শেখ হাসিনা নিহত ছাত্রনেতা শরীফ উসমান হাদির মৃত্যুতে উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে বিরোধপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরির অভিযোগ করেছেন

ঢাকা, ২১ ডিসেম্বর : বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ছাত্রনেতা শরীফ উসমান হাদির মৃত্যুর প্রতি প্রতিক্রিয়া জানিয়ে অভিযোগ করেছেন যে, মুহাম্মদ ইউনুস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার “আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়া” এবং “অপরাধমূলক সংস্কৃতি” তৈরি করেছে, যা দেশের অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করছে এবং ভারতসহ প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটাচ্ছে।

একটি ই-মেইল সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেন, “এই দুঃখজনক হত্যাকাণ্ডটি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি এবং ইউনুসের সরকারের অধীনে নিরাপত্তাহীনতার প্রতিফলন। সহিংসতা এখন স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে, অথচ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একে অস্বীকার করছে অথবা তা প্রতিরোধে অক্ষম। এসব ঘটনার ফলে বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতা তৈরি হচ্ছে, পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভারত এই বিশৃঙ্খলা, সংখ্যালঘুদের উপর নিপীড়ন এবং আমাদের যেসব অর্জন ছিল তা ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেখছে। যখন আপনি আপনার দেশের ভিতরেই মৌলিক আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারেন না, তখন আন্তর্জাতিক মঞ্চে আপনার বিশ্বাসযোগ্যতা ভেঙে পড়ে। এটি ইউনুসের বাংলাদেশ বাস্তবতা,” বলেন হাসিনা।

এ মন্তব্যের পেছনে ছিল ২০২৪ সালের “জুলাই আন্দোলন”-এ সক্রিয় ছাত্রনেতা শরীফ উসমান হাদির হত্যা। হাদি ১২ ডিসেম্বর ঢাকা শহরের বিজয়নগর এলাকায় একটি রিকশায় চলার সময় অজ্ঞাতনামা হামলাকারীদের দ্বারা গুলি করা হয়। তার মাথায় গুলি লাগে, এবং তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। এরপর, উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়, কিন্তু সেখানে ১৮ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, হাদির হত্যাকাণ্ড শুধু আইনশৃঙ্খলা ভাঙার উদাহরণ নয়, বরং এটি একটি সাংস্কৃতিক সংকটের প্রতিফলন, যা গত এক বছরে দেশজুড়ে বেড়েছে। তিনি বিশেষভাবে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতনের কথা উল্লেখ করেন এবং বলেন, “মিথ্যা ধর্মীয় অভিযোগে দীপু চন্দ্র দাস নামে এক হিন্দু যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এই ধরনের ঘটনা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উপর চাপ সৃষ্টি করছে, বিশেষ করে ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে।”

শেখ হাসিনা বলেছিলেন, বর্তমান সরকারের নেতৃত্বে দেশ একটি বড় সংকটে পড়েছে, যা ভারত ও অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতারা ভারত বিরোধী বক্তব্য দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থানকে দুর্বল করছে,” মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, “ইউনুস সরকার উগ্রপন্থীদের হাতে দেশের নিয়ন্ত্রণ তুলে দিয়েছে, যারা উগ্র ইসলামিক শক্তিকে সমর্থন করে এবং প্রভাবশালী সরকারি পদে তাদের অবস্থান তৈরি করেছে।” হাসিনা এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে একটি সেক্যুলার রাষ্ট্র হিসেবে রাখার প্রয়োজনীয়তার প্রতি জোর দেন এবং সরকারের একতরফা সিদ্ধান্তগুলির সমালোচনা করেন।

এছাড়া, হাসিনা পাকিস্তান সম্পর্কিত সরকারের নতুন পররাষ্ট্রনীতি নিয়েও তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের ঐতিহ্যগত বন্ধু দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করে দ্রুত পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, যা জনগণের সমর্থন ছাড়া করা হচ্ছে।”

তিনি সাফ জানিয়ে দেন যে, “ইউনুসের সরকার বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির জন্য কোনও গণতান্ত্রিক ম্যান্ডেটের অধিকারী নয় এবং তাদের অস্থায়ী ক্ষমতার ভিত্তিতে দেশের দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থ বিপদগ্রস্ত হতে পারে।”

এভাবে, শেখ হাসিনা বাংলাদেশে আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং দেশের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষায় নিজের সরকারের প্রতিষ্ঠা করার পক্ষে আবারও জোর দেন।

Leave a Reply