার শর্ত পূর্ণ করে এবং তাদের মধ্যে ৫০০ মিটার বা কম দূরত্ব থাকে, তবে তা আরবালি রেঞ্জ হিসেবে গণ্য হবে।

এই সংজ্ঞাগুলির মাধ্যমে আরবালি রেঞ্জের সুরক্ষা এবং তার বিভিন্ন অঞ্চলের সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হবে।

২০২৫ সালের ২০ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়কে একটি সাসটেইনেবল মাইনিং ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা তৈরি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যা আরবালি পর্বতমালার সম্পূর্ণ অঞ্চলে কার্যকর হবে। এই পরিকল্পনার মাধ্যমে খনি উত্তোলনের জন্য স্থায়ী এবং পরিবেশগতভাবে সুরক্ষিত অঞ্চলের চিহ্নিতকরণ করা হবে এবং সেগুলোর যথাযথ ব্যবস্থাপনা করা হবে।

রায়ে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, আরবালি অঞ্চলের ৩৭টি জেলার জন্য পৃথক পরিবেশগত মূল্যায়ন করা হবে, যেখানে অনুমোদিত খনি উত্তোলন এলাকাগুলি চিহ্নিত করা হবে এবং সংরক্ষণযোগ্য এলাকাগুলি পুনরুদ্ধারের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে।

বর্তমানে, আরবালি অঞ্চলের মোট ১৪৪,০০০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় খনি উত্তোলনের ক্ষেত্রে অনেক বিধিনিষেধ রয়েছে। বিশেষত, দিল্লির কোনো অংশেই খনি উত্তোলন অনুমোদিত নয়। রাজস্থান, হরিয়ানা এবং গুজরাটের কিছু অঞ্চলও খনি উত্তোলনের জন্য নিষিদ্ধ।

প্রাথমিক পরিসংখ্যান অনুসারে, রাজস্থানের রাজসমন্দ এবং উদয়পুর জেলার প্রায় ৯৭ থেকে ৯৯ শতাংশ এলাকা খনি উত্তোলনের জন্য নিষিদ্ধ থাকবে। হরিয়ানার মহেন্দ্রগড় জেলায় প্রায় ৭৫ শতাংশ এবং গুজরাটের সাবারকন্ঠ জেলায় প্রায় ৮৯ শতাংশ এলাকায় খনি উত্তোলন নিষিদ্ধ থাকবে।

এই রায়ের মাধ্যমে একটি সুষম পরিবেশগত উন্নয়ন এবং খনি ব্যবস্থাপনার দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যা দীর্ঘমেয়াদী পরিবেশ সুরক্ষা এবং প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারে ভারসাম্য বজায় রাখবে।

এই পরিকল্পনার মাধ্যমে খনি উত্তোলনকারী সংস্থাগুলির জন্য পর্যাপ্ত পরিবেশগত মূল্যায়ন এবং পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া প্রয়োজনীয় হবে। পাশাপাশি, আরবালি অঞ্চলের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান, বনাঞ্চল এবং সংরক্ষিত এলাকা খনির জন্য নির্ধারিত না থাকায় এসব স্থান সুরক্ষিত থাকবে।

সুপ্রিম কোর্টের রায় একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা ভারতের পরিবেশগত নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং আরবালি পর্বতমালার সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।

Leave a Reply